The young man ‘breathes life’ into the on-screen character: একটা সময় ছিল যখন টিভির পর্দায় বিজ্ঞাপন চললেই পরিবারের সবাই চুপ করে যেতেন—না, সিনেমা বা সিরিয়ালের জন্য নয়, বরং সেই বিজ্ঞাপনগুলোর জন্য যেগুলো অদ্ভুতভাবে মনে গেঁথে যেত! পার্লে-জি বিস্কুটের মিষ্টি মুখের ছোট্ট মেয়ে, নিরমা পাউডারের গুনগান গাওয়া বাচ্চা মেয়ে, কিংবা অ্যামুল বাটারের ‘টকটকে গালওয়ালা’ কার্টুন কন্যা—এরা যেন আমাদের ছোটবেলার অজস্র রঙিন স্মৃতির অংশ। কিন্তু কখনও কি আমরা ভেবেছি এই চরিত্রগুলো যদি বাস্তবে মানুষের রূপ পেত, তাহলে দেখতে কেমন হতো? এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল বহুদিন ধরে অনেকের মনে, আর সেই কৌতূহলের অবসান ঘটালেন এক তরুণ, যিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর সাহায্যে রীতিমতো জীবন্ত করে তুলেছেন পর্দার চরিত্রদের। শাহিদ নামের এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন যা দেখতে দেখতে ভাইরাল হয়ে গেছে। এই ভিডিওতে তিনি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন চরিত্রগুলিকে মানুষের মতো মুখাবয়ব, চোখ-মুখের অভিব্যক্তি আর ত্বকের টেক্সচার দিয়ে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে মনে হয়, যেন তাঁরা সত্যিই আমাদের পাশে হাঁটাচলা করছেন! কল্পনার চরিত্ররা যেন বাস্তবের মাটি ছুঁয়ে ফেলেছে। শাহিদের তৈরি এই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে ‘পার্লে-জি গার্ল’-এর সেই খিদে-খিদে মুখটা, যে বয়স্কদের সঙ্গে বসে বিস্কুট খায়; ‘নিরমা গার্ল’-এর প্রাণবন্ত মুখ, যার সাদা জামা ময়লার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেরা ছিল, আর আছে ‘ভোলু’, LIC-র সেই হাসিখুশি চেহারার মুখপাত্র, যাকে দেখে বহু ভারতবাসী মনে মনে নিজেদের নিরাপত্তার আশ্বাস খুঁজে পেতেন। এমনকি ‘আমুল গার্ল’-এর চোখ টিপে মজা করার ভঙ্গিমাও এতটাই নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে যে মনে হয়, সে যেন সত্যি আছে আর ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছে। এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতে আসতেই নেটাগরিকরা একে ঘিরে আবেগে ভাসছেন। একজন লিখেছেন, “এই চরিত্রগুলোকে তো আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি। ওরা যেন আমাদের পরিবারেরই কেউ। এবার সত্যিই মনে হচ্ছে ওরা আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে!” আরেকজনের মন্তব্য, “AI-এর এত সুন্দর ব্যবহার আগে দেখিনি। শুধু বিনোদন নয়, এটি একটি শিল্প।” কেউ কেউ আবার বলছেন, “এটা শুধু কল্পনা নয়, এটা আমাদের শৈশবের স্মৃতিচারণ। এই চরিত্রগুলোর মাধ্যমে আমরা যেসব জিনিস শিখেছি, সেগুলো আর একটা নতুন আঙ্গিকে ফিরে এসেছে।” শাহিদের এই সৃষ্টিশীল প্রচেষ্টা কেবল নস্টালজিয়ার চোখে দেখলে চলবে না।
এটি দেখিয়ে দিল কিভাবে AI-কে ব্যবহার করে আমাদের চেনা গল্প, চরিত্র ও স্মৃতিকে আধুনিকতার সঙ্গে মিলিয়ে তোলা যায়। এটি একদিকে যেমন প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে তুলে ধরে, তেমনই অন্যদিকে শিল্পচর্চা, কল্পনা এবং সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধনের নজির হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটা নিছক একটি ভিডিও নয়, এটা কনসেপ্ট আর ইমোশন-এর মেলবন্ধন। Shahid দেখিয়ে দিয়েছেন AI এখন এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে, যেখানে শুধু বাস্তব নয়, কল্পনাকেও বাস্তব রূপ দেওয়া সম্ভব।” Shahid নিজেও জানিয়েছেন, “আমি বরাবরই ছোটবেলার এই বিজ্ঞাপন চরিত্রগুলোর প্রেমে পড়ে ছিলাম। এই চরিত্রগুলোকে একবার বাস্তবে কেমন হতে পারে, তা দেখার ইচ্ছে থেকেই এই কাজের শুরু। আমি চেয়েছিলাম সবাই আবার একটু নস্টালজিক হোক, আবার একটু শৈশবে ফিরুক।” আশি-নব্বইয়ের দশকের এই বিজ্ঞাপনগুলোর চরিত্র আজকের বিজ্ঞাপন বাজারে যতই ধামাচাপা পড়ে যাক না কেন, এক সময়ে এগুলিই ছিল জনপ্রিয়তা, বিশ্বাস আর স্মৃতির প্রতীক। ‘পার্লে-জি গার্ল’ হয়ে উঠেছিল শক্তির প্রতীক, ‘নিরমা বেবি’ পরিচ্ছন্নতার মুখ, আর ‘ভোলু’ আস্থা ও নিরাপত্তার সমার্থক। এই চরিত্রগুলো একাধারে পণ্য বিক্রির হাতিয়ার ছিল, আবার অন্যদিকে মানুষের আবেগেও গেঁথে গিয়েছিল। Shahid-এর AI প্রয়োগ সেই আবেগকে আবার জীবন্ত করে তুলেছে। কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, “AI-র মাধ্যমে এইভাবে কাল্পনিক চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলা কি কোনওভাবে কপিরাইট বা চরিত্রের মালিকানার লঙ্ঘন নয়?” তবে এখনও পর্যন্ত কোনও কোম্পানি এই ভিডিও নিয়ে আপত্তি জানায়নি, বরং অনেকেই বাহবা জানিয়েছে Shahid-এর এই অভিনব চিন্তাধারাকে। এমনকি Parle-G, Nirma কিংবা LIC-এর মতো সংস্থাগুলিও এই ভিডিও-র জনপ্রিয়তায় নিজেদের পুরনো ব্র্যান্ডিং নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু করতে পারেন বলেই মনে করছেন মার্কেটিং এক্সপার্টরা। Shahid-এর এই সৃষ্টিকে ঘিরে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে ডিজিটাল আর্ট জগতে, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্দরমহলে, এমনকি বিজ্ঞাপনের ইতিহাস নিয়েও। অনেকেই বলছেন, “এই এক মিনিটের ভিডিও বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। আগামীর বিজ্ঞাপন হবে স্মৃতি আর প্রযুক্তির যুগলবন্দি।” এই উদ্যোগ শুধুই একটি ভিডিও নয়, এটি এক নতুন ভাবনার, এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম।
এই ভিডিও মানুষকে ভাবাচ্ছে, হাসাচ্ছে, নস্টালজিক করছে এবং প্রযুক্তিকে একটু ভিন্ন চোখে দেখতে শিখাচ্ছে। Shahid-এর মত তরুণেরা আজ প্রমাণ করে দিচ্ছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার কীভাবে সমাজ, শিল্প আর আবেগকে ছুঁয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে এমন আরও কত পুরনো চরিত্র, গল্প ও ভাবনাকে এভাবে জীবন্ত করে তোলা হবে তা বলা মুশকিল, তবে এটা স্পষ্ট—AI আর মানুষের কল্পনা মিলে তৈরি করতে পারে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এখন সবাই অপেক্ষা করছে, শাহিদ-এর পরবর্তী ভিডিও কী হবে? হয়তো ‘ম্যাগি মাগি মাগি’-র সেই খুদে ছেলেটা? কিংবা ‘রসনা’র “I love you Rasna” বাচ্চা মেয়ে? যা-ই হোক, Shahid ইতিমধ্যেই ভারতীয় ডিজিটাল কনটেন্ট দুনিয়ায় এক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তাঁর মতো সৃজনশীল মানুষরা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছেন, ‘প্রাণসঞ্চার’ কেবল বাস্তব মানুষের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, চরিত্রের মধ্যেও প্রাণ দেওয়া যায়—যদি থাকে কল্পনা, প্রযুক্তি আর ভালোবাসা।