Monday, July 28, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসগৌড় এক্সপ্রেস ট্রেনে চুরি, রেলের নিরাপত্তা নিয়ে উঠল প্রশ্ন

গৌড় এক্সপ্রেস ট্রেনে চুরি, রেলের নিরাপত্তা নিয়ে উঠল প্রশ্ন

Theft on Gaur Express train raises questions about railway security:-রবিবার রাতে মালদার গৌড় এক্সপ্রেসে ফের একবার ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা, আর এই ঘটনার জেরে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উঠেছে জোরালো প্রশ্ন। কলকাতা থেকে মালদা ফেরার পথে গৌড় এক্সপ্রেসের এসি টু টায়ার কামরায় এক চিকিৎসক দম্পতি সহ মোট ছয় জন যাত্রীর মোবাইল, নগদ টাকা, ব্যাগ, জরুরি নথিপত্র সব কিছু নিখোঁজ হয়ে যায়, যা একেবারেই হতবাক করে দিয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। চুরি ঠিক কবে ঘটেছে, তা বুঝতেই পারেননি কেউ, কারণ রাতভর চলা যাত্রার সময় সবাই ছিলেন গভীর ঘুমে। সোমবার সকালে মালদা টাউন স্টেশনে ট্রেন থামতেই, যাত্রী অনশ্রী ভট্টাচার্য ও তাঁর স্বামী, যিনি পেশায় একজন চিকিৎসক, ঘুম থেকে উঠে দেখেন তাঁদের ব্যাগ হাওয়া। সঙ্গে সঙ্গে জিআরপি-তে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা, এবং পরে রেল দপ্তরের অ্যাপেও অভিযোগ জানান। অনশ্রী জানান,

73f23a c7e95385f6af4c8589f514c2e8beba35mv2

‘‘আমরা এস টু কামরায় ছিলাম, আমাদের ব্যাগের সঙ্গে আমার ফোন, কিছু টাকা আর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছিল—সব চুরি গেছে। শুধু আমাদের নয়, আশেপাশের আরও পাঁচ-ছয়জন যাত্রীরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে।’’ এই ঘটনার পর ট্রেনের অন্যান্য যাত্রীরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের বক্তব্য, গৌড় এক্সপ্রেস এক জনপ্রিয় দীর্ঘপথের ট্রেন, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন এই রুটে। কিন্তু বারবার এমন চুরির ঘটনা প্রমাণ করে, রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ঠুনকো। গত বছর ডিসেম্বর মাসেও গৌড় এক্সপ্রেসে একই ধরনের চুরির খবর সামনে এসেছিল। তখনও রাত্রিকালীন এসি কামরায় যাত্রীদের ফোন, ব্যাগ, নগদ টাকা চুরি গিয়েছিল। তারপর একাধিকবার নিরাপত্তা জোরদার করার আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি একবিন্দুও বদলায়নি বলে অভিযোগ। অনশ্রী-র স্বামী বলেন, ‘‘আমরা চিকিৎসার কাজে কলকাতা গিয়েছিলাম। ফেরার সময় এসি কামরায় সিট বুক করেছিলাম, যাতে অন্তত নিরাপত্তার আশ্বাস থাকে। কিন্তু সেখানে যদি রাতের মধ্যে এতগুলো ব্যাগ চুরি যায়, তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ?

’’ জানা যাচ্ছে, এই চুরির ঘটনায় রাতের অন্ধকারে চোর বা চোরেরা একাধিক যাত্রীর জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছে অত্যন্ত কৌশলে, কেউ টেরই পাননি। অনেকে সন্দেহ করছেন, এই চুরির সঙ্গে ট্রেনের অভ্যন্তরে থাকা কোনো কর্মী অথবা নিরাপত্তাকর্মী জড়িত থাকতে পারেন। কারণ, এসি কামরায় চাবি ছাড়া বাইরের কেউ ঢুকতে পারেন না। তাছাড়া এতগুলো ব্যাগ একসাথে গায়েব হয়ে যাওয়া সাধারণ চোরের কাজ নয় বলেই মনে করছেন যাত্রীরা। মালদা টাউন স্টেশনের জিআরপি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। স্টেশন, কামরার ভিতরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ট্রেনে থাকা বেশিরভাগ ক্যামেরাই কাজ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে, যা তদন্তে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে পূর্ব রেল সূত্রে জানানো হয়েছে,

img202205241840026560533

‘‘চুরির ঘটনাটি দুঃখজনক। যাত্রীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’ তবে যাত্রীদের অনেকেই রেলের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে পারছেন না। কলকাতা থেকে ফিরছিলেন এমন এক যাত্রী বলেন, ‘‘প্রতিবারই চুরি হলে পরে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হয়, অথচ পরের বারেও একই ঘটনা ঘটে। রেলের উচিত এসি কামরায় একজন নির্দিষ্ট নিরাপত্তাকর্মী নিযুক্ত রাখা, বিশেষ করে রাতের ট্রেনে।’’ গৌড় এক্সপ্রেস সাধারণত কলকাতা ও মালদার মধ্যে চলাচল করে, এবং এই রুটে বহু মানুষ চিকিৎসা, কাজ কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। ফলে এমন ঘটনায় শুধু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগই নয়, সাধারণ মানুষের মানসিক স্থিতি ভেঙে পড়ছে। বিশেষ করে যারা মূল্যবান জিনিস নিয়ে যাতায়াত করেন, তাঁরা আতঙ্কে থাকেন। এছাড়া মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ঘটনা সামনে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে অসন্তোষ। অনেকেই লিখেছেন, ‘‘যদি এসি কামরায়ও নিরাপদ না বোধ করি, তাহলে আর ট্রেনে ওঠার মানে কী?’’ রেলের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের তরফে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। এমনকী প্রয়োজনে যাত্রীরা হয়তো রেল ছেড়ে বাস বা প্রাইভেট ট্রান্সপোর্টের দিকে ঝুঁকবেন। এটা শুধু রেলের আয় কমাবে না, বরং জনসাধারণের একটা নির্ভরযোগ্য পরিবহন মাধ্যম নিয়ে আস্থার ভাঙন ঘটাবে। তাই এখন জরুরি, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুধু তদন্ত নয়, স্থায়ীভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা, এসি কামরাগুলিতে অধিক সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টল করা, এবং রাত্রিকালীন ট্রেনে বিশেষ টহল ব্যবস্থা চালু করা। কারণ, গৌড় এক্সপ্রেসে বারবার এমন চুরির ঘটনা শুধু ট্রেনের সমস্যা নয়, বরং তা গোটা ভারতীয় রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিচ্ছে। যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে একদিন হয়তো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন বহু যাত্রী। এবং এই আশঙ্কা দূর করাই এখন রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments