Sunday, April 13, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসপুলিশ থেকে 'ভোলে বাবা' হয়ে ওঠার কাহিনী

পুলিশ থেকে ‘ভোলে বাবা’ হয়ে ওঠার কাহিনী

The story of the police being ‘vole baba’: ইভটিজিং-এর অপরাধে চাকরি হারিয়ে, জেল খেটে, অবশেষে ধর্মগুরু হয়ে ওঠার গল্প যেন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো। কিন্তু বাস্তব জীবনেও এমন কাহিনী ঘটে যায়, আর সেটাই প্রমাণ করেছেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত নারায়ণ সাকার হরি, যার আসল নাম সুরজ পাল জাটভ। উত্তর প্রদেশের হাথরাস জেলার সিকান্দ্রারাউ হাসপাতালের দৃশ্য ছিল মঙ্গলবার গভীর রাতে হাড় হিম করা। সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত পায়ে বাস থেকে নেমে আসা, জুতো-চপ্পলের স্তূপ, টিভি সাংবাদিকদের সরাসরি রিপোর্টিং আর এসবের মধ্যেই হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের খুঁজতে থাকা মানুষের ভিড়— সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি।

Untitled design 2024 07 04T131956.985

এদিন দিনের বেলা, এক ধর্মীয় জমায়েতে পদপিষ্ট হয়ে ১২২ জনের মৃত্যু হয়। এই জমায়েতের আয়োজক ছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত সেই স্বঘোষিত ধর্ম প্রচারক। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে ওই ধর্মীয় জমায়েতে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল ৮০ হাজার মানুষের জন্য। তবে বাস্তবে তার কয়েকগুণ বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সেখানে।

নারায়ণ সাকার হরির উত্থানের গল্পটি শুরু হয় প্রায় ২৮ বছর আগে। কাসগঞ্জ জেলার বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরজ পাল জাটভ, উত্তর প্রদেশ পুলিশের একজন কনস্টেবল ছিলেন। চাকরির জীবনের গোড়ার দিকে পুলিশের স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন তিনি। প্রায় ১৮টি থানা এলাকায় কাজ করেছেন তিনি। তবে প্রায় ২৮ বছর আগে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে প্রথমে সাসপেন্ড, পরে বরখাস্ত হন তিনি। ইটাওয়া জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার জানিয়েছেন, ইভটিজিংয়ের ঘটনায় সুরজ পাল জাটভ দীর্ঘ সময় জেলে ছিলেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে ‘বাবা’র রূপ ধরেন তিনি।

বরখাস্ত হওয়ার পরে সুরজপাল জাটভ আদালতে যান নিজের চাকরি ফিরে পেতে। আদালত চাকরি ফিরিয়েও দেয়, কিন্তু ২০০২ সালে আগ্রা জেলায় কর্মরত অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসর নেন তিনি। এরপর ফিরে যান নিজের গ্রামের বাড়িতে। কিছুদিন পরে তিনি দাবি করতে থাকেন যে সরাসরি ঈশ্বরের সঙ্গে কথা হয় তার। এই সময় থেকেই নিজেকে ‘ভোলে বাবা’ হিসাবে তুলে ধরতে থাকেন মি. জাটভ।

‘ভোলে বাবা’ পরিচয়ে তিনি ধর্ম প্রচারের কাজ শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বহু মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। তবে তার অতীতের এই অন্ধকার অধ্যায়টি অনেকের কাছে অজানা ছিল না। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মি. জাটভের আশ্রমে প্রায় সময়ই বিভিন্ন রকম অবৈধ কার্যকলাপ চলত।

তবে এই ঘটনা স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে। একদিকে, মি. জাটভের এই উত্থান সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের অপব্যবহারের একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, ধর্মীয় জমায়েতে এমন বিপর্যয় ঘটায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিফলন দেখা গেছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, “আমরা কখনও ভাবিনি যে একজন ইভটিজিং-এর অপরাধী ধর্মগুরু হয়ে উঠতে পারে। এই ঘটনার পর থেকে আমরা ভীষণ আতঙ্কিত।”

স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই ঘটনার তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করছি। এমন ধর্মীয় জমায়েতের জন্য যথাযথ অনুমতি এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।”

এই ঘটনার পর থেকে উত্তর প্রদেশ পুলিশ মি. জাটভের বিভিন্ন আশ্রমে তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত তার নাম FIR-এ উল্লেখ করা হয়নি। এই পরিস্থিতি আরও গভীর তদন্তের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে এবং প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানায়।

এই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হতে পারে ধর্মীয় জমায়েতের ওপর প্রশাসনিক নজরদারির কড়াকড়ি বৃদ্ধি। স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের মধ্যে বিশ্বাসের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে যা মেরামত করতে হবে দ্রুত।

আরও পড়ুনঃ বেহাল রাস্তা, নামখানায় ধানের চারা ও মাছ ধরার জাল ফেলে বিক্ষোভ

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments