Trinamool Congress factional conflict continues in Birbhum: বীরভূমের রাজনীতির মঞ্চে ফের একবার নতুন করে উথালপাথাল শুরু হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে। অনুব্রত মণ্ডল বনাম কাজল শেখ — এই দুই শিবিরের লড়াই যেন থামতেই চাইছে না। এবার নতুন করে শোরগোল শুরু হয়েছে নানুরের সিঙ্গী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। শুক্রবার রাতে ঘটে যাওয়া এক উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার পর পুরো এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির মেম্বার হীরা মন্ডলকে নির্মমভাবে মারধর করেছে কাজল শেখ ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতারা। হীরা মন্ডলের অভিযোগ, বোলপুরে দলের একটি মিটিং সেরে বাড়ি ফেরার সময়, তার গাড়ি থামিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। তাঁর কথায়, “আমি বোলপুর থেকে মিটিং শেষ করে ফিরছিলাম, হঠাৎ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে স্বপন, আপেল মল্লিক এবং আরও কয়েকজন আমাকে মাটিতে ফেলে মেরে পা আর হাত ভেঙে দেয়। শুধু তাই নয়, আমাকে শাসানো হয় যে, অনুব্রত মণ্ডলের পাশে থাকলে এরকম আরও হবে।”
হীরা মন্ডলের ছেলে শেখ ইফতেখার আলম বলছেন, “আমার বাবার কোনো দোষ নেই। তিনি শুধু অনুব্রত মণ্ডল সাহেবের অনুগামী, তাই এই আক্রমণ। আমাদের পরিবার খুব ভয়ে আছে, পুলিশে অভিযোগ করলেও কেউ কিছু করছে না। আমরা সুবিচার চাই।”অন্যদিকে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, “এগুলো পুরোটাই গ্রাম্য বিবাদ। অনুব্রত বা কাজল শেখের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের দলের নাম টেনে এসব করা ঠিক নয়।” তবুও গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে একটাই কথা, কাজল শেখ বনাম অনুব্রত মণ্ডলের সংঘর্ষ এখন আর রাজনৈতিক লড়াই নয়, এটি ব্যক্তিগত শত্রুতার রূপ নিয়েছে।
এই ঘটনার জেরে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মানুষ আতঙ্কিত, বিশেষ করে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ কর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “সিঙ্গী গ্রামের রাস্তা এখন ফাঁকা। সবাই ভয়ে আছে। রাতে কেউ বেরোতে চাইছে না। আমরা চাই পুলিশ তদন্ত করুক, দোষীদের শাস্তি হোক। কিন্তু এখানে তো পুলিশও কাজল শেখের দলের হয়ে গেছে!”রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বীরভূমে তৃণমূলের এই গোষ্ঠী কোন্দল নতুন নয়। অনুব্রত মণ্ডল ছিলেন তৃণমূলের শক্তিশালী নেতা, তাঁর অনুগামীরা এখনো তাঁর ছায়ায় থাকতে চায়। অন্যদিকে, কাজল শেখের উত্থানকে ঘিরে অনেকের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কাজল শেখের ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে বীরভূমে নতুন দিশা আসবে। অনুব্রতের সমর্থকরা কিন্তু মানতে নারাজ। এই টানাপোড়েনের মাঝে তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে।
বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা ঠিক নয়। আমরা শীঘ্রই বৈঠক ডাকব, এবং এই সমস্যার সমাধান খুঁজব। আমাদের দল এক এবং অটুট। কিছু লোক আছে যারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।”এই কোন্দলের রাজনৈতিক প্রভাবও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বীরভূমের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় দলের মধ্যে এমন বিভাজন শাসক দলের জন্য বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই এই কোন্দল নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। বিজেপি নেতা শ্যামল ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের এই গোষ্ঠী কোন্দল আসলে তাদের দলে শৃঙ্খলার অভাবকে স্পষ্ট করে। মানুষ বুঝছে, তৃণমূল এক গোষ্ঠীর নয়, একচেটিয়া ক্ষমতার দল।”
গ্রামের মানুষের চোখে এখন একটাই প্রশ্ন, এই সংঘর্ষের শেষ কোথায়? হীরা মন্ডলের মতো কর্মীরা আর কতবার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার হবেন? সিঙ্গী গ্রামের এক বয়স্ক ব্যক্তি বললেন, “আগে আমরা ভাবতাম, তৃণমূল আমাদের সব সমস্যার সমাধান করবে। এখন দেখি, তৃণমূলের হাতেই আমরা মার খাচ্ছি। আমাদের গ্রাম তো রণক্ষেত্র হয়ে গেল।”পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার পর পুলিশ এলেও কাউকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ নিরপেক্ষ নয়। যদিও বীরভূম জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
সব মিলিয়ে বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, তা জেলা তো বটেই, রাজ্য রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্কিত, নেতাদের দোষারোপের রাজনীতিতে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কে থাকবেন ক্ষমতায়, কে হবেন গোষ্ঠীর মাথা—সেসব বড় কথা নয়, মানুষ চায় শান্তি, নিরাপত্তা। কিন্তু এই দুই নেতার লড়াই শেষ না হলে সেই শান্তি কি আসবে? প্রশ্নটা এখন বীরভূমের আকাশে ভাসছে।