Water between meals! How beneficial, how harmful?: খাবার আর জল—দুই-ই মানুষের বেঁচে থাকার মূল উপাদান। দিনের শুরু থেকে শেষ, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ বা ডিনার—সব খাবারের সঙ্গে জলের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। অনেকেই অভ্যেসে বা প্রয়োজনের তাগিদে খাবার খাওয়ার মাঝেই জল পান করেন। কারও মতে এতে হজম ভালো হয়, আবার কারও মতে এটি ভীষণ ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে নানা ধরণের মতামত ঘুরছে সমাজে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে—আসলে খাবার খাওয়ার ফাঁকে জল খাওয়া উপকারী নাকি ক্ষতিকর?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে এই অভ্যাসের একদিকে যেমন সুবিধে রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু অসুবিধেও। খাবারের সময় অল্প পরিমাণে জল খেলে তা পাকস্থলীর কাজকে অনেক সময় সহজ করে তোলে। জল খাবারকে নরম করতে সাহায্য করে এবং খাদ্য ভাঙার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। বিশেষত শুকনো বা শক্ত খাবার খাওয়ার সময় অল্প জল মুখে দিলে খাবার গিলতে সুবিধা হয়।এমনকি, ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর হতে পারে। খাওয়ার মাঝেই সামান্য জল খেলে অনেক সময় পেট ভরা অনুভূতি হয়, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত ঘটে তখনই, যখন কেউ খাবারের সময় অতিরিক্ত জল পান করেন। পাকস্থলীর হজমরস বা গ্যাস্ট্রিক জুস তখন পাতলা হয়ে যায়। এর ফলে খাবার হজম হতে সময় লাগে বেশি। অনেকের ক্ষেত্রে খাবারের পরপরই পেটে ভারী ভাব, অস্বস্তি বা ফোলাভাব দেখা দেয়।
এটি যদিও কোনও সরকারি নীতির বিষয় নয়, তবে স্বাস্থ্য দফতর এবং জনস্বাস্থ্য প্রচারে যুক্ত চিকিৎসকেরা বারবার এই প্রসঙ্গটি তুলেছেন। তাঁদের মতে, খাওয়ার সময় জল খাওয়ার বিষয়টিকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করার আগে সকলেরই সচেতন থাকা দরকার। তারা মানুষকে পরামর্শ দিচ্ছেন, শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ীই জল খাওয়া উচিত, অতি বা অভ্যাসবশত নয়।সাধারণ মানুষের মধ্যে মতামতের ভিন্নতা স্পষ্ট। অনেকেই বলেন, খাওয়ার সময় জল না খেলে গলায় খাবার আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অন্যদের মতে, খাওয়ার মাঝেই জল খাওয়ার কারণে তাঁদের পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি বাড়ে। কেউ কেউ আবার নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে জানান, অল্প জল খেলে তাঁরা হালকা অনুভব করেন এবং হজমের সমস্যা কমে।এভাবেই প্রতিদিনের জীবনের সহজ একটি অভ্যাসকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নানা মতপার্থক্য।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, খাবার খাওয়ার সময় অল্প পরিমাণ জল শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং এটি খাবার হজমে সাহায্য করে। তবে সমস্যার মূল কারণ অতিরিক্ত জল পান। পাকস্থলীর অ্যাসিড হজমে বড় ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত জল সেই অ্যাসিডকে পাতলা করে হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।শুধু তাই নয়, ঠান্ডা জল খাওয়াও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডা জল পাকস্থলীর স্বাভাবিক তাপমাত্রাকে বিঘ্নিত করে, ফলে হজম আরও ধীর হয়ে যায়। তাই খাবার সময় যদি জল খেতেই হয়, তবে হালকা গরম বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার জলই শ্রেয়।এ ছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—একসঙ্গে এক-দু’গ্লাস জল খাবার সময় খাওয়া উচিত নয়। এতে পেট ফুলে ওঠা, অস্বস্তি বা হজমে জটিলতা বাড়তে পারে। বরং খাবারের আগে কিংবা খাবার শেষে পর্যাপ্ত জল খাওয়াই শরীরের জন্য ভালো।
সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের দিকে ঝুঁকছে। ঠিক কোন সময়ে এবং কতটা জল খাওয়া উচিত—এই তথ্য যদি সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে অনেক সাধারণ হজমের সমস্যার সমাধান হতে পারে। আগামী দিনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এই বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা হবে এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য মানুষের কাছে আরও স্পষ্টভাবে পৌঁছে যাবে।জল জীবনের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু যেকোনও কিছুর মতোই এরও সময়, পরিমাণ এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলা জরুরি। খাবার সময় সামান্য জল খাওয়া ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত জল শরীরের জন্য সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তাই অভ্যাসের বশে নয়, প্রয়োজন অনুসারে জল পান করাই বুদ্ধিমানের কাজ। স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য সচেতন অভ্যাসই হতে পারে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।