Weather warning in the state due to the influence of cyclones and monsoon axes: বর্ষাকাল মানেই বাঙালির কাছে একদিকে স্বস্তি, অন্যদিকে অজানা আশঙ্কা। কখনো মন ভেজানো বৃষ্টি, তো কখনো সেই বৃষ্টিই হয়ে ওঠে দুর্ভোগের কারণ। ঠিক এমন এক আবহাওয়াজনিত সতর্কতার মুখে পড়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর বাংলাদেশ থেকে একটি ঘূর্ণাবর্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর সরে এসেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও মৌসুমী অক্ষরেখা—ত্রিফলার এই যুগলবন্দীতে রাজ্যে ঢুকছে বিপুল জলীয় বাষ্প। যার প্রভাব পড়তে চলেছে গোটা রাজ্যজুড়ে, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে।আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণাবর্ত ও অক্ষরেখার মিলিত প্রভাবে রাজ্যে ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে আর্দ্রতা। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ পৌঁছে গিয়েছে ৮৯ থেকে ১০০ শতাংশে। এর জেরে বুধবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দাদের জন্য জারি করা হয়েছে সতর্কতা। ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে এই জেলাগুলিতে, সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত।কলকাতায় বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শহরের তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করবে বলে জানানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের দিকেও দেখা দিচ্ছে অশনিসংকেত। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং এবং মালদহ জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সবথেকে বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে আগামী শনিবার থেকে সোমবারের পূর্বাভাস। ওই সময় উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার ফলে বাড়তে পারে নদীর জলস্তর। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় ধস নামার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যে আবহাওয়ার পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের জেলা প্রশাসনগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পার্বত্য এলাকাগুলিতে পর্যটকদের অতি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে মানুষের নিরাপদে স্থানান্তরের ব্যবস্থা রাখতে হবে।আবহাওয়া সংক্রান্ত এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ এবং মৌসুমী অক্ষরেখার সংমিশ্রণ। বর্ষার সময় এমন পরিস্থিতি নতুন নয়, কিন্তু জলীয় বাষ্পের উচ্চমাত্রা ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থার মেলবন্ধনে বৃষ্টির মাত্রা অনেক বেড়ে যেতে পারে। জলবন্দি পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও স্কুল-অফিসে বিঘ্ন—এই সবকিছুই প্রতিকূল আবহাওয়ার ফলস্বরূপ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে নদী, নালা, খাল ইত্যাদির জলস্তর বেড়ে যায়। এতে বন্যা বা ভূমিধসের আশঙ্কা তৈরি হয়।উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকাগুলি বর্ষাকালে বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত পাহাড়ের পাথুরে গঠনকে আলগা করে দেয়, যার ফলে ধস নামার সম্ভাবনা দেখা যায়। পর্যটকদের জন্য এ এক বড় বিপদ। একইসঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা, যোগাযোগ ও খাদ্যসরবরাহেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

পরবর্তী কয়েকদিন রাজ্যবাসীর জন্য অত্যন্ত সতর্ক থাকার সময়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, শনিবার থেকে সোমবার অবধি বৃষ্টি আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে হবে সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য। বিদ্যুৎ দফতর, পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতর ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া এড়াতে হবে, বাড়ির জানালা ও দরজা ঠিকঠাক বন্ধ রাখতে হবে, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেসব এলাকায় ধস বা বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে সময়মতো সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া জরুরি।রাজ্যের আবহাওয়া পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক হলেও সময়মতো সতর্কতা ও প্রশাসনিক তৎপরতা অনেক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও সহযোগিতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়ার অঙ্গুলি হেলনে আমাদের জীবনযাত্রার কতটা প্রভাব পড়ে তা আবারও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই আবহাওয়া সতর্কতা। এখন শুধু অপেক্ষা—সময়মতো প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলে এই দুর্যোগও পেরিয়ে যাবে রাজ্য।