Unsettled Nepal, Chief Minister in Uttarakhand to keep an eye on the border: হিমালয়ের কোলে ছোট্ট দেশ নেপাল, যা ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত জুড়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার পালাবদল কিংবা নাগরিকদের বিক্ষোভ—সবকিছুর প্রভাব পড়ে সরাসরি সীমান্তবর্তী ভারতীয় অঞ্চলগুলোতে। সম্প্রতি সেই অস্থিরতা চরম আকার নিয়েছে। নেপাল সরকার হঠাৎ করে ফেসবুক, এক্স, ইউটিউব-সহ মোট ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতেই দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম, যারা নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলেছে ডিজিটাল মাধ্যমে, তারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করে।
প্রথম দিকে বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। বিক্ষোভকারীরা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর ভরসা রাখতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই পদত্যাগ দেশজুড়ে অস্থিরতাকে আরও উসকে দেয়।অশান্ত পরিবেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একেবারেই বিপর্যস্ত। সীমান্ত এলাকায় বহু পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, ফলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা আরও বেড়েছে। কাঠমান্ডু ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে বহু ভারতীয় নাগরিকও আটকে পড়েছেন।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় পর্যটকরা কার্যত বন্দি অবস্থায়। নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড বিদেশি নাগরিকদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বড় জমায়েত এড়িয়ে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে পর্যটন পুলিশের হটলাইন নম্বর ১১৪৪-এ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। দূতাবাসগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেও পর্যটকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এই পরিস্থিতি ঘিরে ভারতীয় প্রশাসনের দিক থেকেও সতর্কবার্তা জারি হয়েছে। ভারত-নেপাল সীমান্তে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। চলছে নাকা তল্লাশি। সীমান্তবর্তী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাতেই উত্তরকন্যার চেম্বারে বসে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। সীমান্তবর্তী দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, “প্রতিবেশী দেশে অস্থিরতা বাড়লেও সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনও গাফিলতি চলবে না। মানুষকে নিরাপদ রাখাই আমাদের প্রথম কাজ।”
উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্তে বসবাসকারী অনেকেই প্রতিদিন নেপালের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বা কাজের সূত্রে যাতায়াত করেন। তাঁদের জীবনযাত্রা হঠাৎ থমকে গেছে।নেপালের এই পরিস্থিতি শুধু তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কট নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার মতো সিদ্ধান্তে তরুণ সমাজের ক্ষোভ বিস্ফোরণের আকার নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল যুগে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা খর্ব করার মতো মনে হয়। তাই প্রতিক্রিয়া এত তীব্র হয়েছে।ভারত-নেপাল সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৭০০ কিলোমিটার। প্রতিদিন এই সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।

সীমান্ত বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসা, পর্যটন, এমনকি মানুষের ব্যক্তিগত জীবনও বিপর্যস্ত হয়। ইতিমধ্যেই শতাধিক ট্রাক আটকে পড়ায় প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে উত্তরবঙ্গের বাজারে।এছাড়া নেপালে আটকে পড়া ভারতীয় পর্যটক ও নাগরিকদের নিরাপত্তাও এখন বড় প্রশ্ন। দূতাবাস ও পর্যটন পুলিশের নির্দেশিকা মেনে চলাই আপাতত একমাত্র উপায়।বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল—নেপালে নতুন সরকার গঠিত হলে পরিস্থিতি কত দ্রুত স্থিতিশীল হবে। বিদেশি পর্যটক ও আটকে থাকা ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফেরানো জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সীমান্তবর্তী ভারতীয় প্রশাসনও নজরদারি বাড়ালেও দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের অস্থিরতা সীমান্তের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নেপালের তরুণ সমাজের আস্থা ফিরে পেতে হলে নতুন সরকারকে দ্রুত স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় অশান্তি আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।অগ্নিগর্ভ নেপালের অশান্তি বর্তমানে সীমান্তবর্তী ভারতের জন্যও উদ্বেগের কারণ। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগ—সব মিলিয়ে দেশজুড়ে প্রবল অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরকন্যা থেকে পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছেন। সীমান্তবর্তী মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা রক্ষাই এখন সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।