Theft at Ganeshdham Society, panic in the area:রবিবার সকালে রানীগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড় ফাঁড়ির সংলগ্ন গণেশধাম সোসাইটির বাসিন্দারা যেভাবে ঘুম ভাঙলো, তা যেন কোনও হরর সিনেমার চিত্রনাট্য! একেবারে দিনের আলো ফুটতেই খবর আসে, সোসাইটির বি ও সি ব্লকের একাধিক ফ্ল্যাটে তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। প্রথমে দুইটি ফ্ল্যাটে চুরির খবর মেলে, পরে জানা যায়, তৃতীয় একটি ফ্ল্যাটেও একই কায়দায় তালা ভেঙে ঢুকে সমস্ত গহনা, নগদ টাকা, প্রয়োজনীয় নথিপত্র, এমনকি একটি বাসার পুরনো স্মারকও তুলে নিয়ে গেছে চোরেরা। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লক্ষ টাকার সম্পত্তি খোয়া গেছে বলে প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি।
গণেশধাম সোসাইটির বাসিন্দা মনোজ আগরওয়াল জানান, “আমার পরিবার কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি গিয়েছিল। আজ সকালে দেখি, দরজার তালা ভাঙা। ভিতরে ঢুকে দেখি, আলমারি খোলা, গয়না নেই, ক্যাশটাও খালি। সত্যিই বুঝতে পারছি না কার উপর বিশ্বাস করবো।” পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সুনীতা দেবী বলেন, “সন্ধেবেলা পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। সকালে উঠে দেখি তালা ভাঙা! এটা নিশ্চয় কেউ খুব ভালোভাবে আমাদের রুটিন জানত বলেই এমন ঘটাতে পেরেছে।” জানা গিয়েছে, একটি ফ্ল্যাটে সিসিটিভি ছিল বটে, কিন্তু তা ছিল অফলাইনে। কাজেই, চোরেরা সহজেই পার পেয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার সকাল আটটা নাগাদ খবর পেয়ে পাঞ্জাবি মোড় ফাঁড়ির অফিসাররা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ব্লক বি ও সি ঘুরে একে একে তিনটি ফ্ল্যাটের চুরির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। রানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রশান্ত সিং জানান, “এই ধরনের চুরির ক্ষেত্রে সাধারণত আগে থেকে রেকি করা হয়। আমাদের প্রাথমিক অনুমান, চোরেরা ফ্ল্যাটগুলোর ফাঁকা থাকার খবর জানতো। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেনসিক দলকেও খবর দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় এক নিরাপত্তারক্ষী, যিনি রাতের শিফটে কর্মরত ছিলেন, জানান, “আমি রাত ২টা পর্যন্ত টহল দিয়েছি, কিছু সন্দেহজনক চোখে পড়েনি। তবে তারপর কে এসেছে বা কী হয়েছে, বুঝতে পারছি না।” প্রশ্ন উঠেছে, একটি অভিজাত আবাসনে যেখানে প্রহরী রয়েছে, সেখানে একাধিক ফ্ল্যাটে চুরি কি করে হলো? এলাকাবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সোসাইটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা, অনেকবার প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এই ঘটনার পরই আতঙ্কে রয়েছেন সোসাইটির অন্যান্য বাসিন্দারা। প্রায় প্রত্যেকেই দিনের আলোতেই দরজায় অতিরিক্ত তালা দিচ্ছেন, অনেকে আবার ব্যক্তিগত সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু করেছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর অনিতা কুমার জানিয়েছেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এত বড় চুরির পরেও যদি পুলিশ চোর ধরতে না পারে, তবে সাধারণ মানুষ কিভাবে নিরাপদ থাকবে? আমরা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, অতিরিক্ত টহল বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
গণেশধাম সোসাইটিতে এটাই প্রথম নয়, গত একবছরে ছোটখাটো তিনটি চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। তবে এবার একসঙ্গে তিনটি ফ্ল্যাটে চুরির ঘটনা আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে যেভাবে চোরেরা ফ্ল্যাট ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন কোনও পরিচিত মুখ জড়িত থাকতে পারে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও এসেছে। বিরোধী পক্ষের দাবি, “পশ্চিম বর্ধমানে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। রানীগঞ্জের মতো জায়গাতেও যদি চুরি হয়, তবে সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ কী?” জেলা পুলিশ সুপার একটি বিবৃতি দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন যে, “এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে। এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।”
চুরির এই ঘটনার আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক দিক থেকেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। যে তিনটি পরিবার এই ঘটনার শিকার হয়েছেন, তাঁরা কেউই এখন রাতে শান্তিতে ঘুমোতে পারছেন না। ঘরের প্রতিটি শব্দে চমকে উঠছেন, কেউ কেউ ভাবছেন শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। বিশেষত গৃহবধূদের মধ্যে দুঃশ্চিন্তা বেশি দেখা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে— শুধু পুলিশি তৎপরতা বাড়ালেই কি চুরি ঠেকানো সম্ভব? না কি আবাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, গেটের চেকিং, এবং বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি? আবাসন উন্নয়ন সংস্থাগুলিরও কি কোনও দায়িত্ব নেই?
সব মিলিয়ে গণেশধাম সোসাইটির এই চুরির ঘটনা শুধুমাত্র একটি আইনি সমস্যা নয়, বরং এক গভীর সামাজিক দৃষ্টান্ত। যেখানে নাগরিক সুরক্ষা, প্রশাসনিক গাফিলতি এবং সচেতনতার অভাব একযোগে কাজ করছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক, দোষীরা ধরা পড়ুক, এটাই এখন এলাকার মানুষের একমাত্র প্রত্যাশা।
টাইটেলঃ “গণেশধাম সোসাইটিতে রাতের অন্ধকারে ত্রিফল চুরি! আতঙ্কে জর্জরিত রানীগঞ্জের বাসিন্দারা”