‘WHERE IS MY BUS’ app now available alongside trains: কলকাতা সহ গোটা বাংলার নিত্যযাত্রীদের জন্য আসছে এক সুবর্ণ সুযোগ। ট্রেনের পরে এবার বাসযাত্রাও হবে প্রযুক্তিনির্ভর, সঠিক সময় জানার দুশ্চিন্তা কাটাতে রাজ্য সরকার আনছে ‘WHERE IS MY BUS’ নামের স্মার্টফোন অ্যাপ। শনিবার রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এই অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কলকাতায় এক সরকারি অনুষ্ঠানে। প্রযুক্তি নির্ভর এবং যাত্রী-বান্ধব পরিষেবা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবহণ দপ্তর ও তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে এই অ্যাপ। কলকাতায় গণপরিবহনে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, কখন বাস আসবে তা নিয়ে ধন্দে থাকা—এইসব সমস্যার আধুনিক সমাধান হিসেবেই এই অ্যাপ চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী স্বয়ং।
অ্যাপটির মাধ্যমে যাত্রীরা রিয়েল-টাইমে জানতে পারবেন, বাস ঠিক কোথায় আছে, তাদের নির্ধারিত রুটে আসতে কতক্ষণ সময় লাগবে, ভাড়া কত, এমনকি অ্যাপ থেকেই টিকিট কেটে নেওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে এই অ্যাপ চালু হচ্ছে ১৬টি জনপ্রিয় রুটের ৬০টি সরকারি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে। আগামী ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত এসি বাসে এই পরিষেবা চালু করা হবে। ভবিষ্যতে সমস্ত বেসরকারি বাসকেও এর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা যা যা সুবিধা পাবেন তা এক নজরে:
১. বাসের সঠিক অবস্থান রিয়েল টাইমে দেখা যাবে।
২. ব্যবহারকারী জানতে পারবেন, ঠিক কত মিনিটে বাসটি তাঁদের স্টপেজে আসবে।
৩. নির্দিষ্ট রুটের সব স্টপেজ ও ভাড়া তালিকা দেখা যাবে।
৪. অ্যাপ থেকেই ডিজিটাল টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকবে, ক্যাশহীন লেনদেন আরও সহজ হবে।
৫. বাস কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা যাবে, ফলে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি, রুট বদল বা ওভারস্পিডিং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এই অ্যাপ গুগল প্লে স্টোরে ‘Where Is My Bus’ নামে ইতিমধ্যেই উপলব্ধ, এবং অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এটি ডাউনলোড করে নিতে পারছেন। iPhone ব্যবহারকারীদের জন্য খুব শীঘ্রই iOS অ্যাপ স্টোরেও এই অ্যাপ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতারা।
বাস চালক ও কন্ডাক্টরদের কাছেও এই অ্যাপের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকারি বাসগুলিতেই এই প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে। যাত্রীদের রিয়েল-টাইমে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতিটি বাসে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও টিকিট মেশিনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অ্যাপ শহরের ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্টেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, কন্ট্রোল রুম থেকে প্রতি বাসের গতি, অবস্থান এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যদি কোনও বাস নির্ধারিত সময়ের তুলনায় দ্রুত গতিতে চলে, কিংবা স্টপেজ ছাড়িয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গেই কন্ট্রোল রুম থেকে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। একইসঙ্গে, টিকিট ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করায় টিকিট চুরি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, কাগজের অপচয়—এইসব দুর্নীতিও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তবে কিছু প্রশ্নও উঠছে। যেমন, কলকাতার রাস্তায় প্রতিনিয়তই জ্যামের সমস্যা, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি, বাস রুট বদল ইত্যাদি—এইসব অবস্থায় অ্যাপটি ঠিক কতটা কার্যকরী হবে? তথ্য আদানপ্রদানের গতি বা প্রযুক্তিগত সমস্যা কতটা প্রভাব ফেলবে পরিষেবায়?রাজ্যের পরিকল্পনা, ধাপে ধাপে এই অ্যাপের ব্যবহার পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য বড় শহরেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে—যেমন, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি, হাওড়া, আসানসোল ইত্যাদি। একইসঙ্গে, আগামীতে এই অ্যাপে মেট্রো, ট্রাম বা রুট ম্যাপও যুক্ত করা হতে পারে। অর্থাৎ, অ্যাপটি হতে চলেছে এক সম্পূর্ণ ‘মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট’ প্ল্যাটফর্ম।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রভাব:
১. যাত্রী সংখ্যা বাড়বে সরকারি বাসে।
২. বেসরকারি বাসও ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থায় সামিল হলে, পরিষেবা হবে আরও সমন্বিত।
৩. যাত্রীদের ভরসা বাড়বে গণপরিবহনের উপর, যার প্রভাব পড়বে ব্যক্তিগত যানবাহন কমে যাওয়ায়।
৪. দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও ট্র্যাফিক কমানোর ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
এই নতুন যুগের ‘বাস দেখার অ্যাপ’ শুধু ডিজিটাল প্রযুক্তির নয়, এটা সাধারণ নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা দূর করার এক বাস্তব সমাধান। এখন অপেক্ষা, এই পরিষেবা বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়, আর সাধারণ মানুষ কতটা সহজে তা ব্যবহার করতে পারে।