What to do to avoid heatstroke in extreme heat: প্রচণ্ড রোদ, গরম হাওয়া আর জলশূন্যতায় নাভিশ্বাস উঠছে রাজ্যজুড়ে সাধারণ মানুষের। মে মাসের শুরুতেই পারদ ছুঁয়েছে ৪৩ ডিগ্রির কোঠা, বায়ুবিদরা জানাচ্ছেন, এই তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এর জেরে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ, রাস্তায় থাকা পরিবহন কর্মী, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই কয়েকজনের হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবর মিলেছে, বহু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি। এমতাবস্থায় আমাদের প্রত্যেকেরই জরুরি জানা, কীভাবে এই হিটস্ট্রোকের হাত থেকে নিজেকে ও পরিবারের অন্যদের রক্ষা করা যায়।
হিটস্ট্রোক কি? চিকিৎসকদের মতে, শরীরের তাপমাত্রা যখন ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয়ে যায় এবং সঙ্গে শরীর ঘামতে বন্ধ করে দেয়, মাথা ঝিমঝিম করে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায় কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় — তখন সেটা হিটস্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে। ডাঃ অমিতাভ সরকার, কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানাচ্ছেন, “সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বৃদ্ধ, শিশু এবং যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি কিংবা হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “প্রচণ্ড রোদে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা কাজ করলে শরীর দ্রুত জলশূন্য হয়ে পড়ে, তখনই বিপদ। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুও হতে পারে।”
তবে একটু সচেতন হলে এই ভয়াবহ বিপদ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী:
১. দিনে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার জল পান করুন। প্রয়োজনে স্যালাইন, ডাবের জল, লেবুর শরবত অথবা ওআরএস খেতে পারেন।
২. সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে চেষ্টা করুন রোদে বাইরে না বেরোতে। খুব দরকার হলে ছাতা, ক্যাপ, সানগ্লাস এবং হালকা রঙের সুতির জামা পরে বেরোন।
৩. হালকা খাওয়াদাওয়া করুন — পাতলা ভাত, ডাল, সিদ্ধ শাকসবজি। বাইরের ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার, কাটা ফল এবং রাস্তার জুস সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন।
৪. দিনে ২-৩ বার ঠান্ডা জলে স্নান করুন এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যদি সম্ভব হয়, ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে নিতে পারেন।
৫. ঘরে পর্দা টানিয়ে রাখুন যাতে সরাসরি রোদের তাপ ঢুকতে না পারে। দরকার হলে ছাদে জলের ছিটে দিন বা কুলার, ফ্যান ব্যবহার করুন।
৬. শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ নজরে রাখুন। তাদের শরীর দুর্বল থাকে, তাই সহজেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে বারবার জল খাওয়ান এবং তাদের গরম পোশাক পরাবেন না।
৭. যাঁরা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাঁদের উচিত গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা।
৮. রাস্তায় হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়লে বা মাথা ঘোরার অভিযোগ করলে দ্রুত তাকে ছায়ায় এনে ঠান্ডা জল পান করাতে হবে, তার মাথা ও ঘাড়ে জল ঢালুন এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তাপপ্রবাহ ও হিটস্ট্রোকের ফলে কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সহ একাধিক জেলায় ইতিমধ্যে বহু স্কুল-কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রশাসক মৃণাল কান্তি দত্ত জানিয়েছেন, “ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সবার আগে। পরিস্থিতি উন্নত না হওয়া পর্যন্ত মিডডে মিল বিতরণ ছাড়াই অনলাইন ক্লাস চালু থাকবে।”
বেকার রোডের দিনমজুর রাজীব মালিক জানান, “রোদে মাথা গরম হয়ে যায়, একসময় তো চোখের সামনে অন্ধকার দেখেছিলাম। পরে একটা ওষুধের দোকানে গিয়ে স্যালাইন খেতে হয়।” তাঁর মত আরও অনেক খেটে খাওয়া মানুষের জন্য প্রশাসনের উচিত পথে পথেঘাটে জলছত্র, ফ্রি জলবন্টনের ব্যবস্থা করা।
সব মিলিয়ে, এবারের গরম শুধু অস্বস্তির নয়, প্রাণঘাতীও। তাই সকলকে অনুরোধ, সচেতন থাকুন, নিয়ম মেনে চলুন, হিটস্ট্রোককে হালকা ভাবে নেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার একটু সাবধানতাই আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।