Wednesday, May 21, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গদুর্গাপুরদুর্গাপুরে সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পদযাত্রা

দুর্গাপুরে সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পদযাত্রা

Trinamool student march in Durgapur to pay respect to politics ; দুর্গাপুর শহর বুধবার দুপুরে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের সাক্ষী রইল—জাতীয় পতাকা হাতে দেশপ্রেমে উদ্বেল একঝাঁক তরুণ-তরুণীর পদযাত্রা। ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দুর্গাপুর গভমেন্ট কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে আয়োজিত হল এক বিশেষ পদযাত্রা, যা শুধু একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি ছিল না, ছিল এক প্রাণবন্ত বার্তা—“আমরা তোমাদের পাশে আছি, জওয়ান!” কলেজ চত্বরে দুপুর ১২টা নাগাদ শুরু হওয়া এই পদযাত্রা ধীরে ধীরে গন্তব্যে পৌঁছায় বি-ওয়ান মোড় ঘুরে ফের কলেজে ফিরে এসে শেষ হয়। প্রায় শতাধিক ছাত্রছাত্রী এতে অংশ নেন, হাতে হাতে জাতীয় পতাকা, মুখে দেশাত্মবোধক স্লোগান আর চোখে এক গভীর আবেগ—এই দৃশ্য যেন ক্ষণিকের জন্য হলেও দুর্গাপুরের রাস্তাঘাটকে করে তুলেছিল এক ‘মিনি ইন্ডিয়া’।

এই পদযাত্রার নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরুণ নেতা শুভ্রজিৎ মজুমদার। তিনি বলেন, “ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সীমান্তে আমাদের নিরাপত্তা রক্ষায় ওঁদের যে আত্মত্যাগ, তা কোনো শব্দে প্রকাশ করা যায় না। তাই আমরা জাতীয় পতাকা নিয়ে তাঁদের উদ্দেশে এক শ্রদ্ধার বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছি।” শুভ্রজিতের এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক শোভা নয়, বরং ছাত্রসমাজের এক বৃহৎ অংশের মনের কথা। তাঁর কথায় আরও উঠে আসে, “ছাত্ররা যদি আজ থেকেই দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ না হয়, তাহলে আগামীর ভারত গড়া সম্ভব নয়।”

এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুরের কলেজপাড়ায় একটা আলাদা আবেগ ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ, পথচলতি গাড়িচালক, দোকানদার থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। অনেকেই জাতীয় পতাকা নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে একাত্ম হন। স্থানীয় এক প্রবীণ শিক্ষক আশিস দত্ত বলেন, “এখনকার সময়ে যেখানে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলি প্রায়শই নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করে, সেখানে সেনাবাহিনীর জন্য এমন একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সত্যিই প্রশংসনীয়।” অনেকেই মোবাইল ক্যামেরায় এই দৃশ্য বন্দি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। ইতিমধ্যেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করতে শুরু করেছে।

এই পদযাত্রা শুধুই প্রতীকী নয়, এর গভীরে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। বর্তমান সময়ে যখন সেনাবাহিনী নানা ধরনের রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে, তখন এই ধরনের কর্মসূচি মানুষকে মনে করিয়ে দেয়—সেনা শুধু এক অস্ত্রধারী বাহিনী নয়, তারা জাতির রক্ষাকর্তা। তারা যখন সীমান্তে প্রহরা দেয়, তখন আমরা নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিই, কাজ করি, উৎসব পালন করি। আর সেই শান্তির জন্য এই প্রজন্মের তরুণদের শ্রদ্ধা প্রকাশ যেন দেশের ভবিষ্যৎকে আরও সুরক্ষিত করে।

এই প্রসঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আরেক সদস্য প্রিয়াংশু ঘোষ বলেন, “আমরা শুধু পতাকা নিয়ে হাঁটি নি, আমরা সবাই মিলে সেনাবাহিনীর আত্মত্যাগ সম্পর্কে কলেজে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনাও করি। ভবিষ্যতে আমরা শহীদ জওয়ানদের নাম করে বৃক্ষরোপণ এবং ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প করার পরিকল্পনাও নিচ্ছি।” এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে, এটি এক দিনের কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আগামীদিনেও তারা সেনাবাহিনীকে সম্মান জানানোর এই প্রচেষ্টাকে চালিয়ে যেতে চায়।

এছাড়া এই পদযাত্রা দুর্গাপুরের তরুণ সমাজকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। সাধারণত রাজনীতি নিয়ে ছাত্রসমাজের মধ্যে নানা ধরনের দ্বিধা, বিতর্ক থাকে, কিন্তু এই ধরনের দেশপ্রেম-ভিত্তিক উদ্যোগ তাদের একত্রিত করেছে। অনেক কলেজ ছাত্র-ছাত্রী জানিয়েছেন, “এই প্রথম রাজনীতিকে আমরা শ্রদ্ধা করতে শিখলাম, কারণ এটা শুধুই রাজনীতি নয়, এটা দেশের স্বার্থে এক আবেগ।”

deccanherald%2Fimport%2Fsites%2Fdh%2Ffiles%2Farticle images%2F2019%2F05%2F06%2Ffile6zibuo94aw7i49wwgil 1557083194

অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলিও এই কর্মসূচিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। যদিও কোনো বিরোধিতা সামনে আসেনি, তবে অনেকেই বলছেন, এই ধরনের উদ্যোগ যেন সব ছাত্র সংগঠন নেয়। কারণ সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনীতির লড়াই নয়, বরং শ্রদ্ধা এবং ঐক্যের বার্তা দেওয়া জরুরি।

পদযাত্রা শেষে কলেজ চত্বরে আয়োজিত হয় ছোট একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও, যেখানে গান, কবিতা, ও দেশাত্মবোধক নাটকের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সাহস ও আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এক কবিতা পাঠে এক ছাত্রী স্নেহা মল্লিক বলেন, “আমাদের সৈনিকরা যখন কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়ে থাকেন বরফঢাকা গ্লেসিয়ারে, তখন আমরা কম্বল গায়ে বসে সিনেমা দেখি। আমরা কি একটিবার তাঁদের কথা ভাবি না?” এই প্রশ্ন যেন মুহূর্তে নীরব করে দেয় উপস্থিত সবাইকে।

উল্লেখ্য, দুর্গাপুরে সাম্প্রতিককালে এই ধরনের দেশপ্রেম-ভিত্তিক কর্মসূচি খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু এই পদযাত্রা নতুন এক ধারা তৈরি করেছে, যেখানে ছাত্ররাজনীতি কেবল দলীয় প্রচার নয়, বরং সামাজিক দায়িত্ব ও জাতীয় সচেতনতাও বয়ে নিয়ে আসতে পারে। ভবিষ্যতে এই কর্মসূচি হয়তো রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও উদাহরণ হয়ে উঠবে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, দুর্গাপুরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই ‘সেনাবাহিনী শ্রদ্ধা পদযাত্রা’ শুধুই একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি ছিল এক সমাজচেতনার আবেগঘন, গভীর অর্থবহ প্রয়াস। যেখানে ছাত্ররা বুঝিয়ে দিল, কেবল মিছিলে নয়, মনের ভেতরেও থাকতে পারে পতাকা—দেশপ্রেমের পতাকা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments