Woman arrested for posting video of herself wearing stolen saree on social media : জীবনের মঞ্চে কখন যে নাটকের দৃশ্য বদলে যায়, তা কেউ আগে থেকে বলতে পারে না। আর এই গল্প যেন ঠিক সিনেমার চিত্রনাট্য! মধ্যমগ্রামের থানা এলাকায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি চুরির ঘটনায় এমনই এক নাটকীয় মোড় এসেছে যা শুনে রীতিমতো চোখ কপালে উঠছে সবার। কারণ, চুরি যাওয়া শাড়ি পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করাই কাল হয়ে দাঁড়াল এক মহিলার জন্য। মধ্যমগ্রাম থানার তৎপর পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে সেখান থেকেই চোরকে চিহ্নিত করে ফেলল, গ্রেফতারও করা হয়েছে অভিযুক্ত মহিলাকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে তুমুল চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের অভিনব তদন্ত পদ্ধতি নিয়েও উঠেছে প্রশংসার ঝড়।
ঘটনার সূত্রপাত বেশ কয়েক মাস আগে। মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক চুরির ঘটনার অভিযোগ উঠতে থাকে। কখনো বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র উধাও, কখনো বা বাইক-স্কুটি চুরি। শুধু তাই নয়, সাইবার প্রতারণার ঘটনাও বাড়তে থাকে উদ্বেগজনক হারে। মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ এই সব ঘটনাকে খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করতে শুরু করে এবং ধাপে ধাপে একের পর এক কেসের কিনারা করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চার মাসে মোট ছয়টি চুরির ঘটনার সফলভাবে সমাধান করেছে তারা এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে ছিলেন ওই মহিলা, যিনি চুরি করা শাড়ি পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করেছিলেন।
ঘটনাটি নিয়ে আরও বিস্তার করে বলতে গেলে, জানা যাচ্ছে এক নির্দিষ্ট দিনে মধ্যমগ্রামের একটি বুটিক দোকান থেকে বেশ কিছু দামি শাড়ি চুরি যায়। দোকানের মালিক বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে থানায় জানান এবং দোকানে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজও জমা দেন। কিন্তু তদন্তে গিয়ে দেখা যায় চোরটি মুখ ঢেকে চুরি করেছিল, তাই তাকে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না। পুলিশের তরফে একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয় এবং তারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নজরদারি চালাতে শুরু করে।
ঠিক তখনই নজরে আসে এক মহিলার প্রোফাইল, যেখানে তিনি হঠাৎ করে দামি শাড়ি পরে একের পর এক ছবি পোস্ট করছেন। পুলিশের সন্দেহ হয় এবং প্রযুক্তির সাহায্যে ওই মহিলার অবস্থান ট্র্যাক করে গ্রেফতার করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে নেন যে ওই শাড়িগুলো তিনিই চুরি করেছিলেন। এই ঘটনায় থানা চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বারাসাত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতিক্ষ্যা ঝরখারিয়া বলেন, “এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয়, মানুষের আচরণও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হয়ে দাঁড়ায়। সোশ্যাল মিডিয়া এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, অপরাধ দমনে কার্যকর অস্ত্র।” তিনি আরও জানান, চুরি যাওয়া সমস্ত জিনিসপত্র — স্কুটি, বাইক, দামি জামাকাপড়, গয়না — সব উদ্ধার করে মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
চাঞ্চল্য ছড়ানো এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও খুব তীব্র। স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিমা দাস বলেন, “আমরা ভাবতাম শাড়ি পড়ে ছবি তোলা নিরীহ ব্যাপার। কিন্তু এই ঘটনার পর বোঝা গেল যে ছবি কীভাবে প্রমাণ হয়ে ওঠে। পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ।” অপর এক বাসিন্দা সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশ যে কেবল অস্ত্র নয়, সোশ্যাল মিডিয়াকেও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, সেটা দেখলাম। সত্যিই তারা অভিনব কাজ করেছে।”

এদিকে, সাইবার ক্রাইমের ঘটনায় যদিও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ, তবে তদন্ত চলছে পুরোদমে। জানা গেছে, লক্ষাধিক টাকা খোওয়া গিয়েছিল সেই মামলায়, তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার টাকা ফেরত পেয়েছেন পুলিশের তৎপরতায়। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, খুব শীঘ্রই সেই কেসেরও কিনারা করা সম্ভব হবে।
এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে সমাজতত্ত্ববিদ অনিমেষ মুখার্জি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মপ্রচারের এই প্রবণতা যখন অপরাধের সঙ্গে মিশে যায়, তখন সেটাই হয়ে ওঠে অপরাধীর দুর্বলতা। এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজে একটা বার্তা গেল যে অপরাধ করে কেউ নিরাপদ নয়। ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন সুবিধা দেয়, তেমনই ভুল করলে ধরা পড়াও নিশ্চিত।”
মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ এখন এলাকাজুড়ে আরও নজরদারি বাড়িয়েছে। থানার ওসি রঞ্জিত চৌধুরী জানান, “আমরা এখন নাগরিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। যেকোনো সন্দেহজনক কিছু নজরে এলে তা আমাদের জানাতে বলা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্যানিংও এখন আমাদের প্রতিদিনের কাজের অঙ্গ।”
এই ঘটনার পর পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস যেমন বেড়েছে, তেমনি অনেকেই সচেতন হয়েছেন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও। অনেকেই তাদের দোকান, বাড়িতে নতুন করে সিসিটিভি লাগাচ্ছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা সামাজিক বার্তাও ছড়িয়ে পড়েছে — অপরাধ করে গর্ব করা নয়, বরং সততার সঙ্গে জীবন যাপন করাই শ্রেয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মধ্যমগ্রামের এই ‘শাড়ি চোর কাণ্ড’ এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল হয়ে উঠেছে। মিম, রিল থেকে শুরু করে আলোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। তবে এই ভাইরাল হওয়া ঘটনাটা শুধুই বিনোদনের নয়, এর গভীরে লুকিয়ে রয়েছে সমাজের প্রতিফলন — যেখানে প্রযুক্তি যেমন অপরাধকে বাড়াচ্ছে, তেমনি প্রযুক্তি দিয়েই সেই অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করছে সচেতন পুলিশ প্রশাসন।