Monday, April 14, 2025
Google search engine
Homeচাকরির খবরঅগ্নিমূল্য ওষুধ,দুর্গাপুরে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের মিছিল

অগ্নিমূল্য ওষুধ,দুর্গাপুরে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের মিছিল

Trinamool student organization marches in Durgapur against expensive medicines : দুর্গাপুর শহরের আকাশ ভেঙে যেন নেমে এসেছে অসহায়তা, যখন চিকিৎসার একমাত্র ভরসা জীবনদায়ী ওষুধের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, তখন সাধারণ মানুষের কাঁধে যেন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এক অপার যন্ত্রণা। এমনই এক সংকটময় পরিস্থিতিতে, দুর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আর চুপ করে থাকতে পারেননি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে কলেজ চত্বর থেকে শুরু করে শহরের ব্যস্ত অমরাবতী মোড় পর্যন্ত এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হলো, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে অগ্নিমূল্য ওষুধের দাম কমানোর দাবি তোলা। এই প্রতিবাদ ছিল শুধু রাজনৈতিক নয়, ছিল মানুষের প্রাণ বাঁচানোর এক প্রয়াস, এক জ্বলন্ত চেতনা, যে চেতনা আজ শহরের গলি গলি ছড়িয়ে পড়ছে।

দুর্গাপুর সরকারি কলেজের গেট থেকে বেলা ১২টা নাগাদ শুরু হয় মিছিল, হাতে পোস্টার, মুখে স্লোগান— “ওষুধের দাম কমাও, গরিবের প্রাণ বাঁচাও।” সাদা পাঞ্জাবি আর তৃণমূলের পতাকা হাতে ছাত্রদের সেই মিছিল যেন শহরের নীরবতাকে মুহূর্তেই ভেঙে দেয়। তারা অমরাবতী মোড় পর্যন্ত গিয়ে পথচলতি সাধারণ মানুষকেও নিজের দাবির পাশে টেনে আনেন। অনেকেই দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন, পাশে দাঁড়ান এই প্রতিবাদে। মিছিলে অংশগ্রহণকারী কলেজের ছাত্রী পূজা সেন বলেন, “আমার বাবা ক্যান্সারের রোগী, মাসে যেই ওষুধটা ৫০০ টাকায় আসতো, এখন তার দাম ১৫০০ ছাড়িয়ে গেছে, কিভাবে চলবে বলুন?”

images?q=tbn:ANd9GcT 7xBkwdsKIBs On6DUN2UZK4cyf3e1mvBEd75S1ZMvJ7zGKlujG8LkUy 7e3CE6x3w g&usqp=CAU

এই কথাগুলো শোনার পর বোঝা যায় প্রতিবাদটা কতটা বাস্তব আর কতটা জরুরি। শুধু পূজা নয়, এমন অসংখ্য মানুষ আজ এই মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক শুভ জ্যোতি মজুমদার, যিনি বলেন, “এই কেন্দ্রীয় সরকার থাকা অবস্থায় একটা একটা করে সব জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে, আর এখন সেই আগুন ছুঁয়েছে জীবনদায়ী ওষুধকে, যা কিনা সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়। ক্যান্সার, কিডনি, ডায়াবেটিসের মতো রোগের ওষুধের দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে বহু মানুষ চিকিৎসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এই দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী একমাত্র কেন্দ্র, তাই আমাদের এই প্রতিবাদ।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে National Pharmaceutical Pricing Authority (NPPA)-র অধীনে থাকা বহু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের দাম ২০২৪ সালের শেষদিকে হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। যেমন ইনসুলিন, ব্লাড প্রেসার, থাইরয়েড ও ক্যান্সারের বহু ওষুধ ১০-১৫% পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এটা এমন একটা সময়ে হয়েছে যখন সাধারণ মানুষের উপার্জন আগের মতোই রয়ে গেছে অথচ দৈনন্দিন খরচ বেড়েছে বহুগুণে। এমন প্রেক্ষাপটে এই ওষুধের দাম বৃদ্ধিকে অনেকেই ‘মৃত্যুর দাম’ বলেও অভিহিত করছেন।

মিছিল শেষ হলে কলেজ প্রাঙ্গণে এক সংক্ষিপ্ত সভা হয় যেখানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সোমনাথ দত্ত বলেন, “যখন মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার খর্ব হয়, তখন ছাত্রসমাজ আর চুপ করে থাকতে পারে না। এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব, আমাদের লড়াই শুধু ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য।”

এই প্রতিবাদের প্রভাব এখন দুর্গাপুর ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। কলকাতা, শিলিগুড়ি, বর্ধমানের ছাত্রছাত্রীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে বলছেন, এই মিছিল শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, এটি এক মানবিক আন্দোলন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে বৃদ্ধা মহিলারা হাতে হাত রেখে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং বলছেন, “এরা আমাদের সন্তান, এদের পাশে না দাঁড়ালে আমরা আর বাঁচব না।”

এদিকে স্থানীয় দোকানদার, ফার্মাসিস্ট এবং চিকিৎসকরাও এই ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন। দুর্গাপুরের এক নামী ফার্মাসিস্ট অরূপ বাউরি বলেন, “আগে যেই ওষুধ মানুষ রেগুলার কিনতো, এখন সেই ওষুধ কিনতে আসছে মাসে একবার বা বিকল্প খুঁজছে। অনেকেই বলছেন চিকিৎসা ছেড়ে দেবেন। এটা খুবই চিন্তার বিষয়।”

এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের তরফে এখনও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া না মিললেও, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে জানানো হয়েছে যে তাঁরা আগামী দিনে ওষুধের দাম কমানো নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন, এবং এই ইস্যুতে রাজ্যজুড়ে মিছিল এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি নেওয়া হবে।

ভবিষ্যতের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি যে ভয়ঙ্কর সংকটের জন্ম দিতে পারে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত মানুষ যদি নিজের চিকিৎসা বন্ধ করে দেন তাহলে স্বাস্থ্যপরিসেবা ব্যবস্থার উপরে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি, এই ধরণের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের মধ্যে সরকার বিরোধী মনোভাবকে তীব্র করে তুলছে, যার রাজনৈতিক প্রভাবও আগামী দিনে দৃশ্যমান হতে পারে।

এই প্রতিবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজের যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আগে রাস্তায় নামে ছাত্রসমাজ। তাদের এই পদক্ষেপ যেমন মানবিক, তেমনি রাজনৈতিক সচেতনতার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মিছিল ছিল এক বাঁচার আর্তি, এক প্রতিবাদের চিৎকার, যে চিৎকারে যুক্ত হয়েছে হাজারো অসহায় মানুষের নিঃশব্দ কান্না।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments