Vice Presidential election on Tuesday, two southern candidates in the fray:-আজকের ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় সবথেকে বড় খবর নিঃসন্দেহে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই দিল্লির সংসদ ভবন চত্বর সরগরম, কারণ দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদটির জন্য আজ ভোটদান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এবারের নির্বাচনের একেবারে আলাদা রঙ রয়েছে—কারণ লড়াইটা হচ্ছে দুই দক্ষিণি প্রার্থীর মধ্যে। একদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ প্রার্থী সি পি রাধাকৃষ্ণন, যিনি তামিলনাড়ুর সাবেক বিজেপি সভাপতি এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন রাজ্যপাল হিসেবে কাজ করেছেন। অন্যদিকে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডি, অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন বিচারপতি, যিনি অবসর গ্রহণের পরও তাঁর নিষ্ঠা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য মানুষের কাছে ভরসার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এই দুই নামই দক্ষিণ ভারতের মাটির সন্তান, তাই এবারের লড়াইটা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং এক অদৃশ্য আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে—তামিলনাড়ু বনাম অন্ধ্রপ্রদেশ।

গতকাল সোমবারই বড় ধরনের মোড় নিয়েছিল ভোটের হিসাব। ওড়িশার বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং তেলেঙ্গানার ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) ঘোষণা করেছে তারা এবার ভোটে অংশ নেবে না। এই সিদ্ধান্তে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে শাসক এনডিএ এবং বিরোধী ইন্ডিয়া জোট—দু’পক্ষই ভেবেছিল এই দুই আঞ্চলিক শক্তির সমর্থন তারা পাবে। বিজেডির নেতা সস্মিত পাত্র সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, “আমাদের দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই ভোটে আমরা অংশ নেব না। নবীন পট্টনায়কজীর নির্দেশই আমাদের জন্য চূড়ান্ত।” অন্যদিকে বিআরএসও ভোট থেকে দূরে থাকার কথা ঘোষণা করেছে, যা রাজনৈতিক অঙ্কে অনেকটা অস্থিরতা তৈরি করেছে।উপরাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হয়েছে জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগের কারণে। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তিনি আচমকাই এই পদ ছেড়ে দেন। ধনখড় ছিলেন বিজেপিরই প্রার্থী, তাই এবারও এনডিএ খুবই শক্তিশালী অবস্থানে আছে। সংখ্যার হিসাবে এনডিএর দিকেই পাল্লা ভারী—লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে ৪২২ জন সদস্য তাদের পাশে। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৯৪ ভোট। বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের শক্তি তুলনামূলকভাবে কম হলেও, এই নির্বাচনে একটাই চমক হতে পারে—ক্রস ভোটিং। কারণ এই ভোটে দলীয় হুইপ জারি করা হয় না, শুধু মৌখিক নির্দেশনা থাকে। ফলে অনেক সাংসদ নিজের বিবেকের ভোটও দিতে পারেন।
সংসদ ভবনের করিডোরে আজ সকালে এক বিজেপি সাংসদকে বলতে শোনা গেছে, “আমরা নিশ্চিত রাধাকৃষ্ণনজি জিতবেন। আমাদের সংখ্যাই প্রমাণ করছে সেটা।” তবে বিরোধী দলের একজন সাংসদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সংখ্যা যতই থাকুক, রাজনীতিতে কখনও কিছু চূড়ান্ত নয়। অনেক সময় বিবেকের ডাক দলীয় নির্দেশনার থেকেও জোরালো হয়।”সি পি রাধাকৃষ্ণন রাজনৈতিক জীবনে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মানুষ। তামিলনাড়ু বিজেপির সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করেছিলেন। এছাড়াও মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হিসেবে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। তাঁর প্রার্থীতার মধ্য দিয়ে বিজেপি একদিকে দক্ষিণ ভারতে নিজেদের শক্তি আরও মজবুত করতে চাইছে, অন্যদিকে একটি অভিজ্ঞ ও স্থিতিশীল মুখকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসাতে চাইছে।অন্যদিকে বি সুদর্শন রেড্ডি একজন প্রাক্তন বিচারপতি হিসেবে সারা জীবনের নিষ্ঠার জন্য পরিচিত। অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে তাঁর রায়গুলো সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। বিরোধী ইন্ডিয়া জোট তাঁকে প্রার্থী করেছে ঠিক এই কারণেই—যাতে ভোটারদের কাছে এই বার্তা যায়, তারা সততা, আইন ও ন্যায়ের প্রতীককে সমর্থন করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচন শুধু সংখ্যার লড়াই নয়, বরং একপ্রকার প্রতীকী লড়াই। দক্ষিণ ভারতের দুই প্রার্থী মুখোমুখি হওয়ায় এখানে আঞ্চলিক গর্বও জড়িয়ে গেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর সাধারণ মানুষও চোখ রাখছে এই নির্বাচনের দিকে। তামিলনাড়ুর এক স্থানীয় সংবাদপত্র লিখেছে, “আমাদের রাজ্যের একজন নেতা যদি উপরাষ্ট্রপতি হন, তবে এটি দক্ষিণ ভারতের জন্য গর্বের।” অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশের এক তরুণ শিক্ষার্থী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “বি সুদর্শন রেড্ডি শুধু একজন প্রার্থী নন, তিনি আমাদের ন্যায়বোধের প্রতীক।”ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া আজ সারাদিন ধরে চলবে এবং ফলাফল জানা যাবে আজ রাতেই। সংসদ ভবনের প্রতিটি করিডোরে এখন চাপা উত্তেজনা। ভোট দিচ্ছেন লোকসভার ৫৪২ জন সদস্য (একটি আসন শূন্য) এবং রাজ্যসভার ২৩৩ জন নির্বাচিত সদস্য, সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মনোনীত ১২ জন। মোট ভোটার ৭৮৭ জন। এর মধ্যে এনডিএর দখলেই রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। কিন্তু বিরোধীদের আশা, অন্তত কিছু ক্রস ভোটিং হবে, আর তাতেই পাল্লা বদলাতে পারে।এই নির্বাচনের ফলাফল শুধু দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে নয়, সংসদ ভবনের পরিবেশেও বড়সড় প্রভাব ফেলবে। যদি এনডিএ প্রার্থী রাধাকৃষ্ণন জেতেন, তবে দক্ষিণ ভারতে বিজেপির অবস্থান আরও মজবুত হবে। আবার যদি বি সুদর্শন রেড্ডি জিতে যান, তবে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।আজকের এই ভোট যেন গোটা দেশকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে—গণতন্ত্রে প্রতিটি ভোটেরই আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। সংখ্যা যতই একপক্ষের দিকে হোক না কেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র ভোটবাক্সই জানাবে।