Venus is much younger than Mars!ঃ এতদিন শুক্র গ্রহকে সৌরজগতের একটি প্রাচীন গ্রহ হিসেবে ভাবা হতো, তবে নতুন গবেষণা এই বিশ্বাসকে পাল্টে দিয়েছে। সম্প্রতি রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রের বয়স আসলে মঙ্গলের থেকেও কম। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ‘সোলার সিস্টেম রিসার্চ’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায়। বিজ্ঞানীদের মতে, শুক্রের ভূ-পৃষ্ঠের উপাদান ও তার আগ্নেয়গিরিগুলোর বয়স বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তাদের গবেষণা বলছে, শুক্রের পৃষ্ঠে থাকা লাভার স্তর মাত্র ৫০ কোটি বছর পুরনো, যেখানে মঙ্গলের আগ্নেয়গিরির বয়স প্রায় ১০০ কোটি বছর বা তারও বেশি। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে শুক্র গ্রহটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম বয়সী।শুক্রের আইএমডিআর অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের নজরে ছিল। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এই অঞ্চলে নজরদারি চালানোর সময় একাধিক অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা চিহ্নিত করেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মাটির নিচে থাকা গলিত উপাদানগুলো অপেক্ষাকৃত নতুন এবং এগুলো এখনও সক্রিয় রয়েছে। এই তথ্য শুক্র সম্পর্কে আমাদের পূর্ববর্তী ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
শুক্রের এই তুলনামূলক কম বয়সী হওয়ার বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কারণ এটি সৌরজগতের গঠনের ইতিহাসকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ তৈরি করছে। এই গবেষণা সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের বিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও নতুন ধারণা দিচ্ছে। শুক্রের মাটির বয়স যদি সত্যিই এত কম হয়, তবে এটি বোঝা যাচ্ছে যে এখনও এই গ্রহে ভৌগোলিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে।কিন্তু শুক্র সম্পর্কে আমরা এখনো অনেক কিছু জানি না। এর অন্যতম কারণ হলো এর ঘন মেঘমণ্ডল, যা গ্রহটির পৃষ্ঠ সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করতে বাধা সৃষ্টি করে। শুক্রের আবহাওয়া অত্যন্ত প্রতিকূল। তাপমাত্রা প্রায় ৪৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্যের কারণে এটি একটি ভয়ানক গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে এর পৃষ্ঠ সম্পর্কে গবেষণা করা অত্যন্ত কঠিন। তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে শুক্র সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য জানা যাবে।

শুক্র নিয়ে নতুন গবেষণা ও অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুক্রের পরিবেশ ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বোঝার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আবহাওয়া পরিবর্তন সম্পর্কেও ধারণা পেতে পারি। একসময় মনে করা হতো শুক্রেও হয়তো পৃথিবীর মতোই পানি ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত পানি হারিয়ে গেছে। এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা শিখতে চাইছেন, কীভাবে শুক্র তার জলীয় সম্পদ হারিয়ে ফেলে এবং কীভাবে তার গ্রিনহাউস এফেক্ট এতটা ভয়াবহ হয়ে ওঠে।এই বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) এখন শুক্র গ্রহের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা ঘোষণা করেছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শুক্রে একাধিক মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই মিশনগুলোর লক্ষ্য থাকবে শুক্রের আবহাওয়া, পৃষ্ঠতল এবং অভ্যন্তরীণ কাঠামো বিশ্লেষণ করা।শুক্র নিয়ে এই নতুন গবেষণা কেবলমাত্র বিজ্ঞানীদের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। সৌরজগতের রহস্য উন্মোচনে এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে গবেষণা আরও কী কী চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করে এবং আমরা সৌরজগতের জন্ম ও বিবর্তন সম্পর্কে নতুন কী শিখতে পারি।