Saturday, April 12, 2025
Google search engine
Homeরাজনীতিঅন্যানো রাজনীতিনতুন শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের

নতুন শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের

Trump imposes new tariffs : ২ এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ঘোষণায় ফের সরগরম হয়ে উঠল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যজগত—তিনি জানিয়ে দিলেন, চীন, কানাডা, মেক্সিকো, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশের পণ্যের উপর আবার নতুন করে শুল্ক আরোপ করবেন তিনি, যার মধ্যে চীনের পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ এবং অন্য দেশগুলোর উপর ১০ থেকে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ছিল, আর এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই যেন দুনিয়া আবার শ্বাসরোধ করে দাঁড়িয়ে পড়ল এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, যেখানে ছোট দেশ থেকে শুরু করে বড় দেশগুলো তাদের রপ্তানি ও আমদানির চিত্রকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগতে শুরু করল, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো, যারা মার্কিন বাজারের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল

যেমন ভারত, বাংলাদেশ বা ভিয়েতনাম—এই দেশগুলো থেকে যেসব গার্মেন্টস, চামড়াজাত পণ্য বা প্রযুক্তি সামগ্রী আমদানি হয় আমেরিকায়, সেইসব পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক চাপানো হলে সরাসরি তার প্রভাব পড়বে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের উপর, কর্মসংস্থান কমবে, দাম বাড়বে, ভোক্তারা ব্যয়বহুল পণ্য কিনতে বাধ্য হবেন, আর সব মিলিয়ে একটা অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে বাজার জুড়ে, এমনটাই মত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকদের, যেমন ডেভিড ব্রাউন, যিনি বললেন, “এই ধরনের শুল্ক শুধু মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে না, বরং গোটা গ্লোবাল ট্রেড সিস্টেমকে ধাক্কা দিয়ে দেয়,” তবে ট্রাম্পের মতে তাঁর এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলোকে বাঁচাবে, চাকরি ফিরিয়ে দেবে এবং চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতিকে একটা বার্তা দেবে—“আমেরিকা আর ঠকে যাবে না,” এমনটাই তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, যদিও বাস্তবতা বলছে অন্য কথা, কারণ এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসনের সময় শুল্ক আরোপের জেরে চীনও পাল্টা শুল্ক বসিয়েছিল, যার ফলে কৃষিজ পণ্য থেকে শুরু করে প্রযুক্তিপণ্য—সবক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মার্কিন উৎপাদকরাও, এবারও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, এমনকি এখনো চীন কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে,

2Q==

তারা “সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে” এবং “দেশের স্বার্থে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে”, অপরদিকে কানাডা ও মেক্সিকো, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক মিত্র, তারা ইতিমধ্যেই শঙ্কিত, কারণ এই ধরনের সিদ্ধান্ত NAFTA-র (বর্তমানে USMCA) মূল চুক্তির বিরোধী হতে পারে, এবং এমন অবস্থায় সেই দেশগুলোর অর্থনীতি, বিশেষ করে কৃষি ও ইস্পাত শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা, তবে যতটা না আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সেই সব বড় অর্থনীতির ক্ষেত্রে, তার চেয়েও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছে ছোট ও মধ্য আকারের দেশগুলি, যেমন বাংলাদেশ, যেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ গার্মেন্টস রপ্তানি হয়, সেক্ষেত্রে যদি আমদানির ওপর কোনওভাবে প্রভাব পড়ে তাহলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা লাগবে, বিশেষ করে রপ্তানিনির্ভর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ভেঙে পড়তে পারেন, পাশাপাশি যেসব মানুষ এই শিল্পে কাজ করেন, তাঁদের চাকরি হারানোর সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে, যদিও এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ বা ভারতের উপর সরাসরি কোনও শুল্ক আরোপের কথা ট্রাম্প বলেননি, কিন্তু যে হারে ট্রাম্প তাঁর বাণিজ্য নীতি কড়া করছেন, তাতে ভবিষ্যতে এরকম কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, আবার অনেকে বলছেন এই সিদ্ধান্ত হয়তো শুধুই একধরনের রাজনৈতিক চাল—নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদের তাস খেলতেই এমন কিছু পদক্ষেপ, যাতে দেশের জনগণ ভাবেন,

ট্রাম্পই দেশকে রক্ষা করছেন বাইরের প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাত থেকে, তবে এও ঠিক, এই ধরনের হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে অনেক সময় নিজের দেশের বাজারও অস্থির হয়ে পড়ে, কারণ বহু পণ্য, যেগুলো আমেরিকার নিজস্ব উৎপাদনে সম্ভব নয়, সেগুলো আমদানি বন্ধ হলে ভোক্তারা সমস্যায় পড়েন, আর তাতেই দেখা দিতে পারে মূল্যবৃদ্ধি, অথচ সেই মুহূর্তেই ট্রাম্প আবার শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে চমকে দিলেন গোটা দুনিয়াকে—একদম যেন নাটকীয় মোড়! অনেকে বলছেন, এত বড় ঘোষণার পর আবার হঠাৎ পিছিয়ে যাওয়াটা আসলে একটি কৌশল, হয়তো বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া বুঝেই নিজের অবস্থান নমনীয় করছেন, যাতে ভবিষ্যতে দর কষাকষিতে বেশি সুবিধা পান, তবে এই ধরনের দ্ব্যর্থতা আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তোলে, যার প্রভাব পড়ে মুদ্রাবাজার, শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগের ওপর, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যদি আবার প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে এই ধরনের সিদ্ধান্তই ভবিষ্যতের মার্কিন বাণিজ্যনীতির মুখ হয়ে উঠতে পারে, যেখানে মার্কিন স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং যেকোনও মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম বদলে যেতে পারে, আর এইসব পরিবর্তনের খেসারত দিতে হবে গোটা বিশ্বকে, সেই তালিকায় থাকবে উন্নত দেশ যেমন আছে, তেমনি উন্নয়নশীল ও গরিব দেশও, সুতরাং স্পষ্ট যে, ট্রাম্পের এই শুল্ক নাটক শুধুমাত্র মার্কিন রাজনীতির বিষয় নয়, এটি একেবারে গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক গতিপথকেই প্রভাবিত করতে পারে, এখন দেখার বিষয়, এই নাটকের পরবর্তী দৃশ্য কী হবে, কে কীভাবে পাল্টা চাল দেবে, আর বিশ্ব অর্থনীতি কোন পথে হাঁটবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments