Weaving industry fair in Durgapur after 9 years:দীর্ঘ ৯ বছর পর দুর্গাপুরের পলাশডিহার দুর্গাপুর হাটে ফিরে এল সেই প্রতীক্ষিত তাঁত শিল্প মেলা, যা এক সময় এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম বড় অংশ ছিল। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই হস্ত তাঁত প্রদর্শনী বা তাঁত মেলার উদ্বোধন হয় মঙ্গলবার বিকেলে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারপার্সেন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কবি দত্তসহ আরও অনেক বিশিষ্ট অতিথি। এই মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হস্তশিল্পীরা তাঁদের সুনিপুণ হাতে তৈরি তাঁতের সম্ভার নিয়ে হাজির হয়েছেন, যা মেলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মেলায় মোট ৬০টি স্টল বসানো হয়েছে যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে সুতির শাড়ি, তসর, মুগা, জামদানি, বালুচরী, ধনেখালি, কাঞ্জিভরম, সহ নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের পণ্য। এই মেলা ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় হাঁটলে যেন এক রঙিন স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করা যায়—প্রত্যেকটি তাঁতের পণ্য যেন একেকটি গল্প বলে, একেকটি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি বহন করে।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি দত্ত বলেন, “এই মেলা শুধুমাত্র একটি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্র নয়, বরং আমাদের দেশের ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির জীবন্ত উদাহরণ।
তবে এই মেলাকে আরও জনপ্রিয় করতে প্রচারের উপর জোর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” সত্যিই, প্রচারের অভাবের কারণে অনেকেই এই মেলার বিষয়ে অবগত নন, যা মেলার ভিড়ে প্রভাব ফেলছে। মেলায় ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। অনেকে বলছেন, “এত সুন্দর তাঁতের জিনিসপত্র একসাথে দেখা যায় না। দামও অনেকটা সস্তা, আবার গুণগত মানেও দুর্দান্ত।”দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল বলেন, “এই ধরনের মেলা আমাদের হস্তশিল্পীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের তৈরি পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি সঠিক ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়।” মেলার আরেক বড় আকর্ষণ হল লাইভ ডেমোনস্ট্রেশন। এখানে তাঁত শিল্পীরা সরাসরি প্রদর্শন করছেন কীভাবে একটি সাধারণ সুতো ধীরে ধীরে রঙিন, নকশা খচিত শাড়ি বা কাপড়ে রূপান্তরিত হয়। এটি শিশুদের ও তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করছে।
মেলার এক তাঁত শিল্পী, যিনি অসম থেকে এসেছেন, বললেন, “আমরা বছরের পর বছর ধরে এই শিল্পে জড়িত। কিন্তু এখনকার দিনে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। এই ধরনের মেলা আমাদের পণ্যের জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্ম।” এই মেলার মাধ্যমে হস্তশিল্পীদের সরাসরি ক্রেতাদের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, ফলে মধ্যবর্তী দালালদের প্রভাব কমে যাচ্ছে, যা শিল্পীদের আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক।অন্যদিকে, মেলাটি দুর্গাপুরের স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ছোট ছোট ব্যবসায়ী, খাবারের দোকান, পরিবহন ইত্যাদি খাতও মেলার মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারছে। বিশেষ করে স্থানীয় হোটেল, রেস্তোরাঁ ও পরিবহণ ব্যবসায়ীরা এই সময়ে ব্যবসার বৃদ্ধি লক্ষ্য করছেন।