Tiger and lion are shocked to see themselves in the mirror for the first time!:-জঙ্গলের মাঝখানে রাখা হয়েছে কয়েকটি বড় আয়না। একে একে সেই আয়নার সামনে হাজির হচ্ছে বাঘ, সিংহ, ভালুক, শিম্পাঞ্জির মতো নানা বন্যপ্রাণী। কেউ নিজেকে দেখে চমকে গিয়ে দূরে পালাচ্ছে, কেউ আবার দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে নিজের প্রতিবিম্ব দেখছে, যেন কিছু বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে। বনের রাজা সিংহ তো আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্বকে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করছে! এমনই এক অনবদ্য ও মজার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা দেখে অবাক, হাস্যরস আর মজার মেজাজে ভাসছে নেটিজেনরা। জানা গিয়েছে, এটি আসলে একটি গবেষণার অংশ। ১৯৭০ সালে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী গর্ডন গ্যালাপ একটি পরীক্ষার জন্য প্রথমবার আয়নার ব্যবহার করেছিলেন। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, প্রাণীরা আয়নার সামনে নিজেদের চিনতে পারে কি না। এর জন্য একটি প্রাণীকে চিহ্নিত করে তার শরীরের এমন একটি অংশে চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়েছিল, যা সে নিজে সাধারণত দেখতে পায় না। যদি সেই প্রাণী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেই চিহ্নটিকে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করে, তাহলে বোঝা যায়, সে নিজেকে চিনতে পারছে। সেই ‘মিরর টেস্ট’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে এই ভাইরাল ভিডিয়ো।
ভিডিয়োটিতে দেখা গিয়েছে, কিছু জঙ্গলের মাঝে একটি বিশেষ জায়গায় বড় বড় আয়না রাখা হয়েছে। এরপর সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর প্রতিক্রিয়া। কেউ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে ভাবছে, তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য প্রাণীটি কে? আবার কেউ নিজেকে দেখে মনে করছে, বিপরীতে থাকা প্রাণীটি তার মতোই হুবহু আচরণ করছে কেন? শিম্পাঞ্জি এবং ভালুককে দেখা যায় অনেকক্ষণ ধরে নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখে ভাবতে, যেন তারা ঠিক বুঝতে পারছে না আসলে কী ঘটছে। সিংহ নিজের সামনেই ‘আরেক সিংহ’ দেখে নিজের প্রতিবিম্বে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, একটি বাঘ নিজেকে দেখে ভয় পেয়ে দূরে সরে যায়।ভিডিয়োটি নেট দুনিয়ায় আসতেই মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। প্রাণীদের এমন প্রতিক্রিয়া দেখে মজায় ভেসে যান নেটিজেনরা। কেউ বলেন, ‘‘জঙ্গলের রাজা সিংহও নিজের ছবি দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে!’’ আবার কেউ মজা করে লিখেছেন, ‘‘নিজেরাই নিজেদের দেখে ভয় পেয়ে পালাচ্ছে, ভাবতে পারেন!’’ অনেকেই আবার প্রাণীদের প্রতিক্রিয়ায় গভীর দার্শনিক দিক খুঁজে পাচ্ছেন। নেটিজেনদের একাংশের মতে, এটি শুধু একটি মজার দৃশ্য নয়, বরং প্রাণীদের চিন্তাশক্তি এবং আত্মপরিচয়ের ধারণা নিয়েও নতুন কিছু জানার সুযোগ করে দিচ্ছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মানুষের মতো কি অন্যান্য প্রাণীরাও নিজেদের চিনতে পারে? তাদের কি আত্মপরিচয়বোধ আছে?’’
আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী গর্ডন গ্যালাপের করা ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক ‘মিরর টেস্ট’ থেকে এই গবেষণার ধারণা এসেছে। সে সময় তিনি শিম্পাঞ্জি, ডলফিন, হাতি, এবং কিছু পাখির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছিলেন যে তারা নিজের প্রতিবিম্বকে চিনতে পারে কি না। দেখা যায়, শিম্পাঞ্জি এবং ডলফিন নিজেদের আয়নায় দেখে চিনতে পেরেছিল, কিন্তু বেশিরভাগ প্রাণীই তা পারেনি। বিজ্ঞানীদের মতে, নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চিনতে পারা মানে আত্মপরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর অতিক্রম করা।এই ভাইরাল ভিডিয়োতে প্রাণীদের প্রতিক্রিয়া দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সিংহের মতো রাজকীয় প্রাণীও নিজের প্রতিবিম্ব দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। নিজের মতো দেখতে আরেকটি প্রাণী তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভেবে সিংহ নিজের প্রতিবিম্বে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, শিম্পাঞ্জি এবং ভালুক অনেকক্ষণ ধরে আয়নার সামনে নিজেদের দেখেছে এবং কিছু বোঝার চেষ্টা করেছে। বাঘ নিজেকে দেখে এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে মুহূর্তে সরে গিয়েছিল আয়নার কাছ থেকে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রাণীদের মধ্যে এমন প্রতিক্রিয়া হওয়ার পেছনে রয়েছে তাদের চিন্তাশক্তি এবং আচরণগত দিক। মানুষ ছাড়া পৃথিবীতে খুব কম প্রাণীই নিজেদের চিনতে পারে। শিম্পাঞ্জি, ডলফিন এবং হাতি সেই তালিকায় পড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রাণী নিজেদের প্রতিবিম্বকে অন্য কেউ ভেবে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। যেমনটা দেখা গিয়েছে সিংহ, বাঘ এবং ভালুকের ক্ষেত্রে।বন্যপ্রাণীদের নিয়ে তৈরি এই ধরনের ভিডিয়ো শুধু মজা দেওয়ার জন্য নয়, এর একটি পরিবেশগত গুরুত্বও রয়েছে। এই ভিডিয়োটি সাধারণ মানুষকে বন্যপ্রাণীদের জীবন সম্পর্কে জানার এবং সচেতন হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। বনজঙ্গলে প্রাণীদের আচরণ এবং চিন্তাভাবনার দিক থেকে এমন গবেষণা আমাদের আরও অনেক অজানা তথ্য জানতে সাহায্য করবে।বাংলার বনদফতরের আধিকারিক প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণীদের নিয়ে এই ধরনের গবেষণা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি প্রাণীদের চিন্তাশক্তি এবং আচরণগত বৈচিত্র্য সম্পর্কে আরও জানতে পারি, তাহলে তাদের সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারব।’’নিজেদের প্রথমবার আয়নায় দেখে বাঘ, সিংহ, ভালুক, শিম্পাঞ্জির প্রতিক্রিয়া এক কথায় মজাদার এবং শিক্ষামূলক। এই ধরনের গবেষণা আমাদের শুধু প্রাণীদের সম্পর্কে নতুন তথ্যই দেয় না, বরং প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আরও গভীর করে তোলে। প্রাণীদের মজার প্রতিক্রিয়া দেখে যেমন হাসির রোল উঠেছে, তেমনই ভাবনার খোরাকও জুগিয়েছে এই ভাইরাল ভিডিয়ো।