Monday, April 21, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসবিদেশউৎসবে রাশিয়ার হামলা নিয়ে তোপ জেলেনস্কির

উৎসবে রাশিয়ার হামলা নিয়ে তোপ জেলেনস্কির

Zelensky blasts Russia over festival attack:ইউক্রেনের ইস্টার উৎসবের ঠিক আগের রাত। চারিদিকে প্রার্থনা, শান্তির বার্তা আর ঈশ্বরের কাছে মঙ্গলকামনার আবহ। সাধারণ মানুষ চেয়েছিল একটু নিঃশ্বাস নেওয়া, প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো কিছুটা নির্ভার সময়। কিন্তু সেই শান্তির প্রার্থনা যেন আবারও রক্তাক্ত হল রুশ বোমার আঘাতে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছিলেন, মানবিক কারণে ইস্টারের দিন অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ইউক্রেনে সমস্ত সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। সেনাপ্রধান ভ্যালারি গেরাসিমভকে এই নির্দেশ দেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার ভোরে এক ভিডিও বার্তায় জানান, “রুশ বাহিনী কথার যুদ্ধবিরতি দেখানোর ভান করলেও, বাস্তবে তারা আমাদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। রাতভর ফ্রন্টলাইনে আক্রমণ চালিয়েছে, ক্ষতিসাধন করেছে, বহু বাড়িঘর ধ্বংস করেছে।” যুদ্ধের এমন সময়েও ধর্মীয় উৎসবকে পেছনে ফেলে রুশ হামলার এই খবর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের খারকিভ, দনেটস্ক ও ঝাপোরিজিয়া এলাকায় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “আমরা ভেবেছিলাম অন্তত এই পবিত্র দিনে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারব। কিন্তু রাত ২টার পরপর তিনটি বিস্ফোরণে আমাদের ঘুম ছুটে যায়। শিশু, বৃদ্ধ সবাই আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে।” ৭ বছর বয়সী ইউলিয়া, যার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক, বিস্ফোরণের শব্দে ভয় পেয়ে কেঁদে ওঠে।

তার মা জানালেন, “আমি ভাবতেই পারিনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রার্থনা করার মুহূর্তে আমরা আবার বাঙ্কারে আশ্রয় নেব।” শুধু রুশ হামলা নয়, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়েও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এখন উত্তেজনা চরমে। পুতিনের শর্ত ছিল, ইউক্রেনকে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, তবেই তিনি শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী হবেন। সূত্র বলছে, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে সেই দাবি মেনে নিতে পারেন, যাতে দ্রুত শান্তি চুক্তি কার্যকর হয়। কিন্তু জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা মাটি দেব, মাথা নয়।” তিনি আরও বলেন, “ক্রাইমিয়া আমাদের, থাকবে আমাদেরই। আমরা যুদ্ধবিরতির নামে ফাঁকা প্রতিশ্রতিতে ভুলবো না।” এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ যেমন আশাহত, তেমনি বিশ্বরাজনীতিতে নতুন করে দোটানা তৈরি হয়েছে। আমেরিকা ও ন্যাটো দেশগুলোর সমর্থন কতদিন থাকবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে পশ্চিমা দেশগুলোও অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে পড়তে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যদি শান্তি আলোচনায় জমি ছাড়তে রাজি না হয়, আর রাশিয়া যদি সেই দাবিতে অনড় থাকে, তবে এই সংঘর্ষের ময়দান আরও দীর্ঘ ও রক্তাক্ত হবে। ইউক্রেনের এক প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দ্রেই মেলনিক বলছেন, “পশ্চিমা দেশগুলো আমাদের পাশে আছে, তবে সেটা চিরকাল থাকবে না। যুদ্ধকে কূটনীতির পথে নিয়ে যাওয়াটাই হবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ।” তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ইউক্রেনের সাহস অটুট। রাস্তাঘাটে এখনো দেশের পতাকা উড়ছে, স্বেচ্ছাসেবকরা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে যুদ্ধে বিধ্বস্ত এলাকায়, চিকিৎসকরা কাজ করে চলেছেন সীমিত সরঞ্জামে। শিশুদের জন্য তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট ‘পিস ক্লাসরুম’, যাতে যুদ্ধের মধ্যেও শিক্ষার আলো জ্বলে থাকে। সাধারণ মানুষ বলছেন, “পুতিন আমাদের মনোবল ভাঙতে পারেননি। আমরা ইউক্রেনীয়, আমরা লড়তে জানি, বাঁচতে জানি।” এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলকে ভাবতে হবে, ধর্মীয় উৎসব, মানবিক আবেদন আর রাজনৈতিক শর্তের মাঝে কিভাবে একটি দেশ প্রতিদিন ক্ষয়ে যাচ্ছে, আর হাজার হাজার মানুষ জীবনের নিরাপত্তা ছাড়াই বসবাস করছে। যুদ্ধবিরতি যদি শুধুই একপাক্ষিক নাটক হয়, তাহলে মানবতা আর কূটনীতি—দুটোই পরাজিত হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments