Sunita Williams is finally returning to Earth: অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান! পৃথিবীর বুকে ফিরতে চলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস ও তাঁর সহযোগী বুচ উইলমোর। নাসার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১২ মার্চ নাসার ক্রিউ ১০ মিশন মহাকাশে রওনা দেবে, যার মাধ্যমেই সুনীতা উইলিয়ামস ও তাঁর সঙ্গী পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। মহাকাশে কাটানো দীর্ঘ সময়ের পর, এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন এই দুই মহাকাশচারী। মহাকাশে তাঁর অষ্টমবার স্পেসওয়াক করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন সুনীতা, যা তাঁকে ইতিহাসের পাতায় আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার আগে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, “পৃথিবীতে ফিরে হাঁটতে ভুলে গেছি!”— এই মন্তব্যে তাঁর দীর্ঘ মহাকাশবাসের অভিজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট
নাসার পরিকল্পনা অনুযায়ী, বোয়িং স্টারলাইনার ক্যাপসুলে চড়ে পৃথিবীর দিকে যাত্রা করবেন সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর। স্পেস স্টেশন থেকে পৃথিবীতে ফেরার এই প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও স্পর্শকাতর। মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে তীব্র ঘর্ষণ সৃষ্টি হবে, ফলে ক্যাপসুলের বাইরের অংশে প্রায় ১৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সৃষ্টি হবে। এরপর প্যারাসুট খুলে আস্তে আস্তে ক্যাপসুলকে পৃথিবীর বুকে নামানো হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যন্ত জটিল।সুনীতা উইলিয়ামস এক কিংবদন্তি মহাকাশচারী। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান, যিনি নাসার হয়ে বহুবার মহাকাশ সফরে গেছেন এবং অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন। তাঁর বাবা দীপক পণ্ড্য গুজরাটের বাসিন্দা ছিলেন, আর তাঁর মা বোনি পণ্ড্য ছিলেন ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত। ছোট থেকেই বিজ্ঞান ও মহাকাশের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল প্রবল। নাসার পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথম মহাকাশে যান ২০০৬ সালে। এরপর একাধিকবার তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছেন এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশ নিয়েছেন।
সুনীতা উইলিয়ামস একাধিক রেকর্ডের অধিকারী। এর আগে তিনি একটানা ১৯৫ দিন মহাকাশে কাটিয়ে মহাকাশে সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো নারীদের তালিকায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছিলেন। এবার, মহাকাশে অষ্টমবারের মতো স্পেসওয়াক সম্পন্ন করে নতুন এক রেকর্ড গড়লেন তিনি। তাঁর স্পেসওয়াকের মোট সময় ৫০ ঘণ্টা ৪০ মিনিট, যা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ স্পেসওয়াকের তালিকায় রয়েছে।পৃথিবীতে ফেরার আগেই তিনি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে এক বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মহাকাশে থাকার অভিজ্ঞতা অবিশ্বাস্য! তবে এতদিন শূন্য অভিকর্ষের মধ্যে থেকে আমি মনে করছি, পৃথিবীতে ফিরে হাঁটতে ভুলে গেছি!” তাঁর এই রসিকতা শুধু মজার নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবেও সত্য। কারণ মহাকাশচারীরা দীর্ঘদিন ওজনহীন অবস্থায় থাকলে তাঁদের পেশি দুর্বল হয়ে যায়, হাঁটার ক্ষমতাও কিছুদিনের জন্য কমে যেতে পারে। তাই পৃথিবীতে ফিরে তিনি বেশ কিছুদিন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবেন, যাতে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।\
সুনীতা উইলিয়ামসের এই মহাকাশ সফর ভারত ও গোটা বিশ্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন নারী, যিনি বারবার মহাকাশ জয় করেছেন, তা ভারতবাসীর জন্য গর্বের বিষয়। অনেক তরুণ-তরুণী তাঁর পথ অনুসরণ করতে চাইছে এবং মহাকাশ গবেষণার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। তাঁর এই ফিরে আসা শুধু একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি ভারতের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের জন্যও এক অনুপ্রেরণা।সুনীতা উইলিয়ামস বারবার বলেছেন যে তিনি নতুন প্রজন্মকে মহাকাশ গবেষণার দিকে আকৃষ্ট করতে চান। তিনি বলেন, “আমি চাই, আরও বেশি ভারতীয় তরুণ-তরুণী মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আসুক। মহাকাশ অন্বেষণ একমাত্র তখনই এগিয়ে যাবে, যখন তরুণ প্রজন্ম এতে আগ্রহী হবে।”যদিও এবার তিনি পৃথিবীতে ফিরছেন, কিন্তু ভবিষ্যতে নতুন কোনো মিশনে তাঁকে দেখা যেতে পারে। নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থাগুলি মঙ্গল গ্রহ ও চাঁদে বসবাসের পরিকল্পনা করছে, যেখানে সুনীতা উইলিয়ামসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে।