Tonsils? Treat them with home remedies!:-বর্ষা এলেই শরীর নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। কখনও বৃষ্টিতে ভিজে, কখনও অফিসের ঠান্ডা এসি ঘরে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শরীরের উপর তার প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে যারা টনসিলের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য এই সময়টা হয় আরও কষ্টকর। ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে সমস্যা—এসব যেন একসাথে হানা দেয়। আমাদের গলার দু’পাশে জিভের ঠিক পেছনে যে গোল গোল পিণ্ড দুটো থাকে সেগুলোকেই বলা হয় টনসিল। এই টনসিল আসলে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রথম প্রহরী। মুখ, নাক ও গলার মধ্য দিয়ে শরীরে যেন কোনও জীবাণু ঢুকতে না পারে, সে কাজটাই করে এই টনসিল। কিন্তু যখন সংক্রমণ হয় তখন সেই টনসিলই হয়ে ওঠে যন্ত্রণার কারণ। আর ঠিক তখনই প্রয়োজন পড়ে যত্নের—ওষুধ তো আছেই, কিন্তু কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যা অবলম্বন করলে খুব সহজেই টনসিলের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব, তাও একেবারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে।টনসিলের ব্যথা সাধারণত সংক্রমণের কারণেই হয়। এই সংক্রমণ হয় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে। হঠাৎ ঠান্ডা লেগে গেলে বা দূষিত খাবার খাওয়ার পর টনসিল ফুলে যায়, ব্যথা করে, এমনকি অনেক সময় জ্বর, মাথাব্যথা এবং কণ্ঠস্বর বসে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। কলকাতার বিশিষ্ট নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ মুখার্জি জানান, “টনসিল একটি প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। কিন্তু যখন ওটাই সংক্রমিত হয় তখন গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে অসুবিধা, এমনকি নিঃশ্বাস নিতে কষ্টের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলে ওষুধ ছাড়াই আরাম পাওয়া সম্ভব।”

ঘরোয়া কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায়:
১. লেবু-মধু জল:
এক গ্লাস গরম জলে একটা গোটা পাতিলেবুর রস, এক চামচ মধু আর এক চিমটে নুন মিশিয়ে খেলে টনসিলের ব্যথায় আরাম মেলে। দিনে দু’তিনবার এই পানীয় গ্রহণ করলে গলা অনেকটা আরামদায়ক হয়। ২. গ্রিন টি ও মধু: গ্রিন টিতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এক কাপ গরম জলে আধ চামচ গ্রিন টি আর এক চামচ মধু দিয়ে ফুটিয়ে নেওয়া চা দিনে অন্তত তিনবার খেলে টনসিলের সংক্রমণ দ্রুত কমে যায়। ৩. হলুদ-দুধ: হলুদ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্বেদে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে পরিচিত। এক কাপ উষ্ণ গরম দুধে আধ চামচ হলুদ মিশিয়ে রাতে ঘুমোনোর আগে খেলে গলার ব্যথা কমে যায় এবং ঘুমও ভালো হয়। ৪. লবণজল দিয়ে গার্গল:এটা তো বহু পুরনো পদ্ধতি, কিন্তু কার্যকরী। এক গ্লাস হালকা গরম জলে আধ চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে তিনবার গার্গল করলে গলার ফোলা ও ব্যথা দুটোই কমে। ৫. তুলসি পাতার রস: তুলসি পাতা সেদ্ধ করে সেই জল ঠান্ডা করে পান করলে টনসিলের ব্যথায় বেশ উপকার পাওয়া যায়। তুলসি প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণে ভরপুর। ৬. আদা ও মধুর রস:আদা থেঁতো করে তার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে গলার ব্যথা ও খুসখুসে কাশিতে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। দিনে ২-৩ বার এই মিশ্রণ খেলে দ্রুত আরাম মেলে।৭. ভাপ নেওয়া: এক বালতি গরম জলের মধ্যে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল বা পুদিনা তেল ফেলে মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে ভাপ নিলে নাক গলা পরিষ্কার হয়ে যায় এবং টনসিলের ব্যথাও অনেকটা কমে। ৮. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও জল: টনসিলের সংক্রমণ হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর জল পান করতে হবে যাতে শরীর ডিহাইড্রেট না হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি তিন-চার দিনের মধ্যে ঘরোয়া উপায়ে আরাম না মেলে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ টনসিলের সংক্রমণ কখনও কখনও জটিল রূপ নিতে পারে। তখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয় বা ক্ষেত্রবিশেষে টনসিল অপসারণ (Tonsillectomy) করাও বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও অভিজ্ঞতা: হাওড়ার এক গৃহবধূ সোমা ঘোষ জানান, “আমার ছেলে প্রায়শই টনসিলে ভোগে। কিন্তু আমরা ওষুধ না দিয়ে প্রথমেই গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে খাওয়াই, সঙ্গে লবণজল গার্গল করাই। বেশিরভাগ সময়ে এতে কাজ হয়।”

একই কথা বলেন কলকাতার স্কুলশিক্ষিকা শ্রীমতী পায়েল দাস, “টনসিলের ব্যথা হলে গলাটা শুকনো লাগে, কিছু খেতে পারি না। কিন্তু এক কাপ গরম গ্রিন টি আর মধু—এই যুগলবন্দিতে আমি অনেকবার মুক্তি পেয়েছি।” ভবিষ্যৎ ভাবনা:এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি সাধারণ মানুষের মধ্যে যত বেশি ছড়িয়ে পড়বে, ততই ওষুধের উপর নির্ভরতা কমবে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে টনসিলের সমস্যাও দূর হবে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ—সবার ক্ষেত্রেই এই ঘরোয়া টোটকাগুলি কার্যকর। তবে অতিরিক্ত ঝুঁকি না নিয়ে, সমস্যাটা যদি বাড়ে, তবে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি—এটাই সকলের পরামর্শ।