Trinamool factional conflict exposed with Abhishek s inauguration:তৃণমূলের একচ্ছত্র গড় হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র, যেখানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংগঠনিক দাপট এবং প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত, সেই এলাকাতেই এবার প্রকাশ্যে এল দলের অন্দরমহলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব—যা নিয়ে ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে এবং প্রশ্ন উঠছে দলীয় শৃঙ্খলা, জনপ্রতিনিধিত্ব ও স্থানীয় উন্নয়নের স্বচ্ছতা নিয়ে। সাতগাছিয়া বিধানসভার অন্তর্গত চণ্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতে এই দ্বন্দ্ব এমনভাবে প্রকাশ্যে এসেছে যে তৃণমূলের “অভেদ্য দুর্গ” ইমেজটিই যেন চ্যালেঞ্জের মুখে, যেখানে পঞ্চায়েত প্রধান শুভ্র ঘোষ এবং উপপ্রধান হাবিবা বিবি-র গোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং সেই দ্বন্দ্ব রীতিমতো মঞ্চে রূপ নিয়েছে জেনারেল মিটিং বয়কটের মধ্য দিয়ে।

অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান শুভ্র ঘোষ, যার বিরুদ্ধে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সদস্যদের অন্ধকারে রেখে বাজেট খরচের পরিকল্পনা তৈরি, প্রকল্প বরাদ্দের স্বচ্ছতা না রাখা এবং একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন অন্তত ১৫ জন সদস্য, যারা এদিন জেনারেল মিটিং শুরু হতেই তা বয়কট করে বেরিয়ে আসেন এবং স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতের সমস্ত মিটিংতেও অংশগ্রহণ করবেন না তারা। মিটিং বয়কটকারী এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, “প্রধান আমাদের কিছু জানায় না, কাজের কোনো হিসেব নেই, কোথায় টাকা খরচ হচ্ছে কেউ জানে না, শুধু নিজের লোকদের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। আমরা চাই স্বচ্ছতা আর পরামর্শের ভিত্তিতে চলুক পঞ্চায়েত।” অপরদিকে প্রধান শুভ্র ঘোষ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এই অভিযোগ ভিত্তিহীন, কাজ করতে গেলে একটু দ্বিমত তো হবেই। আমি সব নিয়ম মেনেই কাজ করছি, কিছু লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে।
” এই ঘটনার জেরে চণ্ডী পঞ্চায়েত এলাকার সাধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন, কারণ এই ধরনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উন্নয়ন কার্যত থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “রাজনীতির গন্ডগোলে আমরা পড়ে যাচ্ছি, রাস্তাঘাট, নিকাশি, পানীয় জল কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না, এখন শুনছি নেতা-নেত্রীরা নিজেদের মধ্যেই ঝামেলায় ব্যস্ত।” এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলগুলিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখর হয়েছে। বিজেপির জেলা নেতা অরূপ ঘোষ বলেন, “এটাই হচ্ছে তৃণমূলের আসল চেহারা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর দুর্নীতির পকেট তৈরি করাই এদের কাজ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের এলাকাতেই যদি এমন হয়, তাহলে রাজ্যের বাকি অংশে কী হচ্ছে বলাই বাহুল্য।” সিপিএমের স্থানীয় নেতা তুষার মণ্ডল মন্তব্য করেন, “তৃণমূলের মধ্যে গণতন্ত্রের কোনও চিহ্ন নেই। প্রধানরা এককভাবে ক্ষমতা চালাচ্ছেন, সাধারণ সদস্যদের কোনও মূল্য নেই। এটা নতুন কিছু নয়, কিন্তু এবার এটা জনসমক্ষে এসেছে।” তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে পৌঁছয়, তাহলে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি উদ্যোগী হবেন, কারণ দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় তিনি বরাবরই সক্রিয়।

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই দ্বন্দ্ব কি কেবল মাত্র চণ্ডী পঞ্চায়েত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ, নাকি বৃহত্তর কোনও সাংগঠনিক সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে? স্থানীয় স্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেকদিন ধরেই তৃণমূলের জন্য মাথাব্যথার কারণ, কিন্তু এবার তা যদি অভিষেকের খাসতালুকেই রূপ নেয়, তাহলে তা রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট অস্বস্তিকর হতে পারে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য। সাধারণ মানুষের ভাষায় বললে, “নেতারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, আর আমাদের সমস্যার কথা শোনার কেউ নেই।” এমন পরিস্থিতিতে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার, স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয় এবং দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে স্বচ্ছ তদন্তই হতে পারে একমাত্র পথ। না হলে ভোটের আগে এই ধরনের বার্তা জনমানসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং বিরোধীরা এই সুযোগে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে। শেষমেশ রাজনীতির এই টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে থেকে যায় এলাকার সাধারণ মানুষ, যারা চায় একটু উন্নয়ন, একটু পরিষেবা, একটু সম্মান—সেটুকু না পেলে যে তারা রাজনৈতিকভাবে বেসুরো হতে পারে, তার ইঙ্গিতও মিলছে জনতার মুখ থেকে।