Sunday, July 6, 2025
Google search engine
HomeUncategorisedরবিবার রাজ্যের একাধিক জেলায় ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কা

রবিবার রাজ্যের একাধিক জেলায় ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কা

Thunderstorms expected in city districts on Sunday : রবিবার সকাল থেকেই আকাশটা যেন কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। হালকা মেঘ, গুমোট গরম, বাতাসে অস্বস্তি—এই সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের অনেক জেলাতেই। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে আগেই জানা গিয়েছিল যে আজ, রবিবার, রাজ্যের একাধিক জেলায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, আর সেটা যে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা দিনের শুরু থেকেই টের পেতে শুরু করেছেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ।

আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া একটি ঘূর্ণাবর্ত এবং তার সঙ্গে যুক্ত জোড়া অক্ষরেখার কারণে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বড় রকমের পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এই ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় মৌসুমি বায়ুকে আরও জোরদার করে তুলেছে, যার ফলেই রবিবার দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, ও ঝাড়গ্রাম জেলায় ভারী বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুধু দক্ষিণবঙ্গই নয়, উত্তরবঙ্গেও এর প্রভাব পড়বে বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দার্জিলিং, কালিম্পং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরেও আজ সারা দিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। এমনকি কিছু এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল ঝোড়ো হাওয়াও বয়ে যেতে পারে যার গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলা প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ঝাড়গ্রামের এক বাসিন্দা, বছর পঁচিশের রিনা মাহাতো বললেন, “আজ সকালে ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর আগে অনেক ভাবতে হল। এমনিতেই কাঁচা রাস্তা, তার ওপর এই বৃষ্টি হলে ওর আসতে যেতে খুব কষ্ট হয়।” পুরুলিয়ার এক কৃষক, রঘুনাথ বাউরি বললেন, “এই সময়টা ধান লাগানোর জন্য খুব জরুরি। কিন্তু বেশি বৃষ্টি হলে আবার জমি জলে ভেসে যাবে।

গত বছরেও এমনটাই হয়েছিল, ফলে অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল।” আবহাওয়ার এই আচমকা রূপ বদলের ফলে রাজ্যের বহু জায়গায় জল জমে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। পুরনো শহর এলাকায়, যেখানে নিকাশি ব্যবস্থা এখনও উন্নত নয়, সেখানে সকাল থেকে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাটে জল জমতে শুরু করেছে। কলকাতাতেও আজ দুপুরের দিকে আকাশ ঢেকে গিয়েছিল কালো মেঘে, আর ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করায় শহরবাসী বুঝে নিয়েছেন বড় কিছু আসছে। কলকাতা পৌরসংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের ড্রেনেজ টিমগুলিকে মাঠে নামিয়েছি। কোথাও জল জমলে দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।” দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ে যেহেতু পাহাড়ি এলাকা, তাই সেখানে বৃষ্টির প্রভাবে ধস নামার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শিলিগুড়িতে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য জানিয়েছেন, “বিকেল নাগাদ যদি বৃষ্টি বাড়ে, তাহলে যানজটে শহর স্তব্ধ হয়ে পড়তে পারে। আমরা আমাদের ট্রাফিক ফোর্স বাড়িয়ে রেখেছি।” অন্যদিকে, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “এই ধরণের ঘূর্ণাবর্ত ও জোড়া অক্ষরেখার সংমিশ্রণ আমাদের রাজ্যে বেশ বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এটা এখনও সক্রিয় রয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে পরিস্থিতি। সাধারণ মানুষকে আমরা অনুরোধ করছি যাতে তারা অপ্রয়োজনীয় বাইরে না যান, বিশেষ করে ঝড় শুরু হলে।” রবিবারের এই বৃষ্টিপাত কৃষিক্ষেত্রে যেমন সুফল বয়ে আনতে পারে, তেমনি অতিবৃষ্টির ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও থেকে যায়। কারণ পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার মতো এলাকায় চাষের কাজ অনেকাংশেই আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল। গত বছর এই সময়েই হঠাৎ ভারী বৃষ্টির কারণে বহু ফসল নষ্ট হয়েছিল।

960px Port and lighthouse overnight storm with lightning in Port la Nouvelle

এবার আবার যদি একই পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে কৃষকদের মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়বেই। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কৃষকদের সহযোগিতা ও যেকোনো বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য করা হবে। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকেও কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—বৃষ্টির সময় রাস্তায় জল জমলে সেখানে যেন বাচ্চারা খেলে না, ডেঙ্গু ও অন্যান্য জলবাহিত রোগ যাতে না ছড়ায় সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। অনেক জেলায় সচেতনতা ক্যাম্পও চালু হয়েছে। জলপাইগুড়িতে এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “বৃষ্টির পরে আবর্জনা জমলে মশা জন্মায়, সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে।” সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও প্রভাব পড়ছে—অফিসগামী মানুষরা সকাল থেকে ভিজে পোশাকে অফিসে পৌঁছেছেন, রেল ও বাস পরিষেবা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে, বাজারে জিনিসপত্র কেনাবেচায় ভাটা পড়েছে। এদিকে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে উপস্থিতির হারও তুলনামূলকভাবে কম ছিল আজ। পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে আগামীকাল কয়েকটি জেলার স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নিতে পারে প্রশাসন। সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ঝড়-বৃষ্টির ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করেছে। অনেকে পোস্ট করছেন তাঁদের বাড়ির চারপাশে জল জমার ছবি, আবার কেউ কেউ বৃষ্টির মাঝে চা আর খিচুড়ির ছবি দিয়ে আবহাওয়াকে উপভোগও করছেন। তবে সতর্ক থাকাটাই এখন প্রধান লক্ষ্য।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার সকাল পর্যন্ত এই ঝড়-বৃষ্টি চলতে পারে এবং তারপর ধীরে ধীরে আকাশ পরিষ্কার হতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। এই অবস্থায় প্রশাসনের একটাই বার্তা—“সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন।” এখন দেখার বিষয়, ঘূর্ণাবর্তের এই প্রভাব কতটা গভীর হয় এবং কতটা সময় ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় স্থায়ী হয়। তবে আপাতত, রাজ্যজুড়ে ঝড়-বৃষ্টির এই রবিবার সাধারণ মানুষের মনে মিলিয়ে দিয়েছে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা আর কোথাও কোথাও চুপিচুপি আনন্দের ছোঁয়া।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments