Friday, May 23, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসমস্কোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, বিপাকে ভারতীয় প্রতিনিধিদল

মস্কোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, বিপাকে ভারতীয় প্রতিনিধিদল

Ukrainian drone attack in Moscow, Indian delegation in trouble:-রাশিয়ার রাজধানী মস্কো—যেখানে কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার কথা ছিল, সেখানেই হঠাৎ যেন যুদ্ধের দামামা। ইউক্রেনের তরফে চালানো এক ভয়ঙ্কর ড্রোন হামলার মুখে পড়ে ভারতীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি। উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে ঘিরে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্য বিনিময়, কিন্তু সেই সাংসদদের বিমান যখন মস্কোর আকাশে অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা—ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালায় মস্কোর বিভিন্ন এলাকায়, যার পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে রাশিয়া বন্ধ করে দেয় সবক’টি বিমানবন্দর। ফলে মাঝ আকাশে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঘুরতে থাকে ভারতীয় প্রতিনিধিদের বহনকারী বিমান। আতঙ্কের পরিবেশে তারা বুঝতে পারছিলেন না, আদৌ মাটি ছোঁয়া সম্ভব হবে কি না। বহুক্ষণ পর যখন নিরাপত্তা বাহিনী সবুজ সঙ্কেত দেয়, তবেই অবশেষে অবতরণ করে বিমানটি, এবং রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার নিজে উপস্থিত হয়ে তাঁদের স্বাগত জানান।

WhatsApp20Image202025 05 2320at201.12.2620PM2028229

এই ঘটনা স্বভাবতই কূটনৈতিক মহলে এক আলোড়ন তুলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছিলেন—“বিদেশি প্রতিনিধিরা যখনই আমাদের দেশে কূটনৈতিক উদ্দেশ্যে আসেন, তখনই ইউক্রেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা চালায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়।” মস্কোর এই ড্রোন হামলা সেই অভিযোগকে যেন আরও জোরালো করে তুলল। যদিও ইউক্রেন সরকার এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু সামরিক নয়, বরং মানসিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল হতে পারে।ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদ, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও তথ্য বিশ্লেষকরা, যারা পাকিস্তান ঘাঁটি থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে রাশিয়ার নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক কর্তাদের সঙ্গে তথ্য ভাগ করে নিতে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতা রয়েছে এবং রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী একাধিকবার পাকিস্তান ঘাঁটিগুলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই প্রেক্ষাপটেই ভারত এই প্রতিনিধি দল পাঠায়।

সাংসদ কানিমোঝি পরবর্তী সময়ে এক বিবৃতিতে জানান, “আমরা যে মুহূর্তে মস্কো পৌঁছই, তখনই বুঝি কিছু একটা ঘটছে। পাইলট জানালেন, বিমান অবতরণ করতে পারছে না। আমাদের বলা হয়েছিল বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে নিরাপত্তার কারণে। এরপর আমরা জেনেছি, এটি ছিল ইউক্রেনের একটি হামলা। আমাদের সকলেই নিরাপদে নামতে পারলেও, এক মুহূর্তের জন্যও আতঙ্ক কাটেনি।”এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে রাশিয়ায় অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যেও। বহু প্রবাসী ভারতীয় এবং পড়ুয়া আতঙ্কিত হয়ে পরিবারকে ফোন করে জানিয়েছেন পরিস্থিতির কথা। রাশিয়ার ভারতীয় দূতাবাস থেকেও একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “বর্তমানে সকল ভারতীয় নিরাপদে রয়েছেন এবং আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।”এই ড্রোন হামলার সময় মস্কোর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে এবং রাশিয়ার সামরিক ড্রোন প্রতিরক্ষা ইউনিট বেশ কয়েকটি ইউক্রেনীয় ড্রোন গুলি করে নামায়। যদিও প্রাণহানির সংখ্যা কম, তবু এই ধরনের আক্রমণ রাশিয়ার ভেতরের স্থিতিশীলতার উপরে বড় প্রশ্নচিহ্ন তোলে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের আরও একটি ভয়াবহ মাত্রা স্পষ্ট হয়। এবং এই দফার আক্রমণের সময় ভারতীয় প্রতিনিধি দলের উপস্থিতি ঘটনাটিকে আরও গুরুতর করে তোলে।রাশিয়ার “সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ”-এর এক বিশ্লেষক বলেন, “ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা মস্কোতে আসছেন, এবং সেই সময়ই ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে—এটা আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে ভয় দেখানোর একটি প্রচেষ্টা। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়।” অন্যদিকে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলিও এই ঘটনাকে ঘিরে নানা বিশ্লেষণ করছে। কেউ কেউ বলছেন, এই ধরনের হামলা ভবিষ্যতে বিদেশি কূটনীতিকদের রাশিয়া সফরের প্রতি একধরনের নিরাপত্তা সংশয় তৈরি করতে পারে।

WhatsApp20Image202025 05 2320at201.12.2620PM2028129

ভারতের কূটনৈতিক মহলেও আলোচনার ঝড় উঠেছে। প্রাক্তন বিদেশ সচিব শ্যাম শরণ বলেন, “যখন আমাদের প্রতিনিধি দল কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছে, তখন এই ধরনের পরিস্থিতি কেবল উদ্বেগজনক নয়, এর ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ বিদেশনীতি পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও নতুন ভাবনার দরজা খুলে দেয়। আমাদের এখন বুঝে নিতে হবে, এই যুদ্ধের ছায়া শুধু ইউরোপে নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও পড়ছে।”এই ঘটনার পর রাশিয়া আশ্বস্ত করেছে যে, ভারতের প্রতিনিধি দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই নির্ধারিত বৈঠকে অংশগ্রহণ শুরু করেছেন এবং পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডোজিয়ার রাশিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন ড্রোন হামলা চলতেই থাকলে রাশিয়া সফরকারী বিদেশি প্রতিনিধি দলগুলির জন্য বাড়তি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে হবে। ভারতও ভবিষ্যতে তার সাংসদ ও কূটনীতিকদের বিদেশ সফরের আগে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলবে। পাশাপাশি পাকিস্তানকে ঘিরে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের অবস্থান আরও জোরালো হবে আন্তর্জাতিক ফোরামে।সব মিলিয়ে বলা যায়, মস্কোর আকাশে ইউক্রেনীয় ড্রোনের গর্জন শুধু রাশিয়ার নিরাপত্তা নয়, ভারতের জন্যও এক নতুন সতর্কতার ঘণ্টা বাজাল। এবং এই ঘটনার মধ্য দিয়েই ফের প্রমাণিত হল—যুদ্ধের ছায়া কখন, কোথায়, কাদের উপর পড়ে যাবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। কিন্তু যখন পড়ে, তখন তা কেবল গোলা-বারুদের শব্দ নয়, কাঁপিয়ে তোলে কূটনীতি, জনমত ও মানবিক বোধকে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments