Trinamool splits with BJP in Bijpur:ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনীতিতে ফের ঝড় তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক পালাবদলের এক নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী থাকল আজকের বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্র। মঙ্গলদীপ ভবনে আজ বিজেপির শতাধিক কর্মী ও সমর্থক হাত ধরলেন তৃণমূল কংগ্রেসের, আর এই যোগদানের প্রধান কান্ডারী বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী। উপস্থিত ছিলেন হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান শুভঙ্কর ঘোষ, তৃণমূলের হালিশহর টাউন সভাপতি প্রবীর সরকার, ওয়ার্ড নম্বর ১০-এর শক্তিকেন্দ্রের বহু বিজেপি নেতা-কর্মী এবং তৃণমূলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
যাঁরা এতদিন বিজেপির পতাকা ধরে রাজনীতির ময়দানে লড়াই করছিলেন, তাঁরা এদিন এককাট্টা হয়ে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজই আমাদের মুগ্ধ করেছে। মানুষ তাঁর পাশে আছে। বিজেপির ঘরে এখন মতভেদ, বিভ্রান্তি আর কোনো সংগঠনিক কাঠামো নেই।” এই কথা বলেই বিজেপির জার্সি খুলে একে একে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন তাঁরা। সুবোধ অধিকারীর বক্তব্যে ছিল আত্মবিশ্বাস— “এটা শুরু মাত্র। যারা উন্নয়নের রাজনীতি চায়, তারা একে একে তৃণমূলেই আসবে। বিজেপি এবার নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। বীজপুরে বিজেপির মাটি সরে যাচ্ছে।”
হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান শুভঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় উন্নয়নের জোয়ার চলছে। বিজেপি শুধু দাঙ্গা আর বিভাজনের রাজনীতি করে। মানুষ এখন উন্নয়ন চায়, কাজ চায়, শান্তি চায় — সেই কারণেই মানুষ আবার তৃণমূলকেই ফিরছে।”
এদিনের যোগদান পর্ব ছিল একপ্রকার রাজনীতির দৃশ্যপট বদলের প্রতীক। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত বীজপুরেই যখন এভাবে একের পর এক কর্মী দলত্যাগ করছেন, তখন তা নিঃসন্দেহে বিজেপির চিন্তার কারণ। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বেশ কিছু দিন ধরেই বীজপুরে বিজেপির অন্দরে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হচ্ছিল। কিছু কর্মী-সমর্থক দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠনের কাজকর্ম নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে— রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, স্থানীয় স্তরে নেতৃত্বের অভাব, আর নানা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ কর্মীরা।
হালিশহরের বাসিন্দা ও প্রাক্তন বিজেপি কর্মী নীলাদ্রি ঘোষ বলেন, “আমি এতদিন বিজেপির হয়ে কাজ করলেও, এখন মনে হচ্ছে আমরা ভুল জায়গায় ছিলাম। বিজেপিতে থাকলে মানুষের কোনো কাজ করে ওঠা যায় না। তৃণমূলে এসে বুঝছি সংগঠন বলতে কী, নেতৃত্ব বলতে কী, আর উন্নয়ন কাকে বলে।” তাঁর মতোই বহু জনসভায় দেখা গেল আবেগঘন মন্তব্য— “মমতা দিদি মানুষের মুখের ভাষা বোঝেন, কাজ করতে জানেন, সেই জন্যই আমরা দিদির দলে এসেছি।”
এই রাজনৈতিক পালাবদলের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরণের প্রবল যোগদান ভবিষ্যতে বীজপুরের নির্বাচনী ছবিটাই বদলে দিতে পারে। বিশেষ করে আগামী পুরসভা নির্বাচন ও বিধানসভা উপনির্বাচনের মতো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন ভাঙন বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।
বিজেপির তরফে অবশ্য এখনো পর্যন্ত কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া মেলেনি। দলের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবস্থায় জানিয়েছেন, “কয়েকজন সুবিধাবাদী কর্মী দল ছেড়েছেন, এতে বিজেপির কিছু যাবে আসবে না। আমরা সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ করছি। খুব শীঘ্রই আমরা কনভেনশন করে সমস্ত কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করব।”
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের দলবদল একদিকে যেমন তৃণমূলের জন্য মনোবল বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে বিজেপির জন্য মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এমনিতেই রাজনৈতিক দিক থেকে স্পর্শকাতর অঞ্চল, যেখানে নানা সময় রাজনীতিক অশান্তি, দলবদল ও সংঘর্ষ হয়ে এসেছে। সেই এলাকাতেই আবারও যদি তৃণমূলের দিকে ঢল নামে, তাহলে তার প্রভাব নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে পড়বে।
তৃণমূলের নেতা প্রবীর সরকার বলেন, “এই যোগদান প্রমাণ করে, মানুষ আর বিভ্রান্ত নয়। ওরা বুঝে গেছে কে মানুষের পাশে দাঁড়ায় আর কে শুধু ফেসবুকে রাজনীতি করে। আগামী দিনগুলোতে আপনি আরও বড়ো সারপ্রাইজ দেখতে পাবেন।”
তবে স্থানীয় মানুষজনের একাংশ বলছেন, শুধু দলবদল করলেই হবে না, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। হালিশহরের এক ব্যবসায়ী বললেন, “যতই লোকজন আসুক না কেন, যদি কাজ না হয়, পরিষেবা না মেলে, তাহলে মানুষের রায় অন্য রকম হতে পারে। সবাই এখন সজাগ।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, বীজপুরে এই ‘ভাঙন’ রাজনীতির মাঠে নতুন উত্তাপ ছড়ালো। আগামী দিনে এই প্রবণতা চলতে থাকলে, বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্র এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের দিকে এগিয়ে যাবে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। এখন দেখার, বিজেপি কিভাবে এই আঘাত সামাল দেয় এবং পুনরায় নিজের ঘর গুছিয়ে তোলে।