The people of Bankura Amdanga are blessed with fresh water বাঁকুড়া জেলার আমডাঙ্গা গ্রামের মানুষদের জীবনযাত্রা নদীর ধারের চুঁয়া জলের উপর নির্ভরশীল। এই চুঁয়া জল সংগ্রহের প্রক্রিয়ায়, নদীর ধারে বালি বা মাটিতে গর্ত করে সেখান থেকে জল তোলা হয়। এই জল তাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের প্রধান উৎস। তবে, এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ এবং শারীরিকভাবে কষ্টকর। গ্রামের বৃদ্ধা সরস্বতী দেবী বলেন, “আমাদের জীবনে এই চুঁয়া জলই ভরসা। কিন্তু প্রতিদিন এইভাবে জল তোলা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর।”
নদীর জল দূষিত হওয়ায় সরাসরি পান করা যায় না। গন্ধেশ্বরী নদী, যা বাঁকুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে, সেখানে শহরের নোংরা জল এসে মিশে নদীকে দূষিত করেছে। নদীর পাড়ে আবর্জনা ফেলা হয়, যা নদীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নাগরিক সমাজের একাংশ নদী বাঁচানোর দাবিতে আন্দোলন করলেও নদীর অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। নদীর এই দূষণ গ্রামের মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। গ্রামের শিক্ষক রমেশ বাবু বলেন, “নদীর জল দূষিত হওয়ায় আমরা চুঁয়া জলের উপর নির্ভর করি। কিন্তু এই পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যসম্মত নয়।”
চুঁয়া জল সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং শারীরিকভাবে কষ্টকর। বিশেষ করে মহিলারা এবং বৃদ্ধরা এই কাজে বেশি যুক্ত থাকেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদ্ধতিতে জল সংগ্রহের ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী মীনা দেবী বলেন, “চুঁয়া জল সংগ্রহের সময় অনেকেই কোমর এবং পিঠের সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া, এই জল সবসময় নিরাপদ নয়, যা বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।”
এই পরিস্থিতিতে, গ্রামের মানুষদের জন্য নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি উদ্যোগে টিউবওয়েল বা পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা যেতে পারে। এতে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। গ্রামের প্রধান মধুসূদন বাবু বলেন, “আমরা সরকারের কাছে নিরাপদ পানীয় জলের জন্য আবেদন করেছি। আশা করি, আমাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।”
নদীর দূষণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নদীর পাড়ে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং নদীর জল পরিশুদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। নদীকে বাঁচাতে পারলে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে। পরিবেশবিদ সুমন চক্রবর্তী বলেন, “নদী আমাদের জীবনের অংশ। নদীকে বাঁচাতে পারলেই আমরা সুস্থ জীবনযাপন করতে পারব।”
অন্যদিকে, পূর্ব মেদিনীপুরের চাউলখোলা গ্রামের দাস পরিবারের দুর্গাপুজো তাদের ঐতিহ্যের প্রতিফলন। প্রায় দেড়শ বছর আগে খড়ের আটচালার মন্দির তৈরি করে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল। তৎকালীন এই পরিবারের পূর্বপুরুষ ভগবান চন্দ্র দাস জঙ্গল পরিষ্কার করে বসবাস শুরু করেছিলেন। তার ছেলে কুঞ্জবিহারী দাস ছিলেন মা দুর্গার ভক্ত। তিনি প্রথম পুজোর শুরু করেছিলেন, তখন উপকূলবর্তী প্রায় কুড়িটি গ্রাম জুড়ে কোন পুজো হতো না। গ্রামবাসীদের সেই ইচ্ছে পূরণের জন্য আটচালায় শুরু হয় মা দুর্গার পুজো। পুরনো রীতিনীতি মেনে আজও পুজো হয়ে আসছে মহাসমারোহে।
বর্তমানে দাস পরিবারের প্রায় আড়াইশো জন সদস্য সদস্যা, সবাই মিলেমিশে আয়োজন করেন পুজো। পুজোর কটা দিন নাচ গান নাটক সহ নানা অনুষ্ঠানে মেতে থাকেন বাড়ির সকলে। আশেপাশের মানুষের ভিড়ে এই পুজো এখন সর্বজনীন। দেবীর কাছে মানত করেন অনেকেই। দীঘা মন্দারমনি যাওয়া আসার পথে পর্যটকেরা ও দর্শন করেন এই দেবী প্রতিমা। আগে দশমীর দিন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে মায়ের মূর্তি সমুদ্রে বিসর্জন দেওয়া হতো। এখন দিন বদলেছে, চাউলখোলা থেকে পিছাবনী পর্যন্ত সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে পারিবারিক দিঘিতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
এই দুটি ঘটনা আমাদের গ্রামীণ বাংলার জীবনের দুটি দিক তুলে ধরে। একদিকে, আমডাঙ্গা গ্রামের মানুষদের চুঁয়া জলের উপর নির্ভরশীলতা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রামের প্রতিফলন। অন্যদিকে, চাউলখোলা গ্রামের দাস পরিবারের দুর্গাপুজো তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। এই দুটি দিকই আমাদের গ্রামীণ সমাজের বাস্তবতা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।
আমরা আশা করি, সরকারের উদ্যোগে আমডাঙ্গা গ্রামের মানুষদের জন্য নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা হবে এবং চাউলখোলা গ্রামের দাস পরিবারের পুজো তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখে আরও মহাসমারোহে পালিত হবে। গ্রামীণ বাংলার এই ধরনের গল্প আমাদের সমাজের বাস্তবতা ও সংস্কৃতির