Thursday, July 31, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসবেকার পাবেন ১৫০০ টাকা মাসিক ভাতা

বেকার পাবেন ১৫০০ টাকা মাসিক ভাতা

The unemployed will receive a monthly allowance of 1,500 taka.:-পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প মানেই এক বিশেষ পরিচিতি—সরকারি ভাষায় একে বলা হয় “মানুষের পাশে থাকা”, আর সেই পথেই এবার আরও একধাপ এগিয়ে গেল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথীর পর এবার বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে ‘যুবশ্রী’ প্রকল্প, যার মাধ্যমে ঘরে বসেই রাজ্যের বেকাররা প্রতিমাসে ১৫০০ টাকা করে ভাতা পাবেন—তা-ও সরাসরি নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এই ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে আনন্দে ফেটে পড়েছেন হাজার হাজার বেকার তরুণ-তরুণীরা, যারা এতদিন চাকরির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন অথচ হাতে ছিল না কোনো নিশ্চিত রোজগার বা অর্থসাহায্য। প্রকল্পটি মূলত রাজ্যের কর্মপ্রত্যাশী এবং শিক্ষিত বেকার যুব সমাজকে কিছুটা হলেও আর্থিক স্বস্তি দেওয়ার জন্য চালু করা হয়েছে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পে আবেদন করতে গেলে সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে অষ্টম শ্রেণি পাশ, বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৫ বছর এবং আবশ্যিকভাবে থাকতে হবে এক্সচেঞ্জ কার্ড (Employment Exchange Registration Card)

ac1b9190b763091e43566d96da55458e 682a9da703ba7

পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হলেই এই সুযোগ পাওয়া যাবে এবং আবেদন করতে হবে Employment Bank-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (employmentbankwb.gov.in) গিয়ে। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল, ফলে দূরদূরান্তের বাসিন্দারাও ঘরে বসে নিজের মোবাইল বা সাইবার ক্যাফে থেকে আবেদন করতে পারবেন। ইতিমধ্যেই বহু বেকার যুবক-যুবতী এই ভাতার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভাতাও পেতে শুরু করেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের বাসিন্দা শ্রেয়া মণ্ডল, যিনি এক বছর ধরে চাকরি খুঁজছিলেন, আমাদের ‘খবর বাংলা’কে বলেন, “আমি এমএ পাশ করেছি, কিন্তু একটা চাকরির জন্য দোরে দোরে ঘুরেও কিছু হচ্ছিল না। হঠাৎ জানতে পারি যুবশ্রী প্রকল্পের কথা। এক্সচেঞ্জে রেজিস্টার ছিল, সঙ্গে সঙ্গে আবেদন করি। এখন মাসে ১৫০০ টাকা পেলেও অন্তত নিজের পড়াশোনার খরচ, বা কোচিংয়ের টাকা সামলে নিতে পারছি।

” শুধু শ্রেয়া নন, বীরভূম, মালদা, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দার্জিলিং, কোচবিহার—সর্বত্র থেকেই আবেদন জমা পড়ছে প্রচুর। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার একটি শক্ত বার্তা দিতে চেয়েছে যে বেকার মানেই অবজ্ঞার পাত্র নয়, বরং সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাইছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে সরকার যেভাবে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে, তা নজরকাড়া। যুবশ্রী প্রকল্প চালুর মাধ্যমে আগামী দিনে রাজ্যের কর্মপ্রত্যাশী শ্রেণির মধ্যে মানসিক স্থিতি বাড়বে এবং আত্মবিশ্বাসও আসবে। যদিও, বিরোধীরা বলছেন, “এটা নির্বাচনী গিমিক। সরকার চাকরি দিতে পারছে না বলেই টাকা বিলি করছে।” বিজেপির মুখপাত্র এক বক্তব্যে জানান, “চাকরির জায়গায় ভাতা দিয়ে সরকার দায় এড়াতে চাইছে। এটা স্থায়ী সমাধান নয়।” তবে সাধারণ মানুষের অভিমত সম্পূর্ণ আলাদা। খড়গপুরের এক বেকার যুবক বলেন, “চাকরি তো অনেকেই পায় না। কেউ দেওয়ারও নেই। তাই অন্তত এই ভাতাটা হাতে পেলে কিছুটা হলেও সাহস ফিরে পাই।” উল্লেখযোগ্যভাবে এই ভাতার টাকা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে, যার ফলে কোনো দালালি বা দুর্নীতির সুযোগ নেই। একাধিক সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে আবেদনের জন্য মোবাইল নম্বর, আধার কার্ড, পাসবই, এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। আবেদনকারীকে প্রত্যেক মাসে প্রমাণ দিতে হবে যে তিনি কর্মসংস্থানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অথবা কোনও ধরনের স্কিল ট্রেনিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। এইভাবে সরকার শুধু ভাতা দিচ্ছে না, বরং উৎসাহ দিচ্ছে যাতে বেকাররা ভবিষ্যতে আরও প্রস্তুত হন। অর্থনীতিবিদ সৌরভ মুখার্জি বলছেন,

mamata banerjee 293036849 16x9 1

“এটি একটি ‘ট্রানজিশনাল ইনকাম’—মানে যখন চাকরি নেই, তখন একটা সাময়িক সহায়তা। উন্নত দেশেও এরকম ‘আনএমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট’ দেওয়া হয়।” আর ঠিক সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই এগোচ্ছে বাংলার যুবশ্রী প্রকল্প। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই প্রকল্প শুধু পুরুষ বা উচ্চশিক্ষিতদের জন্য নয়। অষ্টম শ্রেণি পাশ হলেই এই ভাতা পাওয়া সম্ভব, ফলে অনেক গ্রামের বা শহরতলির যুবতীরাও যাঁরা হয়তো কাজ করতে পারেন না বা কোথাও পৌঁছাতে পারেন না, তাঁরাও এই ভাতার মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারবেন। বর্ধমানের এক যুবতী রুবি সেখ বলেন, “আমার বাড়িতে বাবা অসুস্থ। আমি কলেজ শেষ করেছি। চাকরি পাচ্ছি না। কিন্তু এই ভাতাটা পেয়ে অন্তত বাবার ওষুধ কিনতে পারি।” এরকম হাজার হাজার গল্প উঠে আসছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই ভাতার সংজ্ঞা শুধু টাকা নয়, বরং জীবনের ওপর নতুন বিশ্বাস। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের আওতা আরও বাড়ানো হবে কিনা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনার শুরু হয়েছে। অনেকেই চাচ্ছেন, ভাতা বাড়িয়ে অন্তত ২০০০ বা ২৫০০ টাকা করা হোক, এবং আরও সহজ করা হোক আবেদন প্রক্রিয়া। তবে আপাতত রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের কাছে যুবশ্রী যেন এক আশার আলো। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এই প্রথম সরকারিভাবে এত বড় পরিসরে বেকারদের জন্য মাসিক অর্থসাহায্যের প্রকল্প শুরু হয়েছে, যা সত্যিই এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আর এই প্রকল্প প্রমাণ করছে, শুধু উন্নয়ন নয়, সরকার যদি চায় তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব—বেকারদের হতাশা থেকে বের করে এনে, তাঁদের জীবনে কিছুটা স্বস্তি দেওয়াও সম্ভব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments