Locker broken into and stolen at Hero Center in Raniganj : রানীগঞ্জের রানিসায়ের মোড়ে প্রদীপ হিরো শোরুমে সোমবার রাতের পর রাত দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় গোটা এলাকায় নেমে এসেছে চরম উত্তেজনা আর আতঙ্কের ছায়া। একটা নির্জন রাত্রি, যখন শহর নিস্তব্ধ, ঠিক তখনই এক দল দুষ্কৃতী পরিকল্পিতভাবে সাটারের তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে ওই নামী বাইক সার্ভিস সেন্টারে। ভিতরে ঢুকে তাঁরা একে একে লকার ভেঙে নগদ টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয় এবং কোনোভাবে কোনোরকম শব্দ না করে পালিয়ে যায় এমনটাই অভিযোগ হিরো শোরুমের মালিক শুভম সাউয়ের। তিনি জানান, ‘‘সোমবার রাতে দোকান বন্ধ করার পর আমি বাড়ি চলে যাই। মঙ্গলবার সকালে কর্মচারীরা এসে দেখে সাটার ভাঙা, দরজা খোলা, সঙ্গে ভেতরের লকারটা ভাঙা অবস্থায়। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে খবর দেয়।’’ ঘটনাস্থলে দ্রুত আসে স্থানীয় থানা পুলিশ, ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তদন্ত শুরু হয়। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে, যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো চোর চিহ্নিত করা যায়নি।
জানা যাচ্ছে, এই চুরির ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার টাকার নগদ অর্থ এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ লকার নিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তবে শুধু নগদ টাকা নয়, লকারের ভিতরে থাকা কিছু গোপন কাগজপত্র এবং গ্রাহকদের গাড়ির নথিও গায়েব হয়েছে বলে খবর। ফলে সমস্যায় পড়তে পারেন অনেক গ্রাহকও। শোরুমের মেকানিক সুরজ হাঁসদা বলেন, ‘‘ভোরে এসে দেখি পুরো দোকান তছনছ। আমাদের অনেক গাড়ির সার্ভিস ডকুমেন্ট, এমনকি কিছু RC ও ছিল ভিতরে, সেগুলোও নেই। খুব চিন্তায় আছি আমরা।’’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে রানিগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য মনোজ আগরওয়াল জানান, ‘‘এই এলাকায় এত নিরাপত্তার পরেও এমন একটা ঘটনা সত্যিই চিন্তার। আমাদের সব ব্যবসায়ীকেই এখন রাত জেগে দোকান পাহারা দিতে হচ্ছে। পুলিশের টহল বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি আমরা।’’
এলাকাবাসীদের মতে, প্রায় এক মাস ধরেই রানিগঞ্জ বাজার চত্বরে অচেনা কিছু লোকজন ঘোরাফেরা করছিল, এবং সিসিটিভির মাধ্যমে তাদের মধ্যে ২ জনকে ইতিমধ্যেই সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা গেছে। পুলিশ এখন এই দিকেই নজর দিচ্ছে। যদিও রানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পেয়েছি এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই অভিযুক্তদের শনাক্ত করে ধরা হবে।’’
এই চুরির ঘটনার পরেই প্রশ্ন উঠছে, একদিকে যেমন নামী কোম্পানির শোরুমে এত নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও এমন চুরির ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে সাধারণ ছোট ব্যবসায়ীরা কতটা অসুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছেন, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। ঘটনাটি যদি একটি ছোট দোকানে ঘটত, তাহলে হয়তো কোনো সিসিটিভিও থাকত না, বা পুলিশের তৎপরতা এত দ্রুত হতো না। রানিগঞ্জের বাইক বাজার বলেই পরিচিত এই অঞ্চল, ফলে এখানে প্রচুর নগদ লেনদেন হয়ে থাকে, যা দুষ্কৃতীদের অন্যতম টার্গেট বলেই ধারণা পুলিশের।
এদিকে এলাকাবাসীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চাপা আতঙ্ক। অনেকেই চাইছেন, শিগগিরই এই ধরনের অপরাধীদের ধরা হোক এবং বাজার এলাকায় রাতের বেলায় পুলিশের মোবাইল পেট্রোলিং বাড়ানো হোক। স্থানীয় কাউন্সিলর রত্না বর্মন জানান, ‘‘আমি ইতিমধ্যে থানার সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের তরফে এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশি টহল আরও জোরদার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’’
এই ঘটনার জেরে হিরো শোরুম কর্তৃপক্ষও দোকানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন অ্যালার্ম সিস্টেম, উন্নত সিসিটিভি ক্যামেরা এবং রাতে অতিরিক্ত প্রহরী রাখার বিষয়েও আলোচনা চলছে। শুভম সাউ বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে জন্য আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। গ্রাহকদের গাড়ির যেকোনো নথির ক্ষতি হলে আমরা সর্বতোভাবে সহযোগিতা করব।’’
এই চুরির ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দিল, শুধুমাত্র বড় বড় শহর নয়, ছোট শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলিও আজ দুষ্কৃতীদের নজরে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও কড়া করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। পুলিশি তদন্তে দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়ুক, এমনটাই আশা করছে রানিগঞ্জবাসী। তবে যতক্ষণ না তারা ধরা পড়ছে, ততক্ষণ এলাকায় উদ্বেগ, আতঙ্ক, আর গভীর অসন্তোষ বজায় থাকবে বলেই অনুমান করা যায়।