What is the internal state of maintenance ? এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি যে ভাবে আকাশে ওড়ার ঠিক ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই এবং মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় আচমকাই ভেঙে পড়ে গেল, তাতে গোটা দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন উঠেছে, আর সেই আলোড়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটা বড় প্রশ্ন—এই দুর্ঘটনার জন্য কি শুধুই যান্ত্রিক ত্রুটি দায়ী, না কি পিছনে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের চূড়ান্ত অভাব? এই ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বড় কোনও প্রাণহানির খবর না মিললেও, আতঙ্কের যে ছাপ যাত্রীদের মনে, তা সহজে মুছবে না। প্যারিস থেকে দিল্লি হয়ে বিমানটি আহমেদাবাদ আসে, এবং মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে ফের লন্ডনের পথে পাড়ি দেয়। প্রশ্ন উঠছে, মাত্র এত কম সময়ের মধ্যে ১২ বছরের পুরনো এই বিমানটিকে কি আদৌ পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল? তদন্তকারী সংস্থাগুলি বলছে, দুর্ঘটনার পরপরই বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেখানকার তথ্য বিশ্লেষণ করেই ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে এখনো পর্যন্ত যা তথ্য এসেছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, উড্ডয়নের ঠিক পরপরই বিমানের দুটি ইঞ্জিন হঠাৎ করেই বিকল হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরণ বা আগুনের কোনও চিহ্ন না মেলায় পাখির ধাক্কার তত্ত্ব প্রায় খারিজ করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দুটি ইঞ্জিন একসঙ্গে বিকল হওয়া কি নিছক কাকতালীয়, না কি এর পেছনে আছে আরও গভীর কোনও গাফিলতি?
এখানে উঠে আসছে রক্ষণাবেক্ষণের প্রসঙ্গ। এমনিতেই বোয়িং ড্রিমলাইনার সিরিজ চালু হওয়ার পর থেকে সারা বিশ্বে মোট ৩০৪ বার যান্ত্রিক ত্রুটির নজির পাওয়া গেছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি—মাত্র ৩০ সেকেন্ডে—এই রকম বিপর্যয় বিরল। এক যাত্রী, যিনি দিল্লি থেকে আহমেদাবাদ আসার সময় একই বিমানে ছিলেন, তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, বিমানে একাধিক ছোটখাটো সমস্যা তিনি নিজেই লক্ষ্য করেন, যার মধ্যে ছিল অস্বাভাবিক শব্দ, আলো ঝাপসা হয়ে যাওয়া, এবং আসনে কম্পন। তার এই বয়ান রক্ষণাবেক্ষণের অভাবকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। প্রশ্ন উঠছে, আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে কি ঠিকভাবে জ্বালানি ভরানো হয়েছিল? কারণ, জ্বালানির অপ্রতুলতাও ইঞ্জিন বিকলের অন্যতম কারণ হতে পারে। পাশাপাশি আরও গুরুতর প্রশ্ন হলো, এই বিমানে কি সত্যি ‘ফিট টু ফ্লাই’ সার্টিফিকেট ছিল? গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বা রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের কাজ যথাযথ হয়েছিল কি না, তাও এখন তদন্তের আওতায়।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, একটি পুরোনো বিমান যদি বারংবার ফ্লাইট শিডিউলে থাকে এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হয়, তবে এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়। ডায়নামিক এভিয়েশন কনসালট্যান্ট অনিরুদ্ধ গুহ বলেন, “বিমান হচ্ছে এমন এক যন্ত্র, যা প্রতিটি উড্ডয়নের আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা দরকার। কোনও সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সারানো, এমনকি ফ্লাইট বাতিল করা পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে এত কম সময়ের মধ্যে বিমানকে ফের উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত করা হলো।”
এদিকে সরকারের তরফ থেকে এখনো স্পষ্ট কোনও প্রতিক্রিয়া না এলেও, DGCA (Directorate General of Civil Aviation) তদন্ত শুরু করেছে। এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, “ব্ল্যাক বক্সের তথ্য, যাত্রী ও পাইলটের বিবৃতি এবং রক্ষণাবেক্ষণ লগ মিলিয়ে আমরা একটি সমন্বিত রিপোর্ট তৈরি করছি। যদি প্রমাণিত হয় যে রক্ষণাবেক্ষণের কোনও গাফিলতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যদিও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি অন্তর্ঘাত বা নাশকতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না, তবে আপাতত যান্ত্রিক ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতির দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর এই জায়গায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে—যদি প্রমাণিত হয় যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এই বিমান সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষিত হয়নি, তাহলে দায় এড়ানো কঠিন।

স্থানীয়ভাবে আহমেদাবাদ এয়ারপোর্টের নিয়ন্ত্রক কমিটির এক সদস্য জানান, “আমরা বিমানে জ্বালানি দেওয়ার সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়ম মেনেই করেছি। কিন্তু বিমানের ফিটনেস যাচাই ও মেইনটেনেন্স সার্টিফিকেট আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না। সেটি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষই দেখে।” এই বক্তব্যে আরও একবার প্রমাণ মিলছে, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণের ফাঁকই এই দুর্ঘটনার মূলে রয়েছে।
এই ঘটনার পর যাত্রীদের মনে একটাই প্রশ্ন—আমরা কি নিরাপদ? এয়ার ইন্ডিয়া বা যেকোনো এয়ারলাইন্সের দায়িত্ব শুধু টিকিট কাটা নয়, যাত্রীদের জীবনরক্ষাও। কিন্তু যদি একটি ফ্লাইটের মধ্যেই একাধিক রুটে সমস্যা হয়, তাহলে সেটিকে ফের আকাশে ওড়ানো কি যুক্তিসঙ্গত ছিল?
বিশেষ করে এমন একটি সময় যখন ভারতে বিমান যাত্রা ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাগালে আসছে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে আরও কড়াকড়ি রক্ষণাবেক্ষণ নীতি গ্রহণ না করলে, ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে তা বলাই বাহুল্য।
সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, এই দুর্ঘটনা শুধুমাত্র একবারের প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং একটি দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল, যার দায়ভার কেবল একজন গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের নয়, বরং গোটা প্রশাসনিক কাঠামোর।