Trinamool panchayat member accused of smuggling trees:পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রামচক গ্রামে সম্প্রতি ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যেখানে গাছ পাচারের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে চিত্ত পন্ডিত নামে এই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে, যিনি নাকি নিজের ইচ্ছায় গাছ কেটে বিক্রি করেছেন এবং সেই অর্থ নিজের কাজে ব্যবহার করেছেন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই পুরো গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন এবং প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।
বেশ কিছুদিন আগে থেকেই লক্ষ্মীপুর গ্রামে গোষ্ঠী কোন্দল চলছিল। গ্রামে শাসক দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও আধিপত্যের লড়াইয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারই মধ্যে গাছ পাচারের এই অভিযোগ নতুন করে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রামচক গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বড় বড় গাছগুলি দাঁড়িয়ে ছিল, যেগুলি শুধুমাত্র গ্রামবাসীদের নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতেরও সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হত। গ্রামবাসীদের দাবি, পঞ্চায়েতের সম্মতি ছাড়াই গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে, এবং প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো খোঁজখবরও রাখেনি।
এই বিষয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রসেনজিৎ মালি একটি বাইটে বলেছেন, “পঞ্চায়েতকে অবগত না করেই চিত্ত পন্ডিত নিজের ইচ্ছায় এই কাজ করেছেন। অনুমতি করিয়ে নিজের ইচ্ছাকৃত কাজ করেছে বলে দাবি করেন শাসক দলের উপপ্রধান।” প্রসেনজিৎ মালের এই বক্তব্যের পরই গ্রামবাসীদের মধ্যে আরো বেশি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন উঠছে, যদি পঞ্চায়েতের অনুমতি না থাকে, তবে কীভাবে গাছগুলো কাটা হল? গ্রামবাসীরা দাবি করছেন, এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনেরও অবহেলা রয়েছে। কারণ এতো বড় একটি ঘটনা ঘটে গেলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পঞ্চায়েত সদস্য চিত্ত পন্ডিত সম্পূর্ণ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি কোনো গাছ কাটিনি, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে, তারা আমার রাজনৈতিক ক্ষতি করতে চাইছে।” তবে, তার এই বক্তব্যে গ্রামবাসীরা মোটেই সন্তুষ্ট নন। অনেকেরই মত, চিত্ত পন্ডিত নিজের ক্ষমতা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে এমন কাজ করেছেন, যা অন্য কেউ করলে হয়তো তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হত।
এই ঘটনার ফলে গ্রামের পরিবেশে একটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গ্রামবাসীরা প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন তুলছেন, যদি পঞ্চায়েতের সম্মতি ছাড়া এই ঘটনা ঘটে থাকে, তবে প্রশাসন কোনভাবেই তা জানলো না? আর যদি প্রশাসন জানত, তবে কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? স্থানীয়দের মতে, এভাবে যদি গাছ কাটা ও পাচার অব্যাহত থাকে, তবে গ্রামবাসীদের ন্যায্য সম্পদ রক্ষা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। অনেকেই এ বিষয়টিকে প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হিসেবেও দেখছেন। গাছগুলো গ্রামের আবহাওয়া ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। সেই গাছগুলো এখন চলে যাওয়ায় গ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামীণ এলাকায় গাছ কেটে ফেলার ফলে বায়ুদূষণ বাড়ে এবং মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পরিবেশগত প্রভাবও অত্যন্ত গুরুতর হতে পারে। গ্রামবাসীদের অনেকেই বলছেন, গাছ কেটে বিক্রি করে কেউ ব্যক্তি স্বার্থে লিপ্ত হতে পারে না। গ্রামের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য যে সমস্ত গাছ রাখা হয়েছিল, সেগুলি এভাবে কেটে বিক্রি করাটা গ্রামের উন্নয়ন ও পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ।
এই ঘটনার পর থেকে চন্দ্রকোনার অন্য গ্রামগুলির বাসিন্দারাও তাদের গাছগুলো নিয়ে চিন্তিত। কারণ গ্রামবাসীদের সন্দেহ, যদি এভাবে নির্বিচারে গাছ কাটার ঘটনা ঘটে, তবে আগামী দিনে অন্য গ্রামগুলিতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে চন্দ্রকোনা অঞ্চলে গাছ কাটা ও পাচারের বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
পরিশেষে, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করছেন স্থানীয়রা। প্রশাসন যদি সঠিকভাবে পদক্ষেপ না নেয়, তবে গ্রামের পরিবেশ ও সম্পদের প্রতি সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে এবং জনগণের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি বিশ্বাস কমে যাবে। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, এই ধরনের গোষ্ঠী কোন্দল ও রাজনৈতিক স্বার্থের লড়াইয়ে গ্রামের প্রকৃতি, পরিবেশ ও সাধারণ মানুষের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে।