Tuesday, July 29, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসফেসবুকে পোস্ট না করলে মহা বিপদ! আসল সত্য জানেন?

ফেসবুকে পোস্ট না করলে মহা বিপদ! আসল সত্য জানেন?

There is a great danger if you don’t post on Facebook! Do you know the real truth?: সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ভয়, সন্দেহ আর গুজব খুব দ্রুত ভাইরাল হয়। সাম্প্রতিককালে এক বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে, যেখানে বলা হচ্ছে—আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট বার্তা কপি-পেস্ট করে না দেন, তাহলে মেটা (ফেসবুকের মালিক সংস্থা) আপনার সমস্ত ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য ব্যবহার করতে পারবে! বার্তাটির শুরু হয় এইভাবে:
“আমি এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, আমার সমস্ত ফেসবুক পোস্ট, ছবি, তথ্য আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি…”এই পোস্ট মুহূর্তের মধ্যেই হাজার হাজার ব্যবহারকারীর টাইমলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ পোস্ট করছেন আতঙ্কে, কেউ করছেন না বুঝেই, আবার কেউ করছে ‘সতর্কতা’ রক্ষার্থে। কিন্তু প্রশ্ন হল—এই পোস্টের আদৌ কি কোনও ভিত্তি আছে? সত্যিই কি আপনি ফেসবুকে একটা লেখা না দিলে বিপদে পড়বেন? এই ধরণের এক কপি-পেস্ট বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে।

দাবি করা হচ্ছে, ফেসবুক এখন থেকে নাকি আপনার তথ্য, ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করতে পারবে নিজের মতো করে। আর সেটা আটকাতে গেলে আপনাকে এই নির্দিষ্ট বার্তাটি নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করতে হবে।অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বহু ব্যবহারকারী এই পোস্টে বিশ্বাস করে নিজের টাইমলাইনে দিয়ে দিচ্ছেন, বন্ধুদের ট্যাগ করছেন, আবার কিছুজন ইনবক্সে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছেন।এর কারণও আছে। ২০১৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসে নিজে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন ফেসবুক কর্তা মার্ক জুকারবার্গ। কারণ, Cambridge Analytica কাণ্ডে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য। সেই ঘটনার স্মৃতি আজও অনেকের মনে ভয় ঢুকিয়ে রেখেছে।এই ‘ভয়’টাই আজ নতুন রূপে ফিরে এসেছে, এক গুজবের আকারে। লোকজন বিশ্বাস করছে, পোস্টটা না করলে আবার কোনও কোম্পানি তাদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।ফেসবুক বা মেটা কর্তৃপক্ষ এই প্রসঙ্গে আগেই জানিয়ে দিয়েছে—ব্যবহারকারীরা যখন তাদের অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন, তখনই তারা একটি নির্দিষ্ট ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন’-এ সাইন করেন। সেটিই চূড়ান্ত।কোনও ব্যক্তি তাঁর প্রোফাইলে কোনও বার্তা পোস্ট করলেই তার ‘আইনি অধিকার’ পরিবর্তন হয় না।ফেসবুক আরও জানায়, “এই ধরণের ভাইরাল পোস্টের কোনও আইনি ভিত্তি নেই। এটি নিছকই গুজব।”বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ফেসবুক বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট ব্যবহারের নিয়ম নির্ধারণ হয় শুধুমাত্র প্ল্যাটফর্মটির নিজের শর্ত অনুযায়ী।বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বললে জানা গেল, অনেকেই জানেন না পোস্টটির সত্যতা সম্পর্কে। কেউ পোস্ট করছেন অন্যকে দেখে, কেউ আবার জানেনও না কেন পোস্ট করা হচ্ছে।কলকাতার এক গৃহবধূ সুস্মিতা মণ্ডল বললেন, “আমার এক বন্ধু ইনবক্সে পাঠিয়েছিল। ভেবেছিলাম সত্যি হবে, তাই পোস্ট করে দিয়েছিলাম।”
অন্যদিকে প্রযুক্তিপ্রেমী কলেজ ছাত্র অরিত্র ঘোষ বলেন, “আমি জানতাম এটা গুজব। কিন্তু দেখলাম সবাই করছে, তাই আমি মজার ছলে শেয়ার করেছি।”

facebook

এই ধরণের আচরণই গুজবকে আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে।এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি গুজব হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এটি আমাদের ডিজিটাল লিটারেসির এক বড় পরীক্ষা। অনেকেই এখনো বুঝে উঠতে পারেন না, কোন খবর বা বার্তা বিশ্বাসযোগ্য আর কোনটা গুজব।এই ধরণের ভাইরাল পোস্ট আমাদের মধ্যে একটি ভয়ের বীজ বপন করে—“আমার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ তো?” কিন্তু এই ভয়ের সুযোগ নিচ্ছে ভুয়ো বার্তা ছড়ানো চক্র।ফেসবুকে কোনও কিছু পোস্ট করলেই সেটি আইনি প্রভাব ফেলবে—এই ভাবনাটি ভুল। ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষা নির্ভর করে তার নিজস্ব প্রাইভেসি সেটিংস, পাসওয়ার্ড সুরক্ষা এবং অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্টের উপরে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

  • Privacy Settings আপডেট করুন
  • Face RecognitionLocation Access অপশন বন্ধ করুন
  • Two-Factor Authentication চালু রাখুন
  • নিজের প্রোফাইল পাবলিক না রেখে ‘Friends Only’ করে দিন
fb inner20180606041137

এই ঘটনার মূল শিক্ষা হল—সচেতন হওয়া। প্রযুক্তির সুবিধা যেমন অনেক, তেমনই তার অপব্যবহারও সম্ভব। কোনও পোস্টে ক্লিক করার আগে বা কপি-পেস্ট করার আগে ভেবে নেওয়া উচিত, সেটি কতটা সত্যি, তার প্রমাণ কী, এবং আদৌ তাতে কোনও উপকার হচ্ছে কি না।স্কুল, কলেজ এবং সমাজে ডিজিটাল সচেতনতা নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া দরকার। তরুণ সমাজ যত বেশি জানবে, তত সহজেই তারা গুজবের শিকার হবে না। সামাজিক মাধ্যমে গুজব কতটা তাড়াতাড়ি ছড়াতে পারে, এবং মানুষ কীভাবে যাচাই না করেই বিশ্বাস করে বসে, তার বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই ঘটনা।ফেসবুক ব্যবহার করুন, কিন্তু চোখ-কান খোলা রেখে। গুজবে নয়, সত্যের পক্ষে থাকুন। নিজের তথ্য নিজেই সুরক্ষিত রাখুন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments