The river embankment at Mandirghat has collapsed, causing concern among the administration.:-কাকদ্বীপের রামগোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মন্দিরঘাট এলাকায় নদী বাঁধের ধসের ঘটনা প্রশাসন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর চিন্তার সৃষ্টি করেছে। নদী বাঁধের ধস প্রাথমিকভাবে ছোট হলেও দিন দিন এটি ভয়াবহ আকার নিতে শুরু করেছে, যা এলাকার মানুষের জীবনে এক বড় ধরনের বিপদের মুখে ফেলেছে। গত সোমবার ভোরে, মন্দিরঘাট এলাকার নদী বাঁধের প্রায় ১৫০ ফুট এলাকা নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। এর পরেই প্রশাসন তৎপর হয়ে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ শুরু করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাঁধের স্থায়ী মেরামত সম্ভব হয়নি, এবং এলাকার বাসিন্দাদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।গ্রামবাসীদের মতে, এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে নদীর স্রোতের বৃদ্ধি এবং বাঁধের অবস্থা খাড়া হওয়া। স্থানীয় মানুষদের ধারণা, স্রোত বৃদ্ধির ফলে নদী বাঁধের শক্তি ভেঙে পড়ছে, এবং বাঁধের উপরের অংশে নতুন নতুন ফাটল দেখা দিচ্ছে। এছাড়া, নদী বাঁধের যে অংশটি ভেঙেছে, সেখানে ইতিমধ্যেই নদীর প্রবাহ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। গ্রামবাসীরা বলেন, “আমরা জানি, এখন যেভাবে নদীর পানি বাড়ছে, তাতে আমাদের বাড়িঘর ভাঙার ঝুঁকি রয়েছে। প্রশাসন যতই মেরামত করুক, যদি স্থায়ী সমাধান না পাওয়া যায়, তাহলে আমরা জানি না আগামী দিনে কী হবে।”

অন্যদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দ্রুত মেরামত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনও এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তৎপর হতে পারে, এমন কোনও সুস্পষ্ট পরিকল্পনার কথা বলেনি। এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা এভাবে মেরামত করে পরিস্থিতি সামলাতে পারছি, কিন্তু স্থায়ী সমাধান এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আগামী দিনে আরও শক্তিশালী বাঁধ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদেরও প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করছি।”এই এলাকার অনেক বাসিন্দাই বিশ্বাস করেন যে, যেহেতু নদী বাঁধের সঠিক মেরামত হচ্ছে না, তা স্রোতের দাপটে আবার ধসে পড়বে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “প্রশাসন বাঁধ মেরামত করছে, কিন্তু যারা নিয়মিত নদী তীরবর্তী এলাকার কাজ করেন, তারা জানেন যে স্রোত বাড়লেই বাঁধের অবস্থা আরও খারাপ হবে। এটা যদি না ভাবা হয়, তবে আমরা আসলে ঝুঁকির মধ্যে আছি।”কাকদ্বীপে মন্দিরঘাট এলাকার নদী বাঁধের এই অবস্থা একটি বড় সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে প্রশাসন জরুরি মেরামত কাজ করছে, কিন্তু অন্যদিকে, সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নদী বাঁধের ধসের কারণে বিভিন্ন ঘরবাড়ি এবং কৃষিজমির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। যদি নদী আরও তীব্র হয়ে ওঠে, তাহলে এলাকার শতাধিক পরিবার তাদের জীবিকা হারাতে পারে, যা একেবারে তাদের অস্তিত্বের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। এমনকি, অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তবে পরবর্তী সময়টাতে পুরো এলাকার বিস্তৃত ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন বলছে যে, নদী বাঁধের ওপর থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাঁধের নির্মাণে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এসব তাত্ত্বিক পদক্ষেপের বদলে মাঠে নেমে আরও কার্যকর সমাধান পাওয়া গেলে তাদের শান্তি আসবে। কাকদ্বীপের এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, “আমরা চাই, স্থায়ীভাবে বাঁধের দুর্বল অংশগুলো মেরামত করা হোক, যাতে আর কোনো ধরনের ধসের ঘটনা ঘটতে না পারে। এই সমস্যা শুধুমাত্র প্রশাসনের নয়, আমাদের সবার সমস্যা। আমাদের এখানে যদি কোনো বড় বিপদ আসে, তাহলে পুরো এলাকার জন্য তা চরম বিপদ হয়ে উঠবে।”এদিকে, মন্দিরঘাটের নদী বাঁধের ধস নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশবিদরা এবং নদী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি একটি বড় সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে। তাঁরা মনে করছেন যে, যদি নদী বাঁধের যথাযথ মেরামত না করা হয় এবং স্থায়ী সমাধান না আসে, তাহলে এলাকাটি পরিবেশগত সংকটের মুখে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন,

“এই ধরনের বাঁধ ভেঙে পড়া শুধু মানুষের জীবনের ঝুঁকি নয়, বরং এটি পুরো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। নদীর স্রোত বাড়লে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ধ্বংস হতে পারে, যা সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির ফলে আরও খারাপ হতে পারে।”মন্দিরঘাটের নদী বাঁধে ধসের ঘটনা প্রশাসন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে—কিভাবে এই সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান করা হবে? প্রশাসন যতই মেরামত কাজ চালিয়ে যাক, ততই যেন আরও বড় বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে এই বাঁধের দুর্বল অংশগুলি। একমাত্র যদি স্থায়ী মেরামতের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, তাহলেই কাকদ্বীপের মানুষের জন্য এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে।