Trump wants to be Pope! Controversy rages after posting picture on social media : মার্কিন রাজনীতির বিতর্কিত চরিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও নেট দুনিয়ার শিরোনামে। এবার তাঁর মন্তব্য ও এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তিতে তৈরি ছবি ঘিরে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প নিজের একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে তাঁকে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপের পোশাকে দেখা যায়। সেই ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “আমার প্রথম পছন্দ, পোপ হওয়া।” এই পোস্ট প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নেট দুনিয়ায় শুরু হয়ে যায় উত্তাল বিতর্ক। অনেকে এটিকে নিছক রসিকতা হিসেবে নিলেও, বিশাল একটি অংশ বিষয়টিকে অত্যন্ত অশালীন, সংবেদনশীলতার অভাবপ্রসূত এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে মনে করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক সপ্তাহ আগে। রোমান ক্যাথলিক গির্জার বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। গোটা পৃথিবীর ক্যাথলিক জনগোষ্ঠীর কাছে এটি ছিল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে রাষ্ট্রনেতারা যোগ দেন, যার মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পও ছিলেন উপস্থিত। এমন এক সংবেদনশীল সময়ে, একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, “আপনি কাকে পরবর্তী পোপ হিসেবে দেখতে চান?” সেই প্রশ্নের উত্তরে, ট্রাম্প যেন ‘মজা করে’ বলে ওঠেন, “আমি নিজেই পোপ হতে চাই!” প্রথমে হাসিঠাট্টার মতো লাগলেও, পরে যখন ট্রাম্প নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় AI প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি নিজের পোপের বেশে একটি ছবি পোস্ট করেন, তখন তা নিয়ে শুরু হয় প্রবল ক্ষোভ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তদের একাংশ যেমন তাঁকে বাহবা দিয়েছেন এই ‘সাহসী’ পদক্ষেপের জন্য, তেমনই বিশিষ্ট ক্যাথলিক নেতারা বিষয়টিকে ধর্মের উপর ‘অসম্মান’ বলে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। নিউ ইয়র্কের আর্চবিশপ টিমোথি ডোলান একটি বিবৃতিতে জানান, “ধর্ম আমাদের অনুভূতির জায়গা। এ নিয়ে রসিকতা করা বা AI ছবিতে নিজেকে ধর্মগুরু হিসেবে উপস্থাপন করা, মোটেই শোভন নয়।” ভ্যাটিকান থেকেও একটি অপ্রত্যক্ষ বার্তা আসে—যেখানে আধুনিক প্রযুক্তিকে সংযতভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় এবং ধর্মীয় সম্মান রক্ষার গুরুত্ব বোঝানো হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই পুরো ঘটনাটি আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার একটি কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প ২০২4 সালের নির্বাচনেও রিপাবলিকান দলের মূল মুখ হিসেবে অংশ নিতে চলেছেন। তার আগেই ধারাবাহিকভাবে নানারকম বিতর্ক তৈরি করে তিনি সংবাদ শিরোনামে থাকতে চাইছেন, এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। বিশ্লেষক ডেনিয়েল রজার্স বলেন, “ট্রাম্প জানেন কীভাবে আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে হয়। তিনি জানেন, বিতর্ক তাঁর প্রচারের অক্সিজেন।”
অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের এই ছবি ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রচুর মিম, ট্রল ও বিদ্রুপ। কেউ লিখেছেন, “পোপ ট্রাম্প হলে রোজ প্রার্থনার বদলে টুইট হবে।” আবার কেউ ব্যঙ্গ করে বলেন, “ধর্ম আর রাজনীতির এই সংমিশ্রণ ভয়ানক বিপজ্জনক!” অনেকে আবার বিষয়টিকে AI ছবির অপব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ টম হ্যামিলটন বলেন, “AI প্রযুক্তি যেমন নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে, তেমনই এটি ভুল বার্তা ছড়ানোর একটি হাতিয়ার হয়ে উঠছে। ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিত্ব এই প্রযুক্তিকে যদি রাজনৈতিক মঞ্চে এমনভাবে ব্যবহার করেন, তবে সেটি নৈতিক ও সামাজিক প্রশ্ন তুলবে।”
এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিক ভোটারদের একটি বড় অংশের প্রতিক্রিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আমেরিকার প্রায় ৬ কোটিরও বেশি নাগরিক ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী। তাঁদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ক্যাথলিক অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় ইস্যু নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের উপর সরাসরি আঘাত।” অন্যদিকে ট্রাম্পের সমর্থকরা এটিকে ‘মজা করে বলা’ বক্তব্য বলেই দেখাতে চাইছেন।
ট্রাম্প যদিও নিজের বক্তব্যকে হালকা করে দেখাতে চেয়েছেন পরবর্তীতে, কিন্তু AI ছবির উপস্থিতি এবং তার ভঙ্গিমা প্রমাণ করে দেয় যে এটি শুধুই একটি ‘স্পন্টেনিয়াস’ মন্তব্য ছিল না। বরং এটি পরিকল্পিত, কৌশলগত, এবং শিরোনামে আসার জন্য সুচিন্তিত প্রচেষ্টা।
এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা সময় বলবে। তবে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা একযোগে প্রশ্ন তুলেছেন—AI এবং রাজনীতি একত্রে সমাজে কোন বার্তা দিচ্ছে? এমনকি, ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ইতিমধ্যে ট্রাম্পের এই পোস্ট নিয়ে সংসদে আলোচনা উঠেছে। ফ্রান্সের সাংসদ মারি ল্যাফো বলেন, “এই ধরনের কাজ শুধু অশোভন নয়, এটি বিশ্ব রাজনীতির মানেও নামিয়ে দেয়।”
এই মুহূর্তে ট্রাম্প নিজেকে আরও প্রচারের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন ঠিকই, তবে এই বিতর্ক আদতে তাঁকে উপকৃত করবে, না ক্ষতির মুখে ফেলবে—তা এখনই বলা মুশকিল। তবে এটুকু স্পষ্ট, এই ঘটনার রেশ দীর্ঘদিন থাকবে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক চর্চার অঙ্গনে।