Monday, June 23, 2025
Google search engine
Homeরাজনীতিঅন্যানো রাজনীতিভারত পাক উত্তেজনার মাঝে ষড়যন্ত্রের গন্ধ

ভারত পাক উত্তেজনার মাঝে ষড়যন্ত্রের গন্ধ

Smell of conspiracy amidst India-Pak tensions: ২২শে এপ্রিল, কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ফের চরম উত্তেজনার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। এই হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন করে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে তুরস্কের অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ‘টিসিজি বুয়ুকডা’-র আগমন। পাকিস্তানের নৌবাহিনী দাবি করেছে, এটি শুধুমাত্র সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদার করার উদ্দেশ্যে হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর পিছনে রয়েছে গভীর কৌশলগত পরিকল্পনা ও এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা, যা শুধু ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে। প্রসঙ্গত, তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সাবমেরিন আধুনিকীকরণ প্রকল্প, ড্রোন প্রযুক্তি আদানপ্রদান এবং যৌথ নৌমহড়া। তবে পহেলগাঁও হামলার ঠিক পরে পাকিস্তানের বুকে তুরস্কের এই আগমন নিছক ‘মৈত্রী সফর’ বলেই মেনে নিতে নারাজ আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল। ভারতের প্রাক্তন কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক গিরীশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন,

“এই মুহূর্তে তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ পাকিস্তানে উপস্থিত থাকা একটি স্পষ্ট বার্তা—ভারত যদি আগাম হামলা চালায়, তাহলে পাকিস্তান একা নয়।” তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু তুরস্ক নয়, চীনের সক্রিয় সহযোগিতাও এর পেছনে রয়েছে, কারণ চীন ইতিমধ্যে পাকিস্তানে তার পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে, যা জেএফ-১৭ ফাইটার জেটের মাধ্যমে ভারতের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।” তথ্য অনুযায়ী, এই পিএল-১৫ মিসাইল হল অত্যাধুনিক বিয়ন্ড-ভিজ্যুয়াল-রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারতের বায়ুসেনার জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ। এইসব অস্ত্র ও যৌথ মহড়ার পিছনে রয়েছে এক সুপরিকল্পিত কৌশল, যাতে ভারতের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোকে চাপে রাখা যায়। করাচি বন্দরে ‘টিসিজি বুয়ুকডা’ নামার পরপরই পাকিস্তান নৌবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা তুরস্কের সঙ্গে আমাদের সামরিক বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করতে চাই, এবং এই সফর তারই অংশ।” যদিও এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে সেভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না, কারণ ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এখন তুরস্ক, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যকার ত্রিপাক্ষিক মেলবন্ধন নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা মহল এখন একজোট হয়ে বার্তা দিচ্ছে—তারা চায় না ভারত আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিক, বরং প্রতিবেশী মিত্রদের সামনে দাঁড় করিয়ে তারা যেন এক কূটনৈতিক ঢাল গড়ে তুলছে।

TCG Burgazada F 513 scaled

অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মহলও এ নিয়ে কড়া নজর রাখছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সত্যজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, “পাকিস্তান জানে সরাসরি যুদ্ধে ভারতের সাথে তারা টিকবে না। তাই তারা এখন কূটনৈতিকভাবে ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে যুদ্ধের ময়দান তৈরি করছে, যেখানে তুরস্ক ও চীন তাদের ছায়াসঙ্গী।” তিনি আরও বলেন, “তুরস্কের আগ্রহ শুধু পাকিস্তানে বন্ধুত্ব নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধির কৌশলও এর পেছনে রয়েছে।” স্থানীয় স্তরেও এই উত্তেজনার ছায়া পড়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সেনা টহল ও নজরদারি। সীমান্তবাসীদের মধ্যেও উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে, কারণ অতীতে যেসব সময়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় পাকিস্তান সাহস পেয়েছে, তখনই সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বেড়েছে। পুঞ্চ জেলার এক গ্রামপ্রধান আব্দুল হামীদ বলছেন, “আমরা সাধারণ মানুষ, কিন্তু যুদ্ধ হলে প্রথম শিকার আমরাই হই। এবার যদি তুরস্কও পাশে থাকে পাকিস্তানের, তাহলে ভবিষ্যত আরও অনিশ্চিত।” অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো তুরস্কের যুদ্ধজাহাজ বিষয়ক আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি,

তবে কূটনৈতিক সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে এই ঘটনাটি তুলে ধরা হতে পারে। প্রসঙ্গত, তুরস্ক অতীতে ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু, বিশেষ করে কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়িপ এরদোগান ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর একজোটে ভারতকে চাপে রাখার পক্ষে বরাবরই সরব থেকেছেন। এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের এমন এক কৌশলগত পদক্ষেপ ভারতের পক্ষ থেকে উপেক্ষা করার মতো নয়। পাশাপাশি, এই মুহূর্তে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত উত্তেজনাও আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, ফলে একাধিক ফ্রন্টে ভারতের জন্য কৌশলগত চাপ তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনার ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্র দুটোতেই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, কারণ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এখন প্রতিটি পদক্ষেপ অনেক দূর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কাশ্মীর সীমান্তে এখন টহল এবং নজরদারি দ্বিগুণ করা হয়েছে, এবং মিসাইল প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। ভারতীয় নৌবাহিনীও এই মুহূর্তে আরব সাগরে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। এই পরিস্থিতি শুধু দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা নয়, বরং এক নতুন আঞ্চলিক জোট রাজনীতির জন্ম দিচ্ছে। ভারত যেখানে QUAD-এর মতো গোষ্ঠীর মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ কৌশল নিচ্ছে, সেখানে পাকিস্তান-তুরস্ক-চীন জোট যেন প্রতিরোধের ব্যূহ তৈরি করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সামনের দিনগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে নতুন করে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments