Untimely rains cause severe flooding in Mexico:উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো, যেখানে সাধারণত বর্ষা মরশুম শেষের দিকে শান্ত হয়ে আসে, সেখানে এবছর দেখা দিল ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। অসময়ের টানা বৃষ্টিতে তৈরি হয়েছে ভয়ংকর বন্যা ও ভূমিধস। গালফ কোস্ট থেকে দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত এই বৃষ্টির প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে, যেন গোটা দেশ ডুবে গেছে জলরাশিতে।মেক্সিকো এমন এক সময় এই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, যখন অনেক অঞ্চলে নদীগুলি আগেই ফুলেফেঁপে ছিল মরশুমি বৃষ্টির কারণে। কিন্তু বর্ষা বিদায়ের ঠিক আগেই নতুন নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, আর তাতেই শুরু হয় লাগাতার বৃষ্টি—যার পরিণতিতে রাস্তাঘাট, গ্রাম-শহর সব কিছুই জলমগ্ন হয়ে পড়ে।প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত এই ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬৪ জনের, নিখোঁজ রয়েছেন আরও প্রায় ৬৫ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হিডালগো এবং ভেরাক্রুজ রাজ্যে, যেখানে মৃতের সংখ্যা ৫০ এবং নিখোঁজ ৬১ জন।টানা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে রাস্তা, ভেঙে পড়েছে বহু ব্রিজ ও ঘরবাড়ি। অন্তত এক লক্ষ বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। গালফ কোস্টের একাধিক এলাকায় ভূমিধসের খবর পাওয়া গিয়েছে, যার ফলে আরও বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা।
পাঁচটি রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন,বৃষ্টি যে এতটা ভয়াবহ আকার নিতে পারে, তা কেউই অনুমান করতে পারেননি। আমাদের দেশ এক ভয়াবহ পরীক্ষার সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।”প্রশাসনের তরফে উদ্ধার ও ত্রাণকাজ শুরু হয়েছে দ্রুত গতিতে। সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী একযোগে কাজ করছে। হেলিকপ্টার ও নৌকার সাহায্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ বা রাস্তা যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, সেখানে সাময়িক শিবির তৈরি করে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে দুর্গতদেস্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এমন বিপর্যয় তারা জীবনে কখনও দেখেননি। এক বাসিন্দা বলেন,আমাদের পুরো গ্রামটাই জলের তলায়। ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদি পশু—সব কিছু ভেসে গেছে। এখন বাঁচার জন্যই লড়াই করছি।
”অনেকেই প্রশাসনের দ্রুত সাহায্যের প্রশংসা করলেও, বহু এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছতে দেরি হওয়ায় অসন্তোষও দেখা দিয়েছেবিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন স্পষ্টভাবে দেখা দিচ্ছে মেক্সিকোর মতো দেশেও। অসময়ের বৃষ্টি, অতিবৃষ্টির ধারা এবং ঘূর্ণিঝড়ের বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বেড়ে চলেছে।পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে মেক্সিকোতে বড় ধরনের বন্যা বা ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৪ বার। এইবারের ক্ষয়ক্ষতি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ।সরকার ইতিমধ্যেই জরুরি ত্রাণ তহবিল ঘোষণা করেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ দল জলনিষ্কাশন ও নদী পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে। তবে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েকদিন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে, ফলে বিপর্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।মেক্সিকোর এই ভয়াবহ বন্যা আবারও মনে করিয়ে দিল, প্রকৃতির শক্তি মানুষের সমস্ত প্রস্তুতিকে মুহূর্তে ব্যর্থ করে দিতে পারে। এখন প্রশ্ন একটাই—কত দ্রুত দেশটি এই দুর্যোগ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।