The whereabouts of a spy ring in India have been leaked! : সম্প্রতি ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক গভীর ফাঁক ধরা পড়েছে, যার সূত্রপাত হয়েছে পাঞ্জাব পুলিশের হাতে ধৃত এক সাধারণ ইউটিউবারের জবানবন্দি থেকে—যশবীর সিং নামে এক পাঞ্জাবের যুবককে যখন পুলিশ গ্রেফতার করে, তখন কেউ ভাবতেও পারেনি যে এই সাধারণ চেহারার ইউটিউবারটি এত বড় একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে, আর তার মুখ থেকে উঠে আসবে এমনসব চাঞ্চল্যকর তথ্য যা গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের জেরার মুখে যশবীর স্বীকার করেছেন যে তিনি পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI-এর সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন এবং সেই যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাব-ইন্সপেক্টর এবং ইউটিউবার নাসির ঢিল্লো। নাসির ঢিল্লো, যিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা, ইউটিউবে “Nasir Dhillon” নামে একটি জনপ্রিয় চ্যানেল চালাতেন, যেখানে তিনি নানা দেশ-বিদেশের ভ্রমণ, খাবার, সংস্কৃতি নিয়ে ভিডিও বানিয়ে কোটি কোটি দর্শকের মন জয় করেছিলেন, অথচ এইসব ভিডিওর আড়ালে তিনি চালাতেন গুপ্তচরবৃত্তির কারবার, এমনটাই দাবি করেছে ধৃত যশবীর সিং।

পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, ইউটিউবের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর নাসির ঢিল্লো ভারতে বসে থাকা একাধিক যুবক-যুবতীকে টার্গেট করে গুপ্তচর নেটওয়ার্ক বিস্তারের কাজ করছিলেন এবং সেই প্রক্রিয়াতেই জড়িয়ে পড়ে যশবীর। তিনি আরও জানান, নাসিরই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পাক গুপ্তচর সন্দেহে আগেই ধৃত জ্যোতি মনহোত্রার সঙ্গে এবং তার সঙ্গে তিনি লাহোরে একসঙ্গে ১০ দিন কাটিয়েছিলেন, যেখানে তাঁরা ISI-এর উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই তদন্তকারীরা তৎপর হয়ে ওঠে এবং এখন তারা মনে করছে, পাকিস্তানের এই প্রাক্তন পুলিশ কর্মী ভারতে একটি বৃহৎ গুপ্তচর চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, নাসিরের ইউটিউব চ্যানেল শুধু ভ্রমণ ব্লগ বা পডকাস্টের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং সেটিকে ব্যবহার করে গোটা ভারতের অভ্যন্তরীণ খবর, সামরিক ঘাঁটির চিত্র, সেনা চলাচল, এবং স্থানীয় প্রশাসনিক বিষয় সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলি পাকিস্তানে পাচার করা হতো। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, নাসির ঢিল্লো একাধিক ভারতীয় নাগরিককে টার্গেট করে তাদের ‘মৌলিক হিন্দু-মুসলিম ঐক্য’, ‘বন্ধুতা’ ও ‘মানবতা’-র নামে প্রভাবিত করতেন এবং ধীরে ধীরে তাদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে নিতেন। এই মামলায় পাঞ্জাব পুলিশ ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করেছে এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও তাতে যুক্ত হয়েছে।
ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এই ধরনের অনলাইন প্রভাবশালী মানুষদের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার এবং ISI ভারতীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সামরিক এবং প্রশাসনিক তথ্য পাচারের উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় কয়েকজন প্রভাবশালী ইউটিউবার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে নজরে রাখা হয়েছে। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা অফিসার বলেছেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে একটি ভিডিওর আড়ালেই তথ্য পাচার, মগজ ধোলাই, এবং বিশ্বাসভঙ্গ খুব সহজে ঘটছে। আমাদের এখন সেই আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে লড়তে হচ্ছে যেখানে অস্ত্রের চেয়ে মোবাইল আর ইন্টারনেটই বড় হুমকি।” একইসঙ্গে, এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যেও যথেষ্ট আতঙ্ক এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পাঞ্জাবের এক নাগরিক হরদীপ সিং জানান, “আমরা যশবীরকে একজন সাধারণ ইউটিউবার বলেই জানতাম, ওর ভিডিও আমরা দেখি, শেয়ার করি, ভাবতাম দেশ নিয়ে কিছু ভালো বলছে, অথচ আজ জানতে পারছি সে-ই দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে!”
অন্যদিকে, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত হওয়া বা ‘অনলাইন বন্ধু’ হওয়ার নাম করে বহু ভারতীয় আজ এমন ফাঁদে পা দিচ্ছেন যেখান থেকে তারা নিজেরাও বুঝতে পারছেন না কখন তারা অপরাধ জগতে ঢুকে পড়েছেন। নেটিজেনদের প্রতি এই ঘটনার পর আরও সতর্কতা অবলম্বনের বার্তা দিচ্ছে পুলিশ এবং প্রশাসন। ইন্টারনেটে কার সঙ্গে আপনি কথা বলছেন, কাকে আপনি ভিডিও পাঠাচ্ছেন, আপনার পরিচয় বা দেশ সম্পর্কে কী কী বলছেন—সেইসব বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট যে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও বেশি ডিজিটালি সুরক্ষিত করতে হবে, এবং এমন ‘সোশ্যাল মিডিয়া গুপ্তচর’-দের চিহ্নিত করতে হবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে, নইলে অজান্তেই দেশের গোপন খবর বাইরের শত্রুর হাতে পৌঁছে যেতে পারে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক প্রাক্তন RAW আধিকারিক বলেন, “এটা আর আগেকার দিনের গুপ্তচর যুদ্ধ নয়, এখন যুদ্ধ হচ্ছে তথ্য নিয়ে, বিশ্বাস নিয়ে। এখন যুদ্ধে বন্দুক নয়, মোবাইল, ক্যামেরা, এবং ইউটিউব গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।” ফলে একদিকে সাধারণ মানুষকে হতে হবে আরও সচেতন, অন্যদিকে সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও চাই আরও দক্ষতা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সমাজমাধ্যমে নজরদারি। বর্তমানে যশবীর সিং এবং তাঁর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার ধারায় মামলা রুজু হয়েছে, এবং খুব শিগগিরই আদালতে তোলা হবে। এরইমধ্যে নাসির ঢিল্লোর ইউটিউব চ্যানেলের সমস্ত ভিডিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তাঁর সঙ্গে জড়িত ভারতীয় ইউটিউবারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার অভ্যাস, বিশ্বাস করার মানসিকতা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে নতুনভাবে।