Today is Mahi’s birthday.: আজ ৭ জুলাই। তারিখটা যেন ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয়ে এক আবেগের নাম—আজ মাহির জন্মদিন। মাহি মানেই মহেন্দ্র সিং ধোনি। একজন সাধারণ রাঁচির ছেলে থেকে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ঠান্ডা মাথার অধিনায়ক হয়ে ওঠার এই মানুষটির জন্মদিন মানেই এক বিশাল উদযাপন, এক আবেগের নাম। ১৯৮১ সালের আজকের দিনে বিহারের রাঁচিতে জন্ম নেন মাহি, এক হিন্দু রাজপুত পরিবারে। পরে রাজ্য ভাগ হয়ে যাওয়ার পর সেটি ঝাড়খণ্ড হয়। তার বাবা পান সিং ও মা দেবকী দেবী, দুজনেই উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছেন রাঁচিতে। ছোটবেলা কেটেছে ঝাড়খণ্ডেই, পড়াশোনা করেছেন DAV Jawahar Vidya Mandir স্কুলে। তখনকার দিনে স্বপ্ন ছিল একটাই—একজন ফুটবলার বা ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার হওয়া। কিন্তু ভাগ্যের লিখন ছিল অন্যরকম। রেলওয়েতে টিকিট কালেক্টর হিসেবে নিশ্চিন্ত জীবন কাটানোর পথে হেঁটে চলা মাহির জীবন বদলে গেল যখন তিনি নিজের জীবনকে ক্রিকেটে সমর্পণ করলেন।

ধোনির সেই লম্বা চুল, যা তিনি পছন্দের বলিউড স্টার জন আব্রাহামের অনুকরণে রেখেছিলেন, আজও বহু ভক্তের মনে গেঁথে আছে। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামটা ধোনির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে তার অসাধারণ নেতৃত্বগুণের জন্য। ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে ভারতের প্রথম শিরোপা জয়, ২০১১ সালে বিশ্বকাপে শেষ বলে ছয় মেরে ভারতকে জয় এনে দেওয়া, কিংবা ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়—সবটাই যেন এক একটা অধ্যায় ক্রিকেট ইতিহাসের, যার কেন্দ্রে রয়েছেন মাহি। তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন তিনটি আলাদা আইসিসি ট্রফি—টি-২০ বিশ্বকাপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এমন নজির আর কোনও অধিনায়কের নেই। ধোনি দুইবার আইসিসি বর্ষসেরা ওডিআই ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন—২০০৮ ও ২০০৯ সালে। ২০০৭ সালে পেয়েছেন ‘রাজীব গান্ধী খেলরত্ন’, ২০০৯ সালে ‘পদ্মশ্রী’, এবং ২০১৮ সালে ‘পদ্মভূষণ’। শুধু ক্রিকেট নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গেও তার সংযোগ স্মরণীয়।
২০১১ সালে তাকে দেওয়া হয় লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদমর্যাদা। বহুদিন ধরে তিনি প্রশিক্ষণও নিয়েছেন সেনাবাহিনীতে। মাহির মধ্যে যে কঠোরতা, সংযম, ধৈর্য ও নেতৃত্বগুণ ছিল, তা আজও অনেক তরুণ খেলোয়াড়ের অনুপ্রেরণা। নিজের জীবনে ধোনি যেভাবে সমস্ত সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে আজকের জায়গায় পৌঁছেছেন, তা দেশের কোটি কোটি যুবকের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর আজ তার জন্মদিন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল—সব জায়গাতেই চলছে মাহিময় উৎসব। টুইটারে শুভেচ্ছাবার্তায় ভরে গেছে ক্রিকেটার, বলিউড তারকা ও সাধারণ ভক্তদের পোস্টে। কেউ লিখেছেন—“ধোনি মানেই আবেগ”, তো কেউ লিখেছেন—“জন্মদিনে একটাই কথা—একবার মাহি, চিরকাল মাহি।” আজকের দিনে ধোনির বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছেন শত শত ভক্ত। কেউ এনেছেন কেক, কেউ ছবি, কেউ পোস্টার, কেউ আবার ছয় মেরে জয় এনে দেওয়া সেই ২০১১ সালের মুহূর্তটি স্মরণ করে চোখে জল ফেলেছেন। মাহির স্ত্রী সাক্ষী ও কন্যা জিভা আজ তার জন্মদিনের ছবি শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেখানে দেখা যাচ্ছে ধোনি কেক কাটছেন, চারপাশে তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনেরা।

ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ ঝাড়খণ্ড আজ তার জন্মদিনে আয়োজন করেছে একটি বিশেষ প্রদর্শনী ম্যাচের, যেখানে শিশু ও কিশোর ক্রিকেটারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ধোনির জীবনের গল্প নিয়ে লেখা বই ও কিটস। ধোনির পুরোনো স্কুল থেকেও আজ বিশেষ প্রার্থনা সভা রাখা হয়েছে তার দীর্ঘজীবন ও সুস্থতার জন্য। স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “ছোটবেলায় মাহি খুবই শান্ত ও নম্র ছিল, আমরা গর্বিত যে আমাদের ছাত্র আজ বিশ্বের অন্যতম কিংবদন্তি।” মাহির জন্মদিনে আজ ভারতের ছোট ছোট শহর থেকে বড় বড় স্টেডিয়াম পর্যন্ত আনন্দের জোয়ার বইছে। নতুন প্রজন্মের তরুণ ক্রিকেটাররাও বলছেন, “ধোনির মতো খেলোয়াড় হবেনা আর, আমরা তাকে দেখে খেলতে শিখেছি।” বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত যিনি ধোনির বায়োপিকে তাকে অভিনয় করেছিলেন, সেই স্মৃতি আবার উঠে এসেছে অনুরাগীদের মধ্যে। অনেকেই সুশান্ত ও ধোনির সেই মুহূর্তের ছবি শেয়ার করে আবেগঘন পোস্ট লিখেছেন। আজ ধোনির জন্মদিন শুধু একটা তারিখ নয়, এটা এক ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি—যেখানে পরিশ্রম, নির্ভরতা ও নিঃশব্দে নিজের কাজ করে যাওয়ার এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছেন মাহি। ভবিষ্যতেও যখনই ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা হবে, মাহির নাম বারবার ফিরে আসবে। তার স্নিগ্ধতা, ঠান্ডা মাথার সিদ্ধান্ত, বিজয়ের মুহূর্তে অতুলনীয় উদযাপন—সবকিছুই আজ ভারতীয় ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজকের এই দিনে “হ্যাপি বার্থডে মাহি”—শুধু একটা শুভেচ্ছা নয়, এটা কোটি কোটি ভক্তের হৃদয় থেকে উঠে আসা এক ভালোবাসা।