The teacher married the first year student in the college হরিণঘাটার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটল এক অবাক করা ঘটনা। ক্লাসরুমের মধ্যেই প্রথম বর্ষের ছাত্রকে বিয়ে করলেন এক বিভাগীয় প্রধান শিক্ষিকা! সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ঐ শিক্ষিকা এবং ছাত্র হিন্দু মতে একে অপরকে মালা পরাচ্ছেন, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল প্যাডে স্বামী-স্ত্রীর স্বীকৃতিও লিখিতভাবে দিয়েছেন। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক, যার ফলে শিক্ষিকাকে আপাতত ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং ছাত্রটিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে, যখন এক ছাত্র এবং শিক্ষিকার বিয়ের ছবি হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে অনেকেই মনে করেছিলেন এটি হয়তো কোনো মজা কিংবা নাটকের দৃশ্য। কিন্তু ধীরে ধীরে জানা যায়, ঘটনাটি সত্যিই ঘটেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। শিক্ষিকা এবং ছাত্র দুজনেই নিজেদের স্বামী-স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং ছাত্রকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, “এই ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং নীতির পরিপন্থী। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং তদন্ত শেষ হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। একাংশ বলছে, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যদি স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চান, তবে সেটিকে অন্যায় হিসেবে দেখা উচিত নয়। অন্যদিকে, কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা একেবারেই অনুচিত এবং এটি শিক্ষাগত পরিবেশের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের কথায়, “শিক্ষক হলেন আমাদের গাইড, আমাদের পথপ্রদর্শক। শিক্ষক যদি ছাত্রের সঙ্গে বিয়ে করেন, তাহলে তা অবশ্যই অস্বাভাবিক ব্যাপার।” অন্যদিকে, এক শিক্ষকের মত, “এই ঘটনাটি যদি পারস্পরিক সম্মতিতে হয়ে থাকে, তবে আমাদের তা নিয়ে বড় কিছু বলার নেই। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম ও নীতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।”এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে নানান বিতর্ক। কেউ বলছেন, “প্রেমে পড়ার কোনো বাধা নেই, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ঠিক রাখাও জরুরি।” আবার কেউ কেউ এই ঘটনাকে ‘ভবিষ্যতে আরও গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
টুইটারে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “একজন শিক্ষকের কাছে আমরা নৈতিক শিক্ষার আশা করি। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য ক্ষতিকর।” অন্যদিকে, আরেকজন লিখেছেন, “যদি ভালোবাসা সত্যি হয়, তাহলে বিয়েতে দোষ কোথায়?”ভারতের আইন অনুযায়ী, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি আইনত তার পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিজস্ব নিয়ম এবং নীতিমালা রয়েছে, যেখানে শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ককে নিরুৎসাহিত করা হয়, কারণ এটি শিক্ষার পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি চাকরির শর্তাবলীর মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে এই ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলার পরিপন্থী, তবে তারা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে যেহেতু ঘটনাটি এখনো তদন্তাধীন, তাই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি।এই ঘটনার পর থেকে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্য, নাকি এখানে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত? বিশেষ করে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা দরকার?

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষকের কাজ হলো ছাত্রদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা, তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। শিক্ষক যদি ছাত্রের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তবে সেটা শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি, এটি অন্যান্য ছাত্রদের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।হরিণঘাটার এই ঘটনা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী এবং বিতর্কিত। একজন শিক্ষিকার ছাত্রকে বিয়ে করার ঘটনা সাধারণত দেখা যায় না, বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটলে তা স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত রিপোর্ট বের না হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা কঠিন। তবে একদিকে যদি ভালোবাসাকে সম্মান জানানো হয়, অন্যদিকে শিক্ষার পরিবেশকে ঠিক রাখার বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার। এই ঘটনা আমাদের সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ, শিক্ষাক্ষেত্রে সম্পর্কের সীমারেখা এবং প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।