Tribute and song salute to martyred jawan in Kishtwar clash: কিশতওয়ারের পাহাড়ি উপত্যকা, যেখানে চারদিকে ঘন জঙ্গল, তার বুকেই যেন লেখা হল এক সাহসিকতার গল্প – এক ভারতীয় সেনার আত্মবলিদানের গল্প, এক মায়ের বুক খালি হয়ে যাওয়ার গল্প, এক গোটা গ্রামের চোখে জল আনার মতো ঘটনা। জম্মুর কিশতওয়ারের ছত্রু এলাকার সিংপোরা অঞ্চলে চলমান সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে শহিদ হলেন ভারতীয় সেনার সেপাহী গায়কার সন্দীপ পাণ্ডুরঙ্গ। সেই শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার আয়োজিত হল পুষ্পাঞ্জলি ও গান স্যালুটের অনুষ্ঠান – জম্মুতে সেনাঘাঁটির প্রাঙ্গণ যেন মুহূর্তে নীরব হয়ে গিয়েছিল, শুধুই বাজছিল বন্দুকের গর্জন, সেই গর্জনে মিশে ছিল কৃতজ্ঞতা, সম্মান আর অশ্রুজল। ২২ মে সকাল থেকে এই অভিযান শুরু হয়, যখন নিরাপত্তা বাহিনী গোপন সূত্রে জানতে পারে যে কিশতওয়ারের ওই দুর্গম এলাকায় কয়েকজন সন্ত্রাসবাদী গোপনে লুকিয়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয় ‘White Knight Corps’ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের একটি যৌথ দল। ছত্রু এলাকায় শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। সকালবেলা সেনা ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে শুরু হয় প্রবল গুলির লড়াই – সেই লড়াইয়ে গুরুতর আহত হন সেপাহী সন্দীপ। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে নিকটবর্তী সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ভারত হারায় তার আরেক সাহসী সন্তানকে, যার বয়স মাত্র ৩০ বছর। সেনার তরফে অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানানো হয়, “চলমান অভিযানে এক কঠিন গুলিযুদ্ধে আমাদের এক বীর সেনা গুরুতর আহত হন এবং চিকিৎসার পরেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
তাঁর আত্মত্যাগ দেশের প্রতি চরম দায়বদ্ধতার নিদর্শন।” সন্দীপের মৃত্যুতে শুধু সেনা নয়, কেঁদে উঠেছে গোটা দেশ। কিশতওয়ার, যা একসময় শান্ত ও ঘন সবুজ অঞ্চলের জন্য পরিচিত ছিল, গত কয়েক বছর ধরে ফের সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ছত্রু, ডাচন, পদার, বদ্রাগড়, চিঙ্গাম – এই সব এলাকা সেনার দৃষ্টিতে ‘হাই রিস্ক জোন’। খবরে প্রকাশ, এই অভিযান এখনো চলমান, গোটা এলাকাকে ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি, তবে সেনার অনুমান, ৩-৪ জন পাকিস্তানি মদতপুষ্ট জঙ্গি এই সংঘর্ষে যুক্ত রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় ভাষায় কথা বলেছে বলে জানা গেছে। সন্দীপ পাণ্ডুরঙ্গ মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে এসেছিলেন। শৈশব থেকেই সেনা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর, আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে দিয়েছেন প্রাণ। গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “ছোট থেকেই খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। স্কুলে পড়াকালীনই NCC-তে ছিল। দেশপ্রেমে ভরপুর ছিল ওর মন। আজ আমরা গর্বিত হলেও বুকটা ফেটে যাচ্ছে।” সেনা ক্যাম্পে তাঁর সহকর্মীরা বলেন, “সন্দীপ বরাবরই সাহসী আর দায়িত্ববান ছিল। ওর মৃত্যু আমাদের শোকস্তব্ধ করেছে, কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের নতুন করে লড়ার শক্তিও দিচ্ছে।” জম্মুতে গান স্যালুটের সময় উপস্থিত ছিলেন সেনার উচ্চপদস্থ অফিসাররা, রাজ্য প্রশাসনের প্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ এবং শহিদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁর মরদেহ ত্রিরঙায় মোড়া অবস্থায় আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর মা, ভাই ও স্ত্রী। সেনা অফিসাররা তাঁদের সান্ত্বনা দেন এবং জানান, “শহিদদের পরিবার কখনও একা নয়, গোটা ভারত তাঁদের পাশে আছে।” স্থানীয় মানুষেরাও জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযান যে কিশতওয়ারকে সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য কতটা জরুরি, তা এই ঘটনা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।

একজন স্থানীয় দোকানদার বলেন, “আগে আমরা রাতে নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারতাম। এখন আবার সেই আগের দিন ফিরিয়ে আনতে সেনা প্রাণ দিচ্ছে, আমরা ওদের পাশে আছি।” বর্তমানে কিশতওয়ার জেলায় বেশ কয়েকটি জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনী টহল বাড়িয়েছে। সেনা সূত্রে খবর, অভিযানে যারা যুক্ত তাদের পরিচয় পেতে মোবাইল ট্র্যাকিং, ড্রোন নজরদারি, এবং লোকাল ইন্টেলিজেন্স বাড়ানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের খোঁজে আগামী দিনগুলোতে আরও তল্লাশি চালানো হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিশতওয়ার জেলায় ফের সক্রিয় হয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি, বিশেষ করে পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে অনুপ্রবেশ করে লুকিয়ে পড়ছে ঘন জঙ্গলের ভেতর। এই অবস্থায় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া কিশতওয়ারকে সুরক্ষিত রাখা অসম্ভব। সন্দীপ পাণ্ডুরঙ্গের আত্মবলিদান গোটা দেশকে আরও একবার মনে করিয়ে দিল – সীমান্তে কোনও রাত নেই, কোনও ছুটি নেই। আর সেই নিরন্তর প্রহরায় যে বীরেরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের একজন ছিলেন সেপাহী সন্দীপ। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর গল্প থাকবে, তাঁর সাহস থাকবে, আর সেই সাহস থেকেই জন্ম নেবে নতুন সেনা, নতুন সাহসী সন্তান। তিনি শুধু শহিদ নন, দেশের এক চিরন্তন গর্ব।