Will Vaibhav get a chance against the year 14 in the Asia Cup ? : ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে ছোটবেলা থেকেই প্রতিভার ঝলক দেখানো ক্রিকেটারদের গল্প নতুন নয়। সচিন টেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে শুভমন গিল—তাদের সবার উত্থানের শুরু হয়েছিল কিশোর বয়সেই। কিন্তু বিহারের ছোট্ট এক শহরের ছেলে বৈভব সূর্যবংশীর গল্প যেন একটু আলাদা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে দেশের জার্সি গায়ে এশিয়া কাপের মতো বড় মঞ্চে খেলার সুযোগ পাওয়া, শুধু তার নয়, গোটা বিহারের গর্বের বিষয়। একসময় যেখানে রাজ্য স্তরের ক্রিকেটই বিহারের কাছে সীমিত ছিল, আজ সেখানে এক কিশোর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের নাম লিখতে চলেছে—এ যেন ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
ভারতের রাইজ়িং এশিয়া কাপ দলের ঘোষণা এসেছে সম্প্রতি। অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জিতেশ শর্মা, আর তার নেতৃত্বে ঘোষিত হয়েছে ১৫ জনের একটি শক্তিশালী দল। সেই দলেই চমক হিসেবে উঠে এসেছে বৈভব সূর্যবংশীর নাম। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, বৈভবের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই তাকে এই সুযোগ এনে দিয়েছে।
কিছুদিন আগেই বিহারের রঞ্জি ট্রফি দলে জায়গা পেয়েছিল এই প্রতিভাবান তরুণ। তার আগেই ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ এবং ‘এ’ দলের হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে বৈভব। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুব একদিনের ম্যাচে ৫২ বলে শতরান—যা এখনও পর্যন্ত দ্রুততম শতরানের রেকর্ড হিসেবে রয়েছে তার নামে। আবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্রিসবেনে ৮৬ বলে ১১৩ রানের ইনিংস খেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সবাইকে।
এই ধারাবাহিক সাফল্যই তাকে ভারতের রাইজ়িং এশিয়া কাপের দলে সুযোগ এনে দিয়েছে। ১৪ বছর বয়সেই এমন বড় মঞ্চে নাম তোলা সত্যিই এক অনন্য অর্জন।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈভব সূর্যবংশীর খেলার মান ও ম্যাচে উপস্থিত বুদ্ধি তাকে বাকি প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে আলাদা করেছে। বোর্ডের এক সিনিয়র নির্বাচক বলেন, “বৈভবের বয়স যতই কম হোক না কেন, তার মানসিক দৃঢ়তা ও খেলার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি একজন পরিণত ক্রিকেটারের মতো। এই ছেলেটি ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হতে পারে।”
অন্যদিকে, দলের অধিনায়ক জিতেশ শর্মাও বৈভবকে দলে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। তার কথায়, “এই বয়সে এমন প্রতিভা খুব কম দেখা যায়। বৈভবের ব্যাটিং টেকনিক, শর্ট সিলেকশন এবং ম্যাচ রিডিং স্কিল অসাধারণ। আমরা সবাই ওর কাছ থেকে অনেক আশা রাখছি।”
বৈভবের সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা বিহার। তার জন্মভূমি থেকে শুরু করে স্কুল, কোচিং সেন্টার—সব জায়গায় এখন উচ্ছ্বাসের ঢেউ। তার বাবা-মা জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি বৈভবের আলাদা টান ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র্যাকটিস করত সে।
স্থানীয় কোচ রমেশ মিশ্রা বলেন, “বৈভব ছিল আমার সবচেয়ে পরিশ্রমী ছাত্র। যেভাবে সে নিজের খেলার প্রতি নিষ্ঠা দেখিয়েছে, আমি আগেই বুঝেছিলাম এই ছেলেটি একদিন বড় কিছু করবে।”
বিহারের সাধারণ মানুষও আজ গর্বিত। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে শুভেচ্ছা বার্তা—“বিহারের ছেলে দেশের গর্ব”, “১৪ বছরেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের বৈভব”—এমন মন্তব্যে ভরে গেছে টাইমলাইন।
ভারতীয় ক্রিকেটে বিহারের প্রতিনিধিত্ব দীর্ঘদিন ধরেই সীমিত ছিল। কিন্তু বৈভব সূর্যবংশীর অন্তর্ভুক্তি সেই সীমা ভাঙার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নির্বাচন শুধু প্রতিভার স্বীকৃতি নয়, বরং ভারতের জুনিয়র নির্বাচক কমিটির দূরদর্শিতার প্রমাণও বটে।
বৈভবের পারফরম্যান্সে পরিসংখ্যানও তার পক্ষে কথা বলছে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ৮ ম্যাচে ৪টি অর্ধশতক এবং ২টি শতরান, স্ট্রাইক রেট ১১৫-এর উপরে—একজন ওপেনারের জন্য এ এক স্বপ্নের রেকর্ড। এছাড়া তার ফিল্ডিং দক্ষতা ও মাঝে মাঝে স্পিন বোলিংও দলের জন্য বাড়তি সুবিধা।
আসন্ন রাইজ়িং এশিয়া কাপে ভারত রয়েছে গ্রুপ বি-তে। পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ওমানের সঙ্গে খেলবে ভারত। ১৪ নভেম্বর প্রথম ম্যাচ আমিরশাহির বিরুদ্ধে, ১৬ নভেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, আর ১৮ নভেম্বর ওমানের সঙ্গে। অর্থাৎ, বৈভবের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার সম্ভাবনাই সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই অন্য রকম উত্তেজনা। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু মাঠের খেলা নয়, কোটি মানুষের আবেগের প্রতিফলন। আর সেই ম্যাচে ১৪ বছরের বৈভব যদি দেশের হয়ে মাঠে নামে, তা হলে তা হয়ে উঠবে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈভব সূর্যবংশীর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন প্রজন্মের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। আগামী কয়েক বছরেই এই প্রজন্ম ভারতের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।

যদি বৈভব তার ফর্ম বজায় রাখতে পারে, তবে একদিন সিনিয়র জাতীয় দলের দরজাও তার জন্য খুলে যেতে পারে। এখন যা প্রয়োজন তা হলো—ধৈর্য, পরিশ্রম এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শেখার ইচ্ছে।
বৈভবের কোচও বলেছেন, “এই বয়সে এত বড় মঞ্চে খেলার চাপ সামলানো কঠিন। কিন্তু আমি জানি, বৈভবের মধ্যে সেই মানসিক দৃঢ়তা রয়েছে। যদি সে নিজের মনোযোগ ধরে রাখতে পারে, তবে সে আগামী দিনের বিরাট কোহলি হয়ে উঠতে পারে।”
১৪ বছর বয়স মানেই যেখানে অনেকের খেলা ও পড়াশোনার মধ্যে ভারসাম্য রাখার সময়, সেখানে বৈভব সূর্যবংশী নিজের জীবনের পথ বেছে নিয়েছে অনেক আগেই। কঠোর পরিশ্রম, অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর স্বপ্নকে বাস্তব করার সাহসই তাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।
বিহার থেকে উঠে এসে দেশের হয়ে এশিয়া কাপে খেলার সুযোগ পাওয়া শুধুই ব্যক্তিগত গৌরব নয়, বরং ভারতের প্রতিটি ছোট শহরের তরুণ ক্রিকেটারের কাছে এক বার্তা—স্বপ্ন দেখো, পরিশ্রম করো, একদিন সেই স্বপ্ন বাস্তব হবেই।
এই মুহূর্তে গোটা দেশ তাকিয়ে আছে বৈভব সূর্যবংশীর দিকে। ১৪ নভেম্বর যখন সে দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামবে, তখন শুধু একটি কিশোর নয়, এক নতুন আশার প্রতীক হয়ে উঠবে সে।



