The thought of Russia and Ukraine came to mind : বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল আবহে হঠাৎ করেই এক ঝলক আশার আলো দেখালেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই মন্তব্য আসে ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কো সফরে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষ করেন। ট্রাম্পের বক্তব্য, “আজ ছিল আলোচনার জন্য একটি ভালো দিন।” পাশাপাশি, ক্রেমলিনের তরফ থেকেও বৈঠকটিকে ‘গঠনমূলক’ আখ্যা দিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। যদিও এই আলোচনায় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না, তবুও আলোচনার উষ্ণতা যেন নতুন করে আশার বীজ বুনেছে বিশ্ববাসীর মনে।

এই বৈঠকের প্রসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উষাকভ বলেন, “বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সরাসরি আলোচনা আবার শুরু করার সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে।” অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি ভিডিও বার্তায় জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি গ্রহণের আগে রাশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বজায় রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, “পূর্ণ এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি যদি রক্ষা করা হয়, তবেই কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যে ভূখণ্ড সংক্রান্ত ইস্যুতে আলোচনা সম্ভব।” তবে এই ইঙ্গিতপূর্ণ অবস্থানের মাঝেই বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে, কারণ ট্রাম্প প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি ক্রিমিয়ায় রুশ নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করেন। স্মরণযোগ্য, ২০১৪ সালে রাশিয়া জোরপূর্বক ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয়, যার বৈধতা কখনোই আন্তর্জাতিক মহল স্বীকৃতি দেয়নি। ট্রাম্পের এই মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই ইউক্রেনীয় নেতৃত্বের কড়া প্রতিক্রিয়া টেনেছে। জেলেনস্কি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “ক্রিমিয়া ইউক্রেনেরই অংশ এবং এটি কোনো আলোচনার বিষয় হতে পারে না।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা এবং ট্রাম্পের মন্তব্য বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড় মোড় আনতে পারে। যদি রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তি বাস্তবায়িত হয়, তবে দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটবে, ফলে ইউরোপের অর্থনৈতিক চাপও কিছুটা লাঘব হবে। বিশ্ববাজার, বিশেষ করে খাদ্যশস্য ও জ্বালানির দামে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে। অন্যদিকে, রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। তবে অনেকে সতর্ক করে বলছেন, যেহেতু ইউক্রেন আলোচনায় সরাসরি অংশ নেয়নি, তাই এই ধরনের চুক্তির বাস্তবায়ন এখনও অনিশ্চিত।
স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে এই সংবাদের প্রভাবও ব্যাপক। ইউক্রেনের এক নাগরিক আলেক্সেই কুভালেনকো বলেন, “যুদ্ধ আমাদের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। যদি সত্যিই শান্তির সুযোগ আসে, তাহলে তা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হবে।” অপরদিকে রাশিয়ার এক প্রবীণ নাগরিক ইভান বোরিসভ বলেন, “আমরা চাই না আমাদের সন্তানরা আরও যুদ্ধ দেখুক। শান্তির জন্য যেকোনো চেষ্টা আমরা সমর্থন করি।”
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য একদিকে যেমন শান্তির সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আবার নির্বাচনী রাজনীতির অংশ হিসেবেও একে দেখা হচ্ছে। আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ফের লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি স্থাপনের ইঙ্গিত তাঁর ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে পারে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের মধ্যে একটা সন্দেহ রয়ে গেছে – রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে। কারণ, অতীতে বহুবার যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি ভেঙে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে মস্কো।
বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্রনেতারাও এই আলোচনাকে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেফ বোरेल জানিয়েছেন, “শান্তি অবশ্যই কাম্য, তবে তা যেন ন্যায়ের ভিত্তিতে হয়, অন্যায়ের ভিত্তিতে নয়।” ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গও মন্তব্য করেছেন, “শান্তিচুক্তি ভালো, তবে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর কোনো আপোস করা যাবে না।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যে অন্ধকার সুড়ঙ্গে বিশ্ব এতদিন বন্দি ছিল, সেখানে যেন ট্রাম্পের মন্তব্য একটি ক্ষীণ আলোর রেখা দেখিয়েছে। তবে সেই আলো কতটা বাস্তবিক, আর কতটা রাজনৈতিক প্রচার, তা সময়ই বলবে। আপাতত বিশ্ববাসী অপেক্ষায় – শান্তির দিগন্ত কি সত্যিই উজ্জ্বল হবে, নাকি আবারও অন্ধকার ঘনাবে।