Wednesday, July 16, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যআবহাওয়ামাইথন-পাঞ্চেত থেকে জল ছাড় ,নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্কতা

মাইথন-পাঞ্চেত থেকে জল ছাড় ,নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্কতা

Water released from Maithon-Panchet, alert in riverside areas : ডিভিসি বা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের তরফে বুধবার যে খবর সামনে এসেছে, তাতে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। গত কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গিয়েছে, যার ফলে বুধবার সকাল থেকেই দুটি জলাধার থেকে একত্রে প্রায় ৪৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে মাইথন জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে ১২,৫০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে ৩৫,৫০০ কিউসেক জল। স্বাভাবিকভাবেই এত পরিমাণ জল একসঙ্গে ছাড়া হলে দামোদর সহ আশেপাশের নদীগুলির জলস্তর হু-হু করে বেড়ে যাবে এবং তার প্রভাব পড়বে হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। বিশেষ করে বাঁকুড়ার রাণিবাঁধ, বিষ্ণুপুর, ওন্দা ও ইন্দাস ব্লকের বহু গ্রামবাসী ইতিমধ্যেই আতঙ্কিত। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়দের কাছে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকার বিভিন্ন ব্লক অফিসে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং নদীর ধারবর্তী অঞ্চলের মানুষদের বলা হয়েছে, তারা যেন সতর্ক থাকে এবং প্রয়োজনে দ্রুত সরে যেতে প্রস্তুত থাকে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক সৌম্যজিৎ রায় জানান, “আমরা পরিস্থিতি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছি। যেসব এলাকায় জল ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে সিভিল ডিফেন্স, বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও ব্লক প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।” এদিকে, পুরুলিয়ার মানবাজার ও ঝালদার কিছু নিচু এলাকাতেও ইতিমধ্যেই নদীর জল ধীরে ধীরে উপচে পড়তে শুরু করেছে। গ্রামের মানুষজন বলছেন, “প্রতিবার বর্ষায় এমন পরিস্থিতি হয়, কিন্তু এবারের মতো এত তাড়াতাড়ি জল বেড়ে যেতে আমরা অভ্যস্ত নই।” পঞ্চায়েত সদস্যা বাসন্তী দেবী জানান, “আমাদের এলাকায় ইতিমধ্যেই রাস্তায় জল জমে গেছে, বাড়ি থেকে বের হতে অসুবিধা হচ্ছে। যদি আর জল ছাড়া হয়, তাহলে ঘরে জল ঢুকে যাবে।” জানা গিয়েছে, দামোদর ভ্যালির উপত্যকায় অবস্থিত এই দুটি বড় জলাধার—মাইথন ও পাঞ্চেত—এখন কার্যত প্রায় পূর্ণ ক্ষমতায় জল ধরে রেখেছে। মাইথনের বর্তমান জলস্তর ৪৭৫ ফুটের আশেপাশে, যেখানে বিপদসীমা ৪৭৮ ফুটের কাছাকাছি। আর পাঞ্চেতের ক্ষেত্রেও জলস্তর ৪৩০ ফুটের উপরে পৌঁছে গিয়েছে। এমতাবস্থায়, আরও বৃষ্টি হলে জলাধারের উপর চাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিভিসির এক আধিকারিক বলেন, “এটা সম্পূর্ণ রুটিন অপারেশন, কিন্তু যেহেতু লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে, তাই এই জল ছাড়া কিছুটা সময়ের জন্য নদীগুলির জলস্তর বাড়িয়ে দিতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।” এর পাশাপাশি দাউদপুর, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, আরামবাগ, কাটোয়া, মেমারি, পানাগড় ও বর্ধমান শহর সংলগ্ন নিচু এলাকাগুলোতেও নজর রাখা হচ্ছে। দামোদর নদী বরাবর যে বাঁধগুলো রয়েছে, সেগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে নিয়মিত। কোথাও কোনো চিড় বা ভাঙন হলে যাতে দ্রুত মেরামতি করা যায়, তার জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

1200 675 24403223 thumbnail 16x9 dvc aspera

জেলার স্বাস্থ্য দপ্তর থেকেও সতর্কতা জারি করে বলা হয়েছে, যদি কোথাও জল ঢোকে তাহলে পানীয় জল ও স্যানিটেশনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল ও পঞ্চায়েত অফিসকে অস্থায়ী ত্রাণ শিবির হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে NDRF ও SDRF-র টিমকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে বন্যা পরিস্থিতি হলে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করা যায়। পাশাপাশি, নদীর পাশবর্তী রেললাইন, ছোট সেতু ও কাঁচা রাস্তা—সবগুলোতেই নজর রাখা হচ্ছে। হাওড়া ও হুগলির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাসিন্দারা বলছেন, “গত বছরও জল ছাড়ার পর আমাদের এলাকায় জল ঢুকে পড়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা এখনও ভুলিনি। এবার যেন এমন না হয়।” অন্যদিকে আবহাওয়া দফতরের তরফে বলা হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় রেডিও ও টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে আপডেট নেওয়ার পাশাপাশি, কেউ যেন গুজবে কান না দেন এবং প্রয়োজনে প্রশাসনের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ রাখেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, “আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কোথাও যদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এইরকম পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের উচিত নিজের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নদীর ধারে না যাওয়া এবং প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের নিরাপদ স্থানে রাখা জরুরি। এবারকার পরিস্থিতি আদৌ কতটা জটিল হবে তা আগামী কয়েক দিনের বৃষ্টি ও জলস্তরের ওপর নির্ভর করবে, তবে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তাহলে বড় বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments