Thursday, May 15, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসভারত বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ বিজিবি সংঘাত

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ বিজিবি সংঘাত

FENCING IN INDIA BANGLADESH BORDER: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকদেবপুর এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ, কেন্দ্রীয় পূর্ত বিভাগের সহায়তায়, সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করতেই প্রতিবাদে সরব হয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। বিজিবি দাবি করে, যেখানে কাজ হচ্ছে, তা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়ে। তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসে স্থানীয় বাংলাদেশি বাসিন্দারা। এর জেরে শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি এবং উত্তেজনা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল আকার ধারণ করে যে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে বাধ্য হন কালিয়াচকের প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তাঁদের হস্তক্ষেপে কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও মঙ্গলবার তা আবার শুরু হয়।

bsf 1736005613

মঙ্গলবার সকালে দুই দেশের প্রশাসনের মধ্যে জিরো পয়েন্টে একটি বৈঠক হয়। ম্যাপ ও জমি জরিপের ভিত্তিতে স্পষ্ট করা হয়, যে জায়গায় কাজ চলছে, তা ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ে। এই ব্যাখ্যার পরে বাংলাদেশের প্রশাসন ও বিজিবি সম্মতি জানায়। বেড়া দেওয়ার কাজ পুনরায় শুরু হওয়ার পাশাপাশি বিএসএফ ওই এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছে। সতর্ক রয়েছে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশও। জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া জানান, “সীমান্তে সমস্যার সমাধান হয়েছে, এবং কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।”

এই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি আরও আলোচনায় এসেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ভিডিওটি শেয়ার করে বিজিবি এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁর দাবি, “জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস হবে না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত।”

এই ধরনের সংঘাত স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দেয়। সীমান্তের ভারতীয় গ্রামগুলির বাসিন্দারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা সীমান্তে থাকতে ভয় পাচ্ছি। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ হলে তার প্রভাব সরাসরি আমাদের ওপরে পড়ে।”

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ধরনের জটিলতা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ সীমানা। এই সীমানার অনেক অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই, যা চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সংঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সীমান্ত এলাকাগুলিতে চোরাচালান, মাদক পাচার এবং গবাদি পশু পাচারের মতো অপরাধ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে একাধিকবার সংঘর্ষে জড়াতে হয়েছে।

ভারত সরকার বহু বছর ধরে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ চালিয়ে আসছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা এবং অবৈধ কার্যকলাপ রোধ করা। তবে এই কাজ অনেক সময় প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। সীমানা নির্ধারণের অস্পষ্টতা এবং স্থানীয় ভূগোলের জটিলতার কারণে এই ধরনের সমস্যা আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের বিজিবি ও ভারতের বিএসএফ দুই দেশের শান্তি ও সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে একাধিক বৈঠক এবং যৌথ উদ্যোগ সত্ত্বেও, এই ধরনের সংঘাত প্রমাণ করে যে সীমান্ত সুরক্ষা এবং শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পরিস্থিতি নিয়ে এখনো কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি, তবে তাঁর প্রশাসন স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছে যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই ধরনের সংঘাত শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষদের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে না, বরং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও ফাটল সৃষ্টি করতে পারে। দুই দেশের সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এই সমস্যাগুলি সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি, স্থানীয় জনগণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে সীমান্তের গুরুত্ব এবং নিয়মকানুন সম্পর্কে তারা সচেতন থাকে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments