Sunday, July 13, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যলাইফস্টাইলআপনার কালো জিহ্বা আপনার ওষুধের কারণ

আপনার কালো জিহ্বা আপনার ওষুধের কারণ

Your black tongue is the reason for your transplant : ভরা বর্ষাকাল, চারিদিকে গুমোট আবহাওয়া আর ভিজে মাটির গন্ধে শহর এখন বেশ চুপচাপ। কিন্তু শহরের হাসপাতাল আর ওষুধের দোকানে এক অদ্ভুত ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে – সর্দি, কাশি, জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, ভাইরাল ইনফেকশন যেন হানা দিয়েছে ঘরে ঘরে। “খবর বাংলা”র নিজস্ব অনুসন্ধানে উঠে এল এক অবাক করা সত্যি—বহু মানুষ এখন মুঠো মুঠো এন্টিবায়োটিক খাচ্ছেন ডাক্তারের পরামর্শে বা নিজের মতো করে। অসুস্থতা থেকে বাঁচতে গিয়ে ওষুধই যেন ডেকে আনছে নতুন বিপদ—জিভ কালো হয়ে যাওয়ার মতো বিরল এক রোগ, যার নাম ‘ব্ল্যাক হেয়ারি টাং সিনড্রোম’। ভাবছেন, এটা আবার কি? ঠিক সেদিন সকালেই সল্টলেকের এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মী, পার্থবাবু, উঠে দেখেন তাঁর জিভ যেন হঠাৎ করে কালি দিয়ে রাঙানো। পরিবারের লোক আঁতকে ওঠেন। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরীক্ষা করে ডাক্তাররা জানান, এটি কোনো ইনফেকশন বা মারাত্মক রোগ নয়, বরং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

পার্থবাবু বললেন, “আমি গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশির জন্য মেট্রোনিডাজল এবং আরও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছিলাম। তারপর হঠাৎ এক সকালে দেখি জিভ একদম কালো আর রুক্ষ হয়ে গেছে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” চিকিৎসক ডা. রাহুল সেন বললেন, “এই রোগটি বিরল হলেও খুব বিপজ্জনক কিছু নয়। যাঁরা অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খান, মুখে ঠিকমতো পরিষ্কার করেন না, মুখ শুকিয়ে থাকে বা ধূমপান করেন, তাঁদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। এই রোগে জিভের উপরকার মৃত কোষ ও ব্যাকটেরিয়া জমে একধরনের চুলের মতো আবরণ তৈরি হয়, যেটা দেখতে ভয়ংকর হলেও মূলত অস্থায়ী।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় হলুদ রঙের খাবার বা পানীয়, যেমন কাঁচা হলুদ, চা-কফি, বা কিছু রাসায়নিক রঙ ব্যবহার করা খাবারেও এই রঙের পার্থক্য চোখে পড়ে। তবে মূল কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অসংযত ব্যবহার। মুখে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা, দিনে ২-৩ বার ব্রাশ না করা বা জিভ পরিষ্কার না করাও এই সমস্যার অন্যতম কারণ।

এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ আতঙ্কে পড়ে যান, কারণ জিভের পরিবর্তন মানেই অনেকের মনে ক্যান্সারের আশঙ্কা। “আমাদের এখানে প্রতিদিনই অন্তত ২-৩ জন রোগী এমন উপসর্গ নিয়ে আসছেন,” জানালেন দক্ষিণ কলকাতার এক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অনন্যা দে। তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে মুখ ও জিভের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা আর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সংযম আনাই প্রধান প্রতিকার। প্রয়োজনে আমরা মুখ ধোয়ার কিছু ওষুধ দিই, আর রোগীকে আশ্বস্ত করি যে এটি স্থায়ী কিছু নয়।” এই ঘটনার পর শহরের অনেক ওষুধের দোকানেই দেখা যাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করার আগে এখন ক্রেতাদের জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তারা কীভাবে এবং কার পরামর্শে এই ওষুধ নিচ্ছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাল ফিভারে অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কোনো দরকার নেই, বরং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং শরীরের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এরফলে মুখে নানা রকম ছত্রাক জন্মাতে পারে যা জিভে গিয়ে ব্ল্যাক হেয়ারি টাং তৈরি করতে পারে। নিউটাউন এলাকার এক স্কুল শিক্ষিকা অরুন্ধতী দেবী জানালেন, “আমারও এই রকম হয়েছিল। আমি খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।

de8a7be6529169c94ae2ca7ba16101421718464448863397 original

পরে চিকিৎসকের পরামর্শে মুখ পরিষ্কার রাখা শুরু করি, সেই সঙ্গে ডেটল মাউথওয়াশ ব্যবহার করতাম। ১৫-২০ দিনের মধ্যেই জিভ আবার আগের মতো হয়ে যায়।” এই ঘটনার কারণে এখন অনেকেই নিজের মতো করে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করেছেন। মুখে দাঁতের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা বাড়ছে, এবং বহু স্কুলে এখন স্বাস্থ্য শিক্ষা ক্লাসে মুখ পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, বর্ষাকালে সংক্রমণ ছড়ায় বেশি, কিন্তু তা বলে হুটহাট করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাটাই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘কালো জিভ’ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। কেউ কেউ ছবি পোস্ট করে আতঙ্ক প্রকাশ করছেন, আবার অনেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ যদি মুখ পরিষ্কার রাখে, দিনে অন্তত ২ বার দাঁত ব্রাশ করে, জল বেশি খায়, ধূমপান এড়িয়ে চলে, আর অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে, তবে এই ধরনের সমস্যায় আর পড়তে হবে না। তবে এই ঘটনাটি আমাদের একটা বড় শিক্ষা দিল—আমরা যতটা না রোগে ভুগি, তার চেয়ে বেশি ভুগি ওষুধের ভুল ব্যবহার আর অবহেলায়।

তাই বর্ষাকালে যদি হঠাৎ করে আপনার জিভ কালো হয়ে যায়, ভয় পাবেন না। আগে চিকিৎসকের কাছে যান, মুখ পরিষ্কার রাখুন, অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে দু’বার ভাবুন, তাহলেই থাকবে সুস্থতা, থাকবে স্বস্তি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments