Toto’s pain blocks roads for hours, pedestrians in trouble:শান্তিপুরের স্টেশন রোড যেন এখন আর রাস্তা নয়, যেন টোটোর বিশাল এক জটের মেলা! সকাল থেকে রাত—যতক্ষণ ট্রেন চলে, ততক্ষণ যেন টোটোর দাপট, আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। নদীয়ার শান্তিপুর স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় এমন চিত্র নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরেই এ সমস্যা চলে আসছে। প্রতিদিন সকালে যখন স্টেশনে ট্রেন ঢোকে, তখন গেট পড়ে যায়। আর সেই সময়েই রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য টোটো। যেন এক বিশাল যানজটের তৈরি মঞ্চ। সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগী, কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই যন্ত্রণার হাত থেকে। স্টেশনের গেট বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে টোটোগুলোর ঢল নামে, আর রাস্তাটা হয়ে যায় অচল। যার কারণে কেউ যদি স্টেশনের দিক থেকে হসপিটাল যেতে চান, তাহলে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। আবার অনেকে যাঁরা সময়মতো ট্রেন ধরার জন্য বাড়ি থেকে বের হন, স্টেশনের গেটের সামনে এসে এই টোটোর জটে আটকে পড়েন, আর তাঁদের চোখের সামনেই ট্রেন ছেড়ে চলে যায়। এক যাত্রী স্বপ্না দাস বললেন, “প্রতিদিন অফিস যেতে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। কখনো ট্রেন মিস, কখনো আবার বসের বকা খেতে হচ্ছে। এত কষ্ট করে সময়মতো বেরোই, কিন্তু টোটোর ভিড়ে সব সময়ই আটকে যাই।”
অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দা বাপি ঘোষের আক্ষেপ, “আমাদের তো প্রয়োজন মতো হসপিটালে পৌঁছনোই মুশকিল হয়ে গেছে। টোটোওয়ালাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, একেবারে নিজের ইচ্ছেমতো যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে অসুস্থ মানুষদের নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই।”
এই সমস্যা নিয়ে বহুবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বারবার স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে, তবুও কোনো সুরাহা হয়নি। এক বৃদ্ধা বাসিন্দা, সরলা মজুমদার কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে একদিন হসপিটাল যেতে গিয়ে টোটোর জন্য রাস্তায় ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখন বুঝেছিলাম, আমাদের জীবনের কোনো দাম নেই এখানে!”
অন্যদিকে, জেলা তৃণমূলের আইএনটিটিওসি সভাপতি সনৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “আমরা সমস্যাটা জানি। ইতিমধ্যেই টোটো ইউনিয়নের সঙ্গে মিটিং করেছি। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।” তবে ঠিক কবে সমস্যার সমাধান হবে, সে নিয়ে কোনো আশ্বাস মেলেনি।
টোটো চালকেরাও নিজেদের সমস্যার কথা বলছেন। এক টোটোচালক মদন সরকার জানালেন, “আমরাও তো দোষী নই। ট্রেনের সময়ে যাত্রী বেশি হয়, তাই দাঁড়াতে হয়। তবে প্রশাসন যদি একটা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড করে দেয়, তাহলে হয়তো সমস্যার সমাধান হবে।”
এদিকে শহরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, “টোটো স্ট্যান্ড আলাদা করে দিলেই তো সমস্যা মিটে যাবে। স্টেশনের কাছে টোটো না দাঁড়ালে রাস্তাটা ফাঁকা থাকবে, মানুষও চলাফেরা করতে পারবে। প্রশাসন কি সেটা বুঝতে পারছে না?”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। স্টেশনের পাশে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকায় দমকল, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও প্রভাবিত হচ্ছে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ছে। পথচারীরা বলছেন, “কখন কোন অ্যাম্বুলেন্স আটকে যায়, আর কোনো রোগী বিপদে পড়ে, সেটা বোঝা যায় না।”
এই সমস্যা নিয়ে শান্তিপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে প্রশাসনের কাছে সাধারণ মানুষের একটাই আবেদন, “দয়া করে আমাদের এই যন্ত্রণার অবসান করুন।”
টোটোচালকদের সংখ্যা বাড়ার ফলে পরিবেশ দূষণও বাড়ছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত টোটোর কারণে শব্দদূষণ এবং বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণও বেড়েছে। যা শিশু, বৃদ্ধ, এবং শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সাধারণ মানুষের আশা, প্রশাসন খুব দ্রুত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে, টোটোচালকদের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড তৈরি করবে এবং স্টেশনের রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী করে তুলবে। না হলে এই সমস্যার প্রভাব আরও বড় আকার নেবে। সময়ের সাথে সাথে ক্ষোভের আগুন আরও বাড়বে, আর হয়তো একদিন তা বড় কোনো আন্দোলনের রূপও নিতে পারে।