Vitamin C: কোভিডের সময় আমরা বারবার শুনেছি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেই সময় চিকিৎসকেরা যেসব খাবার খেতে বলতেন, তার মধ্যে পাতিলেবু, আমলকি, কমলালেবু, মুসাম্বি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেন? কারণ এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। তবে শুধুই কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন সি? আরও নানা উপকার করে এই ভিটামিন। ত্বক থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক, হার্ট, চোখ, এমনকি ফুসফুসও ভাল রাখে নিয়মিত ভিটামিন সি খাওয়ার অভ্যাস। তাহলে আসুন সহজ ভাষায় গল্পের মতো বুঝে নিই, ঠিক কী কী উপকার পেতে পারেন এই ভিটামিন থেকে এবং কীভাবে প্রতিদিনের খাবারে সহজেই তা যোগ করা যায়।
ত্বকের ঔজ্জ্বল্য আর বলিরেখা দূর করতে ভিটামিন সি
যাঁরা কোমল, মসৃণ আর সুন্দর ত্বক চান, তাঁদের শুধু বাইরে থেকে রূপচর্চা করলেই হবে না, পাতে রাখতে হবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। কেন? কারণ ভিটামিন সি ত্বকে ‘কোলাজেন’ উৎপাদন বাড়ায়। কোলাজেন হচ্ছে ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখার একটি প্রোটিন। নিয়মিত ভিটামিন সি খেলে ত্বকের বলিরেখা কমে যায়, আর ত্বক হয় উজ্জ্বল ও তরতাজা।
মস্তিষ্ক আর মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে
আমাদের মস্তিষ্ক কিন্তু প্রতিদিন অনেক কাজ করে। মনের ভালো-মন্দ, স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা—এসব কিছুই মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন সি মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সাহায্য করে, যা আমাদের মন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই হতাশা, উদ্বেগের মতো সমস্যা কমাতেও ভিটামিন সি কার্যকর।
আয়রন শোষণে ভিটামিন সি-এর ভূমিকা
অনেকের মধ্যে আয়রনের অভাব থাকে, বিশেষ করে যাঁরা নিরামিষ খাবার খান বা যাঁদের অ্যানিমিয়া আছে। ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাই খাবারে আয়রন যুক্ত শাকসবজি বা অন্যান্য খাবার থাকলে, তার সঙ্গে লেবু বা অন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে উপকার পাওয়া যায় দ্বিগুণ।
চোখের জন্যও ভিটামিন সি অপরিহার্য
আজকাল অনেকেই চোখের সমস্যায় ভোগেন। চোখ শুকিয়ে যাওয়া, চশমার পাওয়ার বেড়ে যাওয়া, বা চোখের প্রদাহজনিত সমস্যাও খুব সাধারণ। নিয়মিত ভিটামিন সি খেলে চোখের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং দ্রুত ছানি পড়ার ঝুঁকিও কমে। তাই চোখ ভালো রাখতে খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি রাখাটা খুবই জরুরি।
হার্ট ভালো রাখে ভিটামিন সি
হার্ট আমাদের শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। ভিটামিন সি রক্তনালির দেওয়াল শক্ত করে এবং কোলাজেন সংশ্লেষে সাহায্য করে। ফলে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং হার্ট ভালো থাকে।
ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে
ছোটখাটো কেটে বা ছড়ে গেলে দ্রুত সেই ক্ষত সারাতে ভিটামিন সি অত্যন্ত কার্যকর। এই ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাই শরীরে ব্যথা, ফোলা বা কাটা জায়গায় দ্রুত আরোগ্যের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
যাঁরা ফুসফুসের সমস্যায় ভোগেন বা ধুলোবালি, ধূমপান ইত্যাদির কারণে ফুসফুস দুর্বল হয়ে গেছে, তাঁদের জন্য ভিটামিন সি খুবই উপকারী। কারণ এই ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা ফুসফুসের প্রদাহ এবং সংক্রমণ কমায়। ফলে শ্বাস নিতে সুবিধা হয় এবং ফুসফুস ভালো থাকে।
কোন কোন খাবারে বেশি থাকে ভিটামিন সি?
পাতিলেবু বা আমলকিতেই শুধু ভিটামিন সি থাকে না, আরও অনেক খাবারে থাকে। পেয়ারা, কমলালেবু, মুসাম্বি, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, এমনকি টাটকা সবুজ সবজিতেও প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিনের খাবারে এইসব ফল ও সবজি যোগ করলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি পায়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ডাঃ রমা সেন বলছেন, “ভিটামিন সি শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়ায় না, শরীরের প্রতিটি কোষকে সুস্থ রাখে। ত্বক থেকে ফুসফুস—সকল অঙ্গের জন্য এই ভিটামিন দরকার।” চিকিৎসকরাও পরামর্শ দেন, সর্দি-কাশি কমাতে বা ঠান্ডা লাগার সময় একটু বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার জন্য।
ভবিষ্যতে প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিডের মতো মহামারি আমাদের শিখিয়েছে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো খুব জরুরি। নিয়মিত ভিটামিন সি খেলে ভবিষ্যতে যে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হতে পারে। শুধু বড় রোগ নয়, ছোটখাটো সর্দি-কাশির মতো অসুখও অনেকটা এড়ানো সম্ভব হবে।
শেষ কথা
তাই আর দেরি নয়। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যোগ করুন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। একটা পেয়ারা, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস বা এক মুঠো স্ট্রবেরি খেলেই শরীর পাবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি। আর এর ফলে আপনি শুধু ত্বকের উজ্জ্বলতা পাবেন না, পাবেন রোগমুক্ত, শক্তিশালী শরীরও।