...
Friday, April 4, 2025
Google search engine
Homeলাইফস্টাইলস্বাস্থ্য ও ফিটনেসস্বাস্থ্য রক্ষায় ম*দ খান পরিমাপ বুঝে

স্বাস্থ্য রক্ষায় ম*দ খান পরিমাপ বুঝে

To protect your health, drink alcohol in moderation : মদ মানেই নেশা, মদ মানেই ক্ষতি – এমন ধারণাই বোধহয় আমাদের মনের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে আছে। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, মদ্যপান শরীরের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গি। আজকাল ডাক্তারদের কাছ থেকেই শোনা যাচ্ছে এমন কিছু তথ্য, যা হয়তো অনেকেই জানেন না—পরিমিত মদ্যপান কখনো কখনো শরীরের জন্য উপকারীও হতে পারে! কিন্তু এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো “পরিমাপ বুঝে”।

বিজ্ঞান বলছে, নানা ধরনের অ্যালকোহলেরই কিছু না কিছু উপকারী গুণ রয়েছে। তবে এই গুণের সুফল পেতে হলে অবশ্যই তা খুব সামান্য পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন অ্যালকোহল আমাদের শরীরের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে তা উপকারী হতে পারে।

ডক্টরস ব্র্যান্ডি: ওষুধের মতো প্রভাব

“ডক্টরস ব্র্যান্ডি” কথাটি হয়তো অনেকেই শুনেছেন। শীতকালে ঠান্ডা লেগে গলা বসে যাওয়া কিংবা কাশি-সর্দি হলে অনেকের বাড়িতেই ডক্টরস ব্র্যান্ডি দেওয়া হয়। এটি শরীরকে উষ্ণ রাখে, সর্দি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, কিছু বিশেষ ধরনের ব্র্যান্ডি ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মনে রাখতে হবে, মাত্রাতিরিক্ত সেবন করলে এই উপকারের বদলে শরীরের ক্ষতিই হবে।

রাম: ঠান্ডা থেকে সুরক্ষায়

ঠান্ডা লেগে গলা ব্যথা বা সংক্রমণ হলে রাম (Rum) অনেক সময় ওষুধের মতো কাজ করে। শরীরের ম্যাজম্যাজে ভাব কাটাতে এবং গা-হাত-পা ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে এই পানীয়। তবে এর ক্ষেত্রেও শর্ত একটাই—মাত্রা বুঝে খেতে হবে।

বিয়ার: মস্তিষ্কের জন্য সহায়ক

বিয়ার সম্পর্কে একটি বিশেষ গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে, এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। বিয়ারে উপস্থিত উপাদান মস্তিষ্কের রিসেপ্টরে কাজ করে উৎকণ্ঠা কমিয়ে স্নায়ুকে শিথিল করে। ফলে মানসিক চাপ কমে এবং স্বস্তি পাওয়া যায়। তবে বেশি পরিমাণে বিয়ার পান করলে সেটি উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

হুইস্কি: ওজন কমানোর সহায়ক

অনেকেই জানেন না, অল্প পরিমাণ হুইস্কি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কারণ এটি শরীরের ক্যালোরি বার্নের হার বাড়ায়। তবে এখানেও সাবধানতার প্রয়োজন—মাত্রা না বুঝে বেশি খেলেই কিন্তু বিপদ। তাই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া বেশি পরিমাণ হুইস্কি পান একেবারেই নয়।

রেড ওয়াইন: হৃদযন্ত্র ও হজমের জন্য উপকারী

রেড ওয়াইন যে শুধু রোমান্টিক ডিনার টেবিলেই জনপ্রিয়, তা নয়। রেড ওয়াইনের রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণ। মানসিক উদ্বেগ কমানো, হজমের সমস্যা মেটানো এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর মতো কাজে এটি ভূমিকা রাখে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত রেড ওয়াইন সেবনে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমে।

অ্যালকোহলের উপকারিতা বনাম ক্ষতি

এখন প্রশ্ন হলো, অ্যালকোহল কি সত্যিই উপকারী? নাকি এগুলো শুধুই মিথ? এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো “মডারেশন” বা “পরিমিত মাত্রা”। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন গবেষণায় পরিমিত মদ্যপানের উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সেই মাত্রা পার হয়ে গেলেই মদ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান লিভার ড্যামেজ, হার্টের রোগ, এবং মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সপ্তাহে ১-২ দিন এবং খুব অল্প পরিমাণে মদ্যপান করলে শরীরের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। তবে যারা নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপান করেন, তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়তি নেশার প্রতি আসক্তি দেখা দিলে তাদের ভবিষ্যত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

Untitled%20design%20(17)

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

এই বিষয়ে একাধিক সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও মতামত নেওয়া হয়েছে। উত্তর কলকাতার বাসিন্দা সমীর ঘোষ বললেন, “আমাদের ছোটবেলায় মদ্যপানকে শুধু খারাপ দিক থেকেই দেখা হতো। এখন অনেক নতুন তথ্য জানছি। তবে আমার মতে, যে জিনিস ক্ষতিকারক হতে পারে, তা যতই পরিমিত হোক না কেন, সাবধানে ব্যবহার করাই ভালো।”

অন্যদিকে, চিকিৎসক ডা. পারমিতা সেন বলছেন, “পরিমিত মদ্যপানের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেক রোগীকেই পরামর্শ দিই। বিশেষত হার্টের রোগীদের জন্য রেড ওয়াইন অনেক সময় উপকারী প্রমাণিত হয়। তবে মদ্যপানকে কখনোই অভ্যাসে পরিণত করা ঠিক নয়।”

ভবিষ্যতের প্রভাব

পরিমিত মদ্যপান নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু এর পাশাপাশি দায়িত্বশীল আচরণও জরুরি। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যেই মদ্যপানের নেশায় আসক্ত, তাদের জন্য সমাজে আরো বেশি পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং সচেতনতার কর্মসূচি আয়োজন প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায়, মদ্যপানের উপকারিতা ও ক্ষতির মধ্যে সুক্ষ্ম একটি সীমারেখা রয়েছে। এই সীমারেখা মেনে চললেই সুস্থ থাকা সম্ভব। নইলে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই “স্বাস্থ্য রক্ষায় মদ খান পরিমাপ বুঝে” এই পরামর্শটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখুন, মদ্যপান আনন্দের জন্য হতে পারে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীনতা কখনোই আনন্দদায়ক নয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.