Tuesday, May 13, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যমার্কিন চিন বাণিজ্যেও ৯০ দিনের ‘সংঘর্ষবিরতি’, শুল্ক কমানোর ঘোষণা ট্রাম্প জিনপিংয়ের

মার্কিন চিন বাণিজ্যেও ৯০ দিনের ‘সংঘর্ষবিরতি’, শুল্ক কমানোর ঘোষণা ট্রাম্প জিনপিংয়ের

Trump Jinping announces 90-day ‘ceasefire’ in US-China trade, tariff reduction:দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্য উত্তেজনার পর অবশেষে শান্তির পথে পা বাড়াল দুই অর্থনৈতিক মহাশক্তি — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন। বিশ্ববাজারে একের পর এক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং শি জিনপিং এক যুগান্তকারী ঘোষণায় জানালেন, পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য তাঁরা পারস্পরিক শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা। এই পদক্ষেপকে বলা হচ্ছে “সংঘর্ষবিরতির শান্তিপর্ব”, যা অন্তত ৩ মাসের জন্য হলেও একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিকে।গত কয়েক বছরে মার্কিন-চিন বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিকে অস্থির করে তুলেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপিয়েছিল, অন্যদিকে চিনও পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে আমেরিকান পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। যার জেরে বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা, রপ্তানিকারক এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক সহ একাধিক গ্লোবাল ফিনান্স সংস্থা এই উত্তেজনাকে বৈশ্বিক বৃদ্ধির পথে বড় বাধা বলে আখ্যা দিয়েছিল।এই পরিস্থিতিতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত ১০ ও ১১ মে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে আমেরিকার পক্ষ থেকে ছিলেন রাজস্ব সচিব স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার এবং চিনের পক্ষ থেকে ছিলেন বাণিজ্য দফতরের উপপ্রধান হি লিফেং। দীর্ঘ কয়েক দফা আলোচনার পর অবশেষে উভয় পক্ষ একটি অস্থায়ী সমঝোতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

সমঝোতা অনুযায়ী, চিন আগামী ৯০ দিনের জন্য আমেরিকান পণ্যের উপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে, অন্যদিকে আমেরিকা চিনা পণ্যের উপর শুল্ক ১৪৫-২০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে।মার্কিন রাজস্ব সচিব স্কট বেসেন্ট এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন,এই ঘোষণার পরপরই আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ২.১ শতাংশ বেড়ে যায়, অন্যদিকে হংকং ও সাংহাই বাজারেও উত্থান দেখা যায়। ইউরোপীয় বাজারেও এই ঘোষণার ফলে স্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে।তিনি আরও বলেন, “৯০ দিনের মধ্যে যদি কোনও স্থায়ী বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তবে ফের উত্তেজনা শুরু হতে পারে। কারণ, উভয় দেশই বাণিজ্য ঘাটতি, প্রযুক্তি চুরি এবং বাজার অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত ইস্যুতে একে অপরের উপর দোষ চাপাচ্ছে।”ভারত সহ বহু উন্নয়নশীল দেশও এই ঘোষণায় স্বস্তি পেয়েছে। কারণ, মার্কিন-চিন শুল্কযুদ্ধের ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ওপরও প্রভাব পড়ছিল। ভারতীয় চা, স্টিল, টেক্সটাইলের মতো অনেক পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা হারাচ্ছিল। এখন এই সংঘর্ষবিরতির ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা নতুন করে লাভের মুখ দেখতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরাতবে আশার আলো যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি কিছু জটিলতাও রয়ে যাচ্ছে।

Screenshot 2025 05 13 165553

বিশেষ করে চিনের ওপর আমেরিকার অভিযোগ, তারা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি করে, টেক কোম্পানিগুলির উপরে অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ চাপায়, এবং রপ্তানিতে ভর্তুকি দেয়—এই সব বিষয় এখনও সমাধান হয়নি।আমেরিকার একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, “চিন যদি ভবিষ্যতে এই আচরণে পরিবর্তন না আনে, তবে এই সংঘর্ষবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।” অন্যদিকে, চিনেরও অভিযোগ, আমেরিকা তাদের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে অকারণে ব্ল্যাকলিস্ট করে দিচ্ছে, যা মুক্ত বাণিজ্যের পরিপন্থী।এই সমঝোতার মাধ্যমে ট্রাম্প ও জিনপিং এক কৌশলগত বার্তা দিয়েছেন বিশ্ববাসীকে—সংঘর্ষ নয়, আলোচনা দিয়েই সমস্যার সমাধান সম্ভব। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের অতীত ট্র্যাক রেকর্ড বলছে, তিনি হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তাই অনেকে বলছেন, ৯০ দিনের শান্তি সত্যিই স্থায়ী কিনা, তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।পরিশেষে বলা যায়, এই ৯০ দিনের সংঘর্ষবিরতি বিশ্ববাণিজ্যের জন্য এক আশার আলো। শুল্ক কমার ফলে আন্তর্জাতিক পণ্যের দাম কিছুটা কমতে পারে, আমদানি-রপ্তানির উপর চাপ কিছুটা কমবে, এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্থিতি ফিরবে। তবে চ্যালেঞ্জ এখনও অনেক রয়ে গেছে। প্রযুক্তিগত আধিপত্য, বাজারে আধিপত্য বিস্তার, এবং ভূ-কৌশলগত প্রতিযোগিতা এখনও দুই দেশের সম্পর্ককে অনিশ্চয়তার দোলাচলে রেখে দিচ্ছে। এই ৯০ দিনের মধ্যে যদি কোনও স্থায়ী চুক্তি না হয়, তবে আবারও বিশ্ব অর্থনীতি এক অস্থির অধ্যায়ে প্রবেশ করতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments