Saturday, June 7, 2025
Google search engine
HomeUncategorisedদক্ষিণবঙ্গে অস্বস্তি ও গরম, বাড়বে তাপমাত্রা

দক্ষিণবঙ্গে অস্বস্তি ও গরম, বাড়বে তাপমাত্রা

Uncomfortable and hot in South Bengal, temperature will increase:-দক্ষিণবঙ্গে গ্রীষ্ম যেন নতুন করে আবার এসে হাজির হয়েছে। বেলা বাড়লেই সূর্য যেন একপ্রকার রাগের আগুন ছড়াচ্ছে, আর সঙ্গে আছে ঘামে ভেজা বাতাস, শরীরের ওপর চাপ তৈরি করা আদ্রতা—এই দুইয়ের মিলনে দক্ষিণবঙ্গজুড়ে জনজীবন কার্যত নাভিশ্বাস উঠছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস বলছে, আপাতত বাংলার আকাশে মৌসুমী অক্ষরেখা দুর্বল। তাই সামনের কয়েকদিনে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং পশ্চিম দিক থেকে ঢোকা গরম ও শুষ্ক হাওয়া তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে, আর তাতেই অস্বস্তির পরিমাণ বাড়বে কয়েকগুণ।আবহাওয়াবিদদের মতে, দক্ষিণবঙ্গের আকাশে এখনো বর্ষার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আগামী ১২ই জুনের পর কিছুটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলতে পারে, তবে তার আগে পর্যন্ত অন্তত আরও ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার মানে আগামী কয়েকদিন ৩৮-৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, মালদা, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম বর্ধমানের জেলাগুলিতে।শনিবার সকালেই কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ২২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠতে পারে ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৫৪ থেকে ৯৮ শতাংশ, ফলে ‘হিউমিড হিট’ বা আদ্রতাজনিত গরমের পরিস্থিতি তৈরি হবে, যা শরীরে তাপমাত্রার প্রভাবকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে।

1200 675 21655446 thumbnail 16x9 weather

এই গরমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন বয়স্ক নাগরিক, শিশু এবং কর্মজীবী মানুষজন, যাঁদের প্রতিদিন রোদে বেরোতে হয়। হাওড়ার এক স্কুলশিক্ষিকা সুজাতা মণ্ডল বললেন, “শিশুরা ক্লাসে বসতেই পারছে না, ফ্যান চালিয়ে কাজ হচ্ছে না, জল খেয়ে খেয়ে ক্লান্ত লাগছে।” দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী বিনয় রায় বললেন, “এই গরমে মোটরবাইক চালিয়ে অফিস যাওয়া দুঃস্বপ্নের মতো। শরীর ঘেমে ভিজে যায়, মাথা ধরেই থাকে সারাদিন।”এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা বিশেষ করে ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক ও ক্লান্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে বলছেনএসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. দীপঙ্কর ঘোষ জানালেন, “এই ধরনের আদ্রতাপূর্ণ গরমে মানুষের শরীরে ঘাম ঝরে অনেক জল বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। প্রচুর জল খেতে হবে, ঠান্ডা জায়গায় থাকতে হবে, এবং বেশি রোদে বেরোনো এড়িয়ে চলা দরকার।”আবহাওয়া বিশ্লেষক ড. অরিন্দম মাইতি বলেন, “মৌসুমী অক্ষরেখা এখনো দক্ষিণের দিকে রয়েছে। হিমালয়ের পাদদেশে কিছুটা সক্রিয়তা দেখা দিলেও সেটি এখনো বাংলার দিকে অগ্রসর হয়নি। ফলে বর্ষা ঢুকতে এখনও কয়েক দিন বাকি।” তিনি আরও বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হবে খুবই বিচ্ছিন্নভাবে এবং স্বল্প সময়ের জন্য। কার্যত কোনও স্বস্তির সম্ভাবনা নেই। বরং শুকনো গরম হাওয়া পরিবেশকে আরও অস্বস্তিকর করে তুলবে।”

এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ দপ্তর লোডশেডিং এড়াতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ এই সময়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রপাতি, ফ্যান ও জল সরবরাহ ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়। কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক রাজর্ষি সেনগুপ্ত জানান, “আমরা শহরের বিভিন্ন জলপ্রকল্প ও হাসপাতাল এলাকায় পর্যাপ্ত জলের সরবরাহ নিশ্চিত করছি। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সহায়তাও রাখা হয়েছে।”তবে এই পরিস্থিতি শুধু শহরেই নয়, গ্রামীণ এলাকাতেও কম ভয়াবহ নয়। বাঁকুড়ার এক কৃষক মদন হেমব্রম জানালেন, “এই গরমে মাঠে কাজ করা অসম্ভব। জমি শুকিয়ে কাঠ। বর্ষা না এলে বীজ বোনাও হবে না।” জলপাইগুড়ির এক আদিবাসী মহিলা শ্রমিক চুনী ওরাওঁ বলেন, “গরমে ঘরেও টেকা যায় না, মাঠেও কাজ করতে পারি না। এখন শুধু বৃষ্টি চাই।”

সব মিলিয়ে এখন দক্ষিণবঙ্গজুড়ে অপেক্ষা বর্ষার জন্য। কিন্তু সেই বর্ষা ঢুকতে এখনও কয়েকদিন বাকি। এর মধ্যে গরমের দাপট আরও বাড়বে, এবং তা জনজীবনের উপর প্রভাব ফেলবে আরও গভীরভাবে। এখন প্রয়োজন—প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ, চিকিৎসা ও জল সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন রাখা, যাতে এই গরমের সময়ে কোনও বিপদ না ঘটে।সবশেষে বলা যায়, এখন দক্ষিণবঙ্গের আকাশের দিকে তাকিয়ে মানুষের একটাই প্রশ্ন—“আকাশটা কবে ভিজবে?” আর সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো প্রকৃতির হাতে, কারণ যতক্ষণ না বর্ষা আসে, ততক্ষণ দক্ষিণবঙ্গে চলবে গরমের দাপট, আদ্রতার অস্বস্তি আর বৃষ্টির প্রতীক্ষা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments