This is a deadly cancer vaccine:ক্যান্সার – এই শব্দটি শুনলেই বুকের ভেতরটা শিউরে ওঠে। ক্যান্সারের নেই কোনো প্রতিষেধক, নেই কোনো সঠিক প্রতিরোধের উপায়। কিন্তু এই ধারণা এবার বদলাতে চলেছে। কারণ, রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এমন এক টিকা যা মারণরোগ ক্যান্সারকে পরাস্ত করতে পারে। এই খবর শুনে যেমন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে গোটা বিশ্ব, তেমনি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ২০২৫ সাল থেকেই এই টিকা বিনামূল্যে রাশিয়ার মানুষদের দেওয়া হবে।
রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনে কাজ করা রেডিয়োলজি মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের জেনারেল ডিরেক্টর আন্দ্রে কাপ্রিন এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের নিরলস প্রচেষ্টা এবং গবেষণার ফলেই এই টিকা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। মেসেঞ্জার আরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এই টিকা শরীরে টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম। পাশাপাশি এটি মেটাস্টেসিস, অর্থাৎ ক্যান্সারের কোষ অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়া, রোধেও কার্যকর।
রাশিয়ার Gamaleya National Research Center for Epidemiology and Microbiology-এর ডিরেক্টর আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ জানিয়েছেন, এই টিকার প্রাক-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি থামাতে এবং রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অত্যন্ত কার্যকর। প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার মানুষের জন্য এটি উন্মুক্ত হলেও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে এই টিকা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশে ক্যান্সার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা করাতে পারেন না। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যান্সার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত ক্যান্সার গবেষণায় কাজ করছে। তবে এই টিকা আবিষ্কার তাদের জন্যও এক নতুন আশা নিয়ে এসেছে।
রাশিয়ার এই টিকা ব্যবহারে কীভাবে ক্যান্সার চিকিৎসার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে, তা নিয়ে দেশের চিকিৎসা মহলেও চলছে জোর আলোচনা। ঢাকার বিখ্যাত অনকোলজিস্ট ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, “এই আবিষ্কার ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। টিকার কার্যকারিতা যদি প্রমাণিত হয়, তবে এটি ক্যান্সারের জন্য একটি যুগান্তকারী সমাধান হতে পারে। আমাদের দেশে এটি সহজলভ্য হলে অনেক দরিদ্র রোগী উপকৃত হবে।”
ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহৃত মেসেঞ্জার আরএনএ প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ মহামারির সময় সফলভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই প্রযুক্তি শরীরে নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরিতে সহায়তা করে, যা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা সেই প্রযুক্তিকেই আরও উন্নত করে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের জন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করেছেন।
এই আবিষ্কার কেবল রোগীদেরই নয়, পুরো সমাজকে একটি বড় স্বস্তি দেবে। ক্যান্সার মানেই যেখানে এখনো অনেকের কাছে মৃত্যুর সমান, সেখানে এই টিকা নতুন জীবনের বার্তা আনবে। তবে, এর মূল্য এবং সহজলভ্যতা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো দেশে এই টিকা সহজে পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।